দুই বছর কারাবাসের পর অবশেষে জেল থেকে ছাড়া পেলেন গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলা মামলায় গ্রেফতার হওয়া নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হাসনাত রেজা করিম।
বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে গাজীপুর কাশিমপুরের হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের জেলার বিকাশ রায়হান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আদালতের দেওয়া অব্যাহতির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে হাসনাত করিমকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
এর আগে বুধবার ঢাকার আদালত গুলশান হামলার ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে পুলিশের সুপারিশে হাসনাত করিমকে অব্যাহতির আদেশ দেন।
কারা সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান থেকে আটক হওয়ার পর তাকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। এর দুই বছর এক মাস ৯ দিনের মাথায় কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন তিনি।
কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন হাসনাত করিমের স্ত্রী শারমিনা করিম। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অনেক অপেক্ষা করেছি। দুই বছরেরও বেশি সময় নির্ঘুম কাটিয়েছি। আমাদের বিশ্বাস ছিল, হাসনাত নির্দোষ। আজ হোক কাল হোক, সে মুক্ত হবেই। দুঃসহ জীবন পার করলেও হাসনাতের মুক্তিতে আমরা খুশি।’
কারাগার থেকে বেরিয়ে একটি কালো জিপে করে স্বজনদের সঙ্গে ঢাকার পথে যাত্রা করেন হাসনাত করিম। তবে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি কথা বলতে চাননি।
ঢাকার বনানীর ব্যবসায়ী প্রকৌশলী রেজাউল করিমের ছেলে হাসনাত করিম মেয়ের জন্মদিন উদযাপনের জন্য হলি আর্টিজানে গিয়েছিলেন বলে তখন তারা জানিয়েছিলেন।
ওই ক্যাফেতে জঙ্গিরা ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করেছিল; এরপর কমান্ডো অভিযানে হাসনাত করিমের পরিবারসহ কয়েকজন জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পান।
কিন্তু ওই ক্যাফেতে জিম্মি দশার একটি ভিডিওচিত্র প্রকাশের পর হাসনাতকে নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। হামলার পরদিন ভোরে ধারণ করা ওই ভিডিওতে হাসনাত করিমকে জঙ্গিদের সঙ্গে আলাপ করতে দেখা গিয়েছিল। তবে হাসনাতের স্ত্রী জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, জিম্মি অবস্থায় তাদের বিভিন্ন নির্দেশ মেনে কাজ করতে হয়েছিল।
এরপর ওই বছরের ৪ অগাস্ট গ্রেপ্তার হন হাসনাত করিম। বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা ওই মামলায় তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করে পুলিশ।
হাসনাত করিম অনেকবার জামিনের আবেদন করলেও প্রতিবারই তিনি প্রত্যাখ্যাত হন। জামিনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলে আসছিলেন, অভিযোগপত্রে হাসনাত করিমের নাম আসতে পারে।
কিন্তু দুই বছর পর তদন্ত শেষ করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট অভিযোগপত্র দাখিলের পর জানায়, হামলায় নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক এই শিক্ষকের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ তারা পাননি।