রাজনীতি

জাতীয় সংলাপ চান কাদের সিদ্দিকী

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১ অক্টোবর, ২০১৯

দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে জাতীয় সংলাপের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের চেয়ারম্যান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন। তিনি বলেন, পুলিশ-র্যাব যেখানে ধরে সেখানেই হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি। তাই মানুষ এখন আর খালেদা জিয়ার দুই কোটি টাকার মামলাকে আমলে নিতে চায় না। সেজন্য আপনাদের বলতে চাই, বর্তমান সরকার অনতিবিলম্বে দেশকে বাঁচানোর জন্য, মানুষকে উৎসাহিত করার জন্য, মানুষ যে দেশের মালিক এটা প্রমাণ করার জন্য একটি জাতীয় সংলাপের আয়োজন করুক। জাতীয় সংলাপ হলে মানুষ যদি বুঝতে পারে দেশ নিয়ে, দেশের সমস্যা নিয়ে দেশের মানুষ কথা বলতে পারে, দেশের মানুষের প্রতিনিধিরা কথা বলতে পারে তাহলে মানুষের মধ্যে একটি জাগরণের সৃষ্টি হবে।

এর আগেও জাতীয় সংলাপ চেয়ে সাড়া পাননি, এখন আবার সংলাপের জন্য লিখিতভাবে চিঠি দেবেন কি না প্রশ্ন করা হলে কাদের সিদ্দিকী বলেন, এই পর্যন্ত যখন যা চেয়েছি, আল্লাহর রহমতে সবকিছু পেয়েছি। অতীতে যে সংলাপের অনুরোধ করেছিলাম একটা না একটা সময়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা সেই সংলাপে বসতে বাধ্য হয়েছিলেন। আমি বেগম খালেদা জিয়াকেও অনুরোধ করেছিলাম হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করার জন্য। তিনি সেই হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার না করলেও জনগণ সেই হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করেছে বা প্রত্যাখ্যান করেছে। আমি আজকে আবার বলছি, দেশবাসীকে এবং আল্লাহ রসুলকে হাজির নাজির জেনে দেশকে বাঁচাতে হলে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে জাতীয় সংলাপের আহ্বান করতেই হবে এবং আন্তরিকভাবে সেই সংলাপের উত্তরণ ছাড়া তার সামনে কোনো বিকল্প নেই। শুধু আওয়ামী লীগকে ঠেঙিয়ে, সোজা করে তিনি দেশকে বাঁচাতে পারবেন না। এটা দুর্নীতি মুক্তির পদক্ষেপ, এটা দেশের মানুষ ভাবতেই পারে না। আওয়ামী লীগে যদি এত দুর্নীতিবাজ থাকে তাদের তো সরকারে থাকারই সুযোগ নেই, অধিকার নেই, নৈতিকতা নেই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান শুদ্ধি অভিযান প্রসঙ্গে কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমরা বর্তমান সরকারের এই অভিযানকে সর্বান্তঃকরণে সমর্থন করি। কিন্তু এই অভিযান যদি শুধু আইওয়াশ হয়, মানুষকে দেখাবার জন্য হয় সেরকম অভিযানে আমাদের সমর্থন নেই। আমরা আশা করব, দেশকে নিষ্কলুষ করবার জন্য, দুর্নীতিমুক্ত করবার জন্য, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি মুক্ত করবার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই অভিযান হবে শাশ্বত সত্য। এখন পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে বহিষ্কার, যুবলীগের কতিপয় নেতাকে গ্রেপ্তার, আওয়ামী লীগের নেতাদের ভয় দেখানো- এটাই বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার শেষ কথা নয়। সে জন্য মনে করি, সার্বিকভাবে যেখানে দুর্নীতি আছে সেখানেই যেন এই হাত প্রসারিত হয়। যারা ব্যবসা করেন তাদের অনেকেই দুর্নীতি করেছেন। আঙুল ফুলে অনেকে কলাগাছ হয়েছেন। শেয়ারবাজারের কোটি কোটি টাকা লুট করে প্রায় ৩০/৪০ লক্ষ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে পথের কাঙ্গাল করা হয়েছে, সেদিকে কোনো দৃষ্টি নেই। এজন্য স্পষ্ট করে বলতে চাই, শুধু একতরফাভাবে একটা কিছু করে ছেলে ভুলানো পাঁয়তারা করলেই চলবে না। কাদের সিদ্দিকী আরো বলেন, রাজশাহীতে সেদিন একটা বিশ্রী ঘটনা ঘটেছে। যেখানে ভারতীয় এম্বেসির খুব সম্ভবত উপকমিশনার বোধ হয় ছিলেন। তাকে খুশি করার জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জয় হিন্দু উচ্চারণ করেছেন। আমি এর তীব্র নিন্দা করছি এবং এই মুহূর্তে তাকে বহিষ্কারের জন্য দাবি জানাচ্ছি। এরকম হতে পারে না, এরকম চাটুকার, এরকম দালাল যদি একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকে তাহলে ১৯৬৯ সালে ড. জোহা যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের রক্ষা করার জন্য জীবন দিয়েছিলেন তা আজ ব্যর্থ হয়ে যায়। তাই তাকে অবিলম্বে বহিষ্কার করা হোক। তিনি (ভিসি) পদত্যাগ করলেই তার এই অপরাধের শেষ হবে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনিসহ মন্ত্রী-উপদেষ্টা-এমপির সম্পদের হিসাব দেবেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, উনি সম্পদের হিসাব দিতে চেয়েছিলেন, দেন  নাই। এই দায়িত্ব তো উনারই। আমি আপনার সাথে একমত যে, আমি হিসাব চাই। সরকারের পদত্যাগ চান কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আপনি ভুল করছেন, আমি কিন্তু অন্যদের মতো না। আমি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে ছিলাম, তাদের সঙ্গে একটি নির্বাচনে (একাদশ সংসদ) আমি অংশ নিয়েছিলাম। আমি আশা করেছিলাম ড. কামাল হোসেনের (জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা) নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট চলবে কিন্তু সেই ঐক্যফ্রন্ট তার নেতৃত্বে চলেনি। ইংল্যান্ডে বসবাসকারী তারেক রহমান (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) নেতৃত্বে শেষ পর্যন্ত সেই ঐক্যফ্রন্ট চলেছে। যে কারণে নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে যখন নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করা হয় তারপর সেই চুরির নির্বাচনে ৬ জন বিএনপির এবং ২ জন গণফোরাম মোট ৮ জন তারা সংসদে গেলেন। আমার কাছে মনে হয়েছে মানুষের কাছে আমরা যে কথা দিয়েছিলাম সেই কথার সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। মানুষের সঙ্গে প্রবঞ্চনা করা হয়েছে। সবার শেষে আমি ঐক্যফ্রন্টে গিয়েছিলাম ঠিক তেমনি সবার আগে ওই ফ্রন্ট ত্যাগ করে আমরা বেরিয়ে এসেছি। জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সহধর্মিণী নাসরিন সিদ্দিকী, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার, কেন্দ্রীয় নেতা ইকবাল সিদ্দিকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads