প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জিয়াউর রহমান, এইচ এম এরশাদ ও খালেদা জিয়া দেশের উন্নয়নের ব্যাপারে আন্তরিক ছিলেন না। কারণ তাদের কারো জন্মই এ দেশের মাটিতে হয়নি। ইতালি সফররত প্রধানমন্ত্রী গতকাল বুধবার রোমের পার্কো দে প্রিন্সিপি গ্র্যান্ড হোটেলে আওয়ামী লীগের ইতালি শাখা আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, একমাত্র আমার বাবা (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) এবং আমি এ মাটির সন্তান। সে কারণেই তিনি ত্যাগ স্বীকার করেও জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আমরা ছাড়া এখন পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় এসেছেন, তারা বাংলাদেশের বাইরে থেকে এসেছেন।
জিয়াউর রহমানের জন্ম বিহারে, এরশাদের (এইচ এম এরশাদ) জন্ম কোচবিহারে, খালেদা জিয়ার জন্ম শিলিগুড়ি। একজনও এ মাটির সন্তান না। বাংলাদেশের সন্তান হিসেবে, এ মাটির প্রতি আমার টান আছে, কিছু কর্তব্যবোধও রয়েছে। দেশের উন্নয়নের জন্য দেশকে ভালোভাবে জানা অপরিহার্য। সঠিক পরিকল্পনা ও সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা একটি দেশকে অবশ্যই বদলে দিতে পারে। অনেকেই ক্ষমতায় এসেছেন। তবে তারা দেশকে ভালোভাবে জানতেন না, কেননা তাদের এ মাটিতে জন্মই হয়নি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটে বাবা-মাসহ পরিবারের প্রায় সকল সদস্যকে হারানোর কথা স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, জীবনের সবকিছু ত্যাগ করে একটা কাজই করে যাচ্ছি, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতেই হবে। সে কথা চিন্তা করে আমরা প্রত্যেকটা পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমাদের আর কেউ পেছনে টানতে পারবে না। আমরা সামনে এগিয়ে যাব। এটাই হলো সব থেকে বড় কথা।
দেশের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিশ্বের যে কোনো জাতির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এগিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা বাংলাদেশ এখন অর্জন করেছে। দেশের সব উন্নয়ন প্রকল্পের ৯০ শতাংশ এখন নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন হয়। একটা সময় বাংলাদেশ নিয়ে বিদেশিদের নেতিবাচক মনোভাব ছিল। এমন একটা অবস্থা ছিল, বাংলাদেশ শুনলে আগেই বলত ওহ বাংলাদেশ, ওখানে তো ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, মানুষ খেতে পায় না, দুর্ভিক্ষ লেগে থাকে। বাংলাদেশকে একটা হেয় চোখে দেখত। যেটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক ও কষ্টের ছিল। এক সময়ের দাতা দেশগুলোও এখন বাংলাদেশকে আর ভিক্ষা দিতে না এসে বরং উন্নয়ন সহযোগী মনে করে সহযোগিতা করতে আসে। আমরা কারো কাছে আর ভিক্ষা চাই না। আমরা নিজেরা পারি সেটা প্রমাণ করেছি।
পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপট মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক চেয়েছিল আমাদেরকে বদনাম দিতে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম। তারপর বলেছিলাম ওটা আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করব। আমরা তা করতে পেরেছি। প্রবাসী বাংলাদেশিদের সামনে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার কথা তুলে ধরেন। বলেন, অর্থনৈতিকভাবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলেছিলেন। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গিয়েছিলেন। আমরা আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। যখন বিরোধী দলে ছিলাম তখনই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, কোনোদিন সরকার গঠন করার সুযোগ পেলে বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজ করব। এমনভাবে দেশকে গড়ে তুলব যেন বাংলাদেশ নাম শুনলে বিশ্বের মানুষ মর্যাদার চোখে দেখে। মুজিববর্ষে এসে এইটুকু দাবি করতে পারি, আমরা কিন্তু বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে সে জায়গায় আনতে সক্ষম হয়েছি।
জাতির পিতা চেয়েছিলেন, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের জনগণ মাথা উঁচু করে চলবে। মাথা উঁচু করে চলবার মতনই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। আপনাদেরকেও সেভাবে আপনাদের আচার-আচরণ ব্যবহার, সবকিছুতে সেটা বজায় রাখতে হবে, যেন দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদানের কথা স্মরণ করে তাদের জন্য সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, সরকার দেশের প্রতিটি উপজেলা থেকে কমপক্ষে এক হাজার জনকে বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। ডিজিটাল পাসপোর্টের পরবর্তীতে আধুনিক ই-পাসপোর্ট চালু হয়েছে।
বিমানবন্দরে অনেক সময় প্রবাসীদের হয়রানির শিকার হতে হয়। আসলে আমাদের দেশের কিছু মানুষের চরিত্রই খারাপ। যেই শোনে বাইরে থেকে আসবে, ভাবে যে একটু চাপ দিলেই মনে হয় কয়েকটা ডলার পাওয়া যাবে। একটা কথা মনে রাখবেন। ঘুষ যে দেয় সেও যেমন অপরাধী, যে নেয় সেও অপরাধী। দিয়ে দিয়ে অভ্যাসটা আপনারা খারাপ করেন। আগামীতে আর করবেন না।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আরেকটা কথা মনে রাখতে হবে, আমার কিন্তু বয়স হয়ে গেছে। আমার ৭৩ বছর বয়স, এটা মাথায় রাখতে হবে। কাজেই আগে যখন অল্প বয়স ছিল অনেক ঘুরেছি। এখন আর এত সম্ভব না। তারপরও অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে। যতটুকু সময় পাই, ততটুকু সময় দেশের কাজ করার চেষ্টা করি। দ্রুত এ দেশটাকে উন্নত করতে চাই। সেজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রাম করেছেন।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, ইতালিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান শিকদার, ইতালী আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইদ্রিস ফরাজী, সাধারণ সম্পাদক হাসান ইকবাল, ইতালি প্রবাসী হোসনে আরা বেগমসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।