ব্যবসা-বাণিজ্যের সহজিকরণ (ডুয়িং বিজনেস) সূচকে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ১০০তম অবস্থানে আনতে ২০১৬ সাল থেকে উদ্যোগ রয়েছে। এ লক্ষ্যে কাজ করছে ১৫ সদস্যের জাতীয় কমিটি ন্যাশনাল কমিটি ফর মনিটরিং ইমপ্লিমেন্টেশন অব ডুয়িং বিজনেস রিফর্মস (এনসিএমআইডি)। কমিটির সুপারিশে কাজ শুরু হলেও চলতি বছর মাত্র এক ধাপ উন্নতি করে ১৭৬তম অবস্থানে এসেছে বাংলাদেশ। আগামী পাঁচ মাসের মধ্যেই নতুন বছরের সূচক তৈরির কাজ শুরু করবে বিশ্বব্যাংক। এ সময়ের মধ্যেই ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো বৈঠক করেছে কমিটি।
রাজধানীর হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে ডুয়িং বিজনেস সংক্রান্ত স্টিয়ারিং কমিটির সভা গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বক্তব্য রাখেন কমিটির সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ। এ ছাড়া বিদ্যুৎ সচিব, অর্থ সচিব, বাণিজ্য সচিব, ভূমি সচিবসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, দ্বৈত ব্যবসা সহজিকরণে আগামী বছরের শুরুতে ওয়ানস্টপ সেবা কার্যকর হচ্ছে। দ্বৈত ব্যবসা সংক্রান্ত জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটিতে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বৈঠকে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণ করতে বিদ্যুৎ সংযোগ, জমির ছাড়পত্রসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কাজগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার সুপারিশ করেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বিভিন্ন সেবাকে এক প্রক্রিয়ায় আনতে হবে। সেবা পেতে বিদেশে দালালদের অর্থ দিতে হয়। এটি বৈধ। অর্থের বিনিময় দালালরা সব ধরনের সহায়তা করে। এতে সংশ্লিষ্টদের ভোগান্তি কমে আসে। এ ধরনের সেবা চালু করতে পারলে এটি দেশে বৈধ হতো।
মন্ত্রী আরো বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে পরিবেশ এমন করা দরকার যে একজন উদ্যোক্তা ট্রেড লাইসেন্স নেওয়ার পর অন্য কিছু নিতে না হয়।
শাজাহান খান বলেন, ব্যবসায়ীদের মন মানসিকতা পরিবর্তনে প্রয়োজনে কর্মশালা করতে হবে। জাহাজ নির্মাণ শিল্পে ঋণ নিয়ে তা দিয়ে বাড়িঘর করেছে। টাকা সরিয়ে নিয়ে গেছে। এতে জাহাজ শিল্পের মুখ থুবড়ে পড়েছে। ব্যাংক থেকে ব্যবসায়ীরা টাকা নিয়ে খেয়ে ফেলবে। লোকবল সঙ্কট ও কতিপয় কাস্টমস কর্মকর্তার জটিলতায় ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়ছেন বলেও তিনি মনে করেন।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, দুই বছরে স্টিয়ারিং কমিটি বৈঠক করেছে মাত্র একবার। এ কমিটিতে আমলা ও মন্ত্রী ছাড়া কোনো ব্যবসায়ী প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ অবস্থায় ডুয়িং বিজনেসে বাংলাদেশের অগ্রগতি অসম্ভব।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য করা সম্ভব হবে না। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য নিরাপত্তা দরকার। এসব দিক বিবেচনা করে পুলিশ বাহিনীতে সংস্কার করা হচ্ছে। শিল্পায়ন পুলিশ গঠন করা হয়েছে। নৌপথে পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে নৌ-পুলিশ গঠন করা হয়েছে।
ব্যবসা-বাণিজ্যে ভালো করতে হলে শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে বলে মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির সুবাদে অন্য দেশগুলো এগিয়ে যাচ্ছে। ডিজিটালাইজেশন এখনো অনেকে বুঝে না। তিনি আরো বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগে ৪০০ দিনের থেকে কমিয়ে ১৮০ দিনে এনেছি। ১০০ দিনের কমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ চলছে বলেও তিনি জানান।
বিদ্যুৎ সচিব আবদুস সালাম বলেন, নতুন ব্যবসা-বাণিজ্যে ২৭ এজেন্সির লাইসেন্স নিতে হয়। এজন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিসকে সক্রিয় করতে হবে। নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, দ্বৈত ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নতি করতে আরো শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে হবে। গত দুই বছরে ডুয়িং বিজনেস সূচকে বাংলাদেশ খুব বেশি ভালো করতে পারেনি। আমদানি-রফতানিসহ অর্থনীতির অন্য সূচকগুলো ভালো করছে। কিন্তু এক্ষেত্রে ভালো হচ্ছে না। ব্যবসা-বাণিজ্য করতে বিদ্যুৎ গ্যাস পরিবেশের সনদসহ সব সেবা এক ছাতার নিচ থেকে দিতে হবে।
মূল প্রবন্ধে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী ডুয়িং বিজনেসে ১৯০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থা ১৭৬। সেখানে ব্যবসা বাণিজ্যের রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে ৯টি ধাপের স্থানে ৫টি করার প্রস্তাব করেন। নির্মাণ কার্যক্রম শুরু ৬০ দিনের মধ্যে করতে পারার ব্যবস্থার কথা বলেন। তিনি বলেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। আশা করছি আগামী জানুয়ারি থেকে ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেবা পুরোপুরি কার্যকর করা যাবে।