গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে খুনীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছিলেন। তার খুনের বিচার হয়নি বাংলাদেশে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থেকেও স্বামী হত্যাকাণ্ডের বিচার করেননি। এমনকি তিনি খুনীদের পুনর্বাসন করেছেন, সংসদে নিয়ে এসেছেন।
আজ বুধবার রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অডিটোরিয়ামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আয়োজিত জাতির পিতার জীবন, কর্ম ও আদর্শ নিয়ে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া আজ এতিমের টাকা অত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলে রয়েছেন। ২১শে আগস্টের খুনের দায়ে, দুর্নীতির রায়ে সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমান বিদেশে আশ্রয় নিয়েছেন, বিদেশে টাকা পাচার করেছেন, মনোনয়ন বাণিজ্য করে টাকা আয় করেছেন। অপরদিকে বঙ্গবন্ধুর রক্ত ও আদর্শের উত্তরসূরি শেখ হাসিনা সকল দেশি-বিদেশি চাপ ঝুঁকি ও ভয় উপেক্ষা করে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধের বিচার করে এবং বিচারের রায় কার্যকর করে বাঙালি জাতিকে ১৯৭১ সালের কলঙ্কের দায় থেকে মুক্ত করেছেন। খুনীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করে প্রমাণ করেছেন বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে অপরাধ করে অপরাধীর দায়মুক্তি চলবে না।
তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী ও প্রতিক্রিয়াশীলরা মিলে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করেছেন। আর বঙ্গবন্ধুর খুনীদেরকে অগণতান্ত্রিক সরকারগুলো পুনর্বাসন করেছে। জিয়াউর রহমান নিজে বঙ্গবন্ধু হত্যার উপকারভোগী এবং মদদদাতা।
সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনীদেরকে দেশের বাইরে পুনর্বাসন করেছেন। আত্মস্বীকৃত খুনীদের বিচার না করে তাদেরকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সকে সংবিধানের অংশে পরিণত করেছেন। এরপর এরশাদ বঙ্গবন্ধুর খুনীদের সরাসরি রাজনীতিতে পুনর্বাসন ও প্রটেকশন দিয়েছেন। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদেরকে বিভিন্ন মিশনে চাকরী ও পদোন্নতি দিয়েছেন। জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও খালেদা জিয়া একইরূপে কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনীদেরকে সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মীদেরকে ধ্বংস করতে সহায়তা করেছেন।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন রাজউকের সদস্য (পরিকল্পনা) সাঈদ নূর আলম, মূখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার।
প্রধান অতিথি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশকে, বাঙালি সত্ত্বাকে, একাত্তরের চেতনাকে ধ্বংস করার জন্য আগস্ট মাসেই বড় অভিযান চালিয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী, প্রতিক্রিয়াশীল দেশীয় ও বিদেশী চক্র। ৭৫ এর ১৫ই আগস্টের ঘটনা শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ১৯৭১ সালে যারা পরাজিত হয়েছিলো, তারা পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে এবং তার সহযোদ্ধাদের সাথে নিষ্ঠুর, নৃশংস ও বর্বরভাবে হত্যা করে। এরপর ৩ নভেম্বর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। তারপরও তারা শঙ্কামুক্ত হতে পারেনি বলে আবার ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট আঘাত হানে শেখ হাসিনাসহ গোটা আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য। ৭১, ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট ও ৩ নভেম্বর, ২০০৪ এর ২১শে আগস্ট এর আঘাতকারীরা এবং অন্তত ১৯ বার শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টাকারীরা একই সূত্রে গাথা। ১৭৫৭ সালে এসেছিলো মীর জাফর নামে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশী ঐ জাতীয় বিশ্বাসঘাতকরা পশ্চিম পাকিস্তানীদের দোসর হিসেবে, ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট মোস্তাক-জিয়া নামে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট এসেছে খালেদা জিয়া, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, তারেক রহমানের নামে।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, মন্ত্রী বলেন, “আওয়ামী লীগ না করলেও যে যাই করুন না কেন মনে রাখবেন, আমারে অস্তিত্বের উৎস মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ। যেখানে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য থাকবে না, যেখানে সাম্প্রদায়িকতা থাকবে না। এই বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে আমরা পৌঁছেছি। এটাকে ধরে রাখতে সততার সঙ্গে স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং খুনী ও প্রতিক্রিয়াশীলদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে”।
রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে কখনো বিচ্যুত হবেন না। আমি চাই আরো স্বচ্ছতা, জবাবদিহি আরো দায়িত্বশীলতার সঙ্গে আপনারা কাজ করবেন। মনে রাখবেন, সাধারণ মানুষের করের টাকায় আপনারে বেতন দেওয়া হয়। একজন মানুষ যেন সেবা নিতে এসে রাজউক থেকে কষ্ট নিয়ে বেরিয়ে না যায়।