ফিচার

ছবির ফেরিওয়ালাদের ক্লাব

  • প্রকাশিত ২৩ অগাস্ট, ২০২১

আলো ও আলোর কারসাজি কাজে লাগিয়ে সৃষ্টি হয় ফটোগ্রাফি নামক শিল্পের। শিল্পী তার দৃষ্টি থেকে খুঁজে নেয় ক্ষুদ্র কিছু ফ্রেম। বশেমুরবিপ্রবি ফটোগ্রাফিক সোসাইটি সেই ফ্রেমগুলোকে ছড়িয়ে দেওয়ারই একটি প্ল্যাটফরম, যেটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ইভেন্টের স্থির চিত্রধারণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে সারা দেশের সামনে তুলে ধরছে। ওরা অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায়, কুড়িয়ে আনেন সম্মান ও সম্মাননা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, ইভেন্টের স্মৃতি ক্যামেরাবন্দি করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটোগ্রাফারদের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। ছবির ফেরিওয়ালাদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) ফটোগ্রাফিক সোসাইটি।

২০১৩ সালে ফেসবুকে গ্রুপ খোলার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাত্রা শুরু করে বশেমুরবিপ্রবি ফটোগ্রাফিক সোসাইটি। সেই গ্রুপের ফাউন্ডার ছিলেন অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (এসিসিই) বিভাগের ইসতিয়াক মাহমুদ। তারপর গ্রুপে অনেকেই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ধরনের সুন্দর সুন্দর ছবি পোস্ট দিতে থাকেন। ধীরে ধীরে গ্রুপটি পরিচিতি পেতে শুরু করে। কিছুদিন যেতে না যেতেই গ্রুপটি ফটোগ্রাফারদের একটা প্লৗাটফরম হয়ে ওঠে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে এসিসিই বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের সোহানুর রহমান সাগর ক্যাম্পাসের সব ফটোগ্রাফারদের এক করে একটি সংগঠন করার সিদ্ধান্ত নেন। তখনই রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাসিরুদ্দিন এবং মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইমরান হোসেনের নেতৃত্বে ফটোগ্রাফারদের নিয়ে একটি কমিটি গঠনের জন্য সুপারিশ করা হয়।

পরবর্তীতে মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইমরান হোসেনকে সভাপতি ও অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (এসিসিই) বিভাগের ১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সোহানুর রহমান সাগরকে সাধারণ সম্পাদক করে তৎকালীন ৩২টা বিভাগের ৩২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ২০১৭ সালের ৭ মে ‘Explore And Capture The Moment What Your Eyes And Soul Can Feel’ স্লোগান নিয়ে যাত্রা শুরু করে বশেমুরবিপ্রবি ফটোগ্রাফিক সোসাইটি।

প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক সোহানুর রহমান সাগর বলেন, বশেমুরবিপ্রবি ফটোগ্রাফিক সোসাইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে পুরাতন ও বড় সংগঠন। এর ফেসবুক গ্রুপের (BSMRSTU Photographic Society) সদস্য এখন ১২ হাজারের ওপরে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য ছিল ক্যাম্পাসের সব ফটোগ্রাফারকে একটা প্ল্যাটফরমে এনে নিজেদের ফটোগ্রাফিক আইডিয়া একে অপরের সাথে শেয়ার করা এবং ক্যাম্পাসকে সারা দেশের কাছে রিপ্রেজেন্টেশন করা।

সংগঠনটি সদস্যদের নিয়ে নিয়মিত ক্যাম্পাসে সাপ্তাহিক আলোচনার মাধ্যমে সদস্যদের একে অপরের সাথে ফটোগ্রাফিক ধারণা শেয়ার করার ব্যবস্থা করে থাকেন। এর বাইরে ফটোগ্রাফিক সোসাইটি নিয়মিত ফটোওয়ার্কের আয়োজন, ক্যাম্পাসে ছবি প্রদর্শনীর আয়োজন, র‍্যাগ ডেতে মিডিয়া পার্টনারসহ ক্যাম্পাসের অন্যান্য সংগঠনের সাথে মিডিয়া পার্টনার হিসাবে কাজ করছে।

ফটোগ্রাফিক সোসাইটি ক্যাম্পাসের বাইরে বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ছবি প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করে, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটোগ্রাফিক সংগঠনের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে কো-অপারেটিভ ফটোওয়ার্কে আয়োজন করে থাকে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে জাতীয় পর্যায়ে ছবি প্রদর্শনীর আয়োজন করাসহ দেশের স্বনামধন্য ফটোগ্রাফারদের সাথে ফটোওয়ার্ক এর আয়োজন করা এবং দেশের সব থেকে বড় ফটোগ্রাফিক সংগঠনের একটি হয়ে ওঠা।

বর্তমানে ফটোগ্রাফিক সোসাইটিতে ৩৪টা বিভাগের ৭৪ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। প্রতিবছর নতুন সদস্য চেয়ে সংগঠনটির ফেসবুক গ্রুপ ও পেইজে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে। এছাড়া সংগঠনটি প্রতিটি বিভাগের অফিসে মেম্বারশিপ ফরম এবং ভার্সিটি পয়েন্টও ফরম দিয়ে থাকে। এর বাইরে যে-কোনো সময় শিক্ষার্থীরা চাইলে মানব সম্পদ সচিব অথবা অফিস সচিবের সাথে যোগাযোগ করে সভাপতির অনুমতিক্রমে সদস্য হওয়া যায়।

ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সদস্যদের সাফল্যের ঝুলিতে আছে বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তজার্তিক ফটো এক্সিবিশনের পুরস্কার। অনেক সদস্যের ঝুলিতে আছে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরষ্কার। তাদেরই একজন নাহমাদ হাসানের ঝুলিতে আছে বিবিসি বর্ষসেরা ফটোগ্রাফার (Young, Asia-2020), লেঞ্জজেশন একাডেমি অব ফটোগ্রাফি ইন্ডিয়া (বেষ্ট ফটোগ্রাফার ইন স্ট্রিট চাইল্ড), রাশিয়ান থার্টিফাইভ অ্যাওয়ার্ড, (টপ ২০, চাইল্ড পোর্টেট ক্যাটাগরি), আর্টস্টিক ফটোগ্রাফি ক্লাব, কলকাতা আয়োজিত অ্যাডমিন চয়েস বেষ্ট ফটোগ্রাফার, ফটো অব দ্য মান্থ (অ্যাডবি পিকচার)।

রুবেল শিকদারের ঝুলিতে আছে ICDPS-এর মোবাইল ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতার প্রথম পুরস্কার (সৌদি আরব), বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক ফোরাম আয়োজিত কোয়ারেন্টাইন ছবি প্রতিযোগিতার প্রথম পুরস্কার। মুহূর্ত শরৎ অনলাইন ছবি প্রতিযোগিতার প্রথম পুরস্কার। আরেক সদস্য মুকুল আহমেদ রনির ঝুলিতে আছে ইন্টারন্যাশনাল হিপা সামার কন্টেস্ট ফাইনালিস্ট (ইউএই), ট্রিয়েস্তা ফটো ডেইজ শর্টলিস্টেড (ইতালি), ব্ল্যাংক ওয়াল গ্যালারি ফাইনালিস্ট (গ্রিস), রানার্সআপ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফিক সোসাইটি ফটো কন্টেস্ট।

আর এস মাহমুদ হাসান

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads