জামালপুরে বন্যা, কৃষিতে ক্ষতি ২১৯ কোটি টাকা

ছবি: বাংলাদেশের খবর

প্রাকৃতিক দুর্যোগ

জামালপুরে বন্যা, কৃষিতে ক্ষতি ২১৯ কোটি টাকা

  • আবদুল লতিফ লায়ন, জামালপুর
  • প্রকাশিত ৩০ জুলাই, ২০১৯

চলতি বন্যায় জামালপুরে সবচেয়ে বেশি কৃষি খাতই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বন্যায় কৃষি খাতে ক্ষতির পরিমাণ ২১৮ কোটি ৭৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এ জেলায় কাঁচা তরিতরকারির ক্ষেত পানিতে ডুবে যাওয়ার ফলে সব ধরনের সবজির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় বীজতলা, আখ, পাট, ভুট্টা, কাঁচা তরিতরকারিসহ ২৪ হাজার ২১০ হেক্টর জমির ফসল আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও জেলায় ২২ হাজার ৪৮৬টি পুকুরের মধ্যে বন্যাকবলিত হয়েছে ৮ হাজার ৪২৫টি পুকুর ডুবে মাছ, ২ হাজার ২৮৮ হেক্টর রোপা আমন, ৪ হাজার ২৪ হেক্টর জমির আউশের বীজতলা, ৫ হাজার ৯৪০ হেক্টর পাট, ৪ হাজার ২৬১ হেক্টর সবজি, ১৪৩ হেক্টর মরিচ, ৯৭ হেক্টর কলা ও ৩৫ হেক্টর জমির ভুট্টা বন্যার পানিতে ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জামালপুরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বন্যার কারণে সবজির বাজারে এখন আগুন। সব ধরনের সবজির দাম এখন আকাশচুম্বী। জামালপুরের বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। কাঁচামরিচ প্রতি কেজি এখন ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। করলা ১২০ টাকা কেজি। ঢেঁড়শ ১০০, পটোল ৬০, ঝিঙে ৮০, দেশি কাঁকরোল ৬০, সাধারণ মানের কচু ৪০, ভটভটি ৬০, বেগুন ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে। অনেক বাজারে কাঁচামরিচ পাওয়াই যাচ্ছে না।

সরেজমিন দেখা যায়, জেলা সদরসহ উপজেলার বাজারগুলোতে সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচামরিচের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। বেশিরভাগ বাজারে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২শ টাকা কেজি দরে। বন্যায় কৃষকের মরিচ ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে কাঁচামরিচের দাম এমন অস্বাভাবিক বেড়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। জামালপুর সদরের বিশাল চরাঞ্চল সবজি উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাখছে। কিন্তু সম্প্রতি বন্যায় কৃষকের সব সবজি ক্ষেত এখনো পানির নিচে। বাজারে আমদানি কম। তাই দামও বেশি। মূল্য বেশি হওয়ায় ক্রেতা সাধারণ ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হয়েছেন।

শহরের স্টেশন বাজারের তোতা মিয়া জানান, অল্প পরিসরে কাঁচামরিচ বাজারে এলেও বেশি দামে কিনতে হয়। তাই বাধ্য হয়েই ক্রেতাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তা ছাড়া বাজারে ওঠা মরিচের ঝাল কম। বেশিরভাগ মরিচই অপরিপক্ব।

খুচরা ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন জানান, বিভিন্ন হাটবাজারে পাইকারি বাজারের চেয়েও দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। জেলার হাটবাজারে আগে ৮০-১০০ টাকা কেজি দরে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে। অথচ সপ্তাহের ব্যবধানে হঠাৎ করেই কাঁচামরিচ ২০০ টাকা কেজি দাম হওয়ায় ক্রেতাদের কাঁচামরিচ কিনতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠে পড়ে। হঠাৎ কাঁচামরিচের দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে শরিফপুর বাজারের সবজি ব্যবসায়ী জিয়ার আলী জানান, জেলায় টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বন্যায় মরিচের অনেক ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে দাম বেড়েছে। লক্ষ্মীরচর গ্রামের কৃষক মোস্তফা জানান, ২ সপ্তাহ আগে আমি চালকুমড়া বিক্রি করেছি পাইকারিপ্রতি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়। তখন বন্যা ছিল না। কিন্তু এখন আমার ক্ষেতে চালকুমড়া নেই বললেই চলে। তিনি জানান, বন্যায় আমার চালকুমড়ার ক্ষেতসহ চিচিঙ্গা, ঝিঙে ক্ষেত ডুবে গেছে। সবজিতে আমার বিপুল অঙ্কের টাকা লোকসান হবে।

জামালপুর কৃষি সম্প্রসারণের উপপরিচালক আমিনুল ইসলাম জানান, এবারের বন্যায় কৃষির ওপর বেশি প্রভাব পড়েছে। ১৬ হাজার ৭৮৮ হেক্টর জমির ফসল এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব ক্ষতি টাকায় রূপান্তর করলে দাঁড়ায় ২১৮ কোটি ৭৫ লাথ ২৫ হাজার টাকা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads