চোখের জলে বিদায় সজ্জন সৈয়দ আশরাফকে

চোখের জলে বিদায় সজ্জন সৈয়দ আশরাফকে

ছবি : বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

জানাজায় লাখো মানুষের ঢল

চোখের জলে বিদায় সজ্জন সৈয়দ আশরাফকে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৭ জানুয়ারি, ২০১৯

সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বরেণ্য রাজনীতিবিদ সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। চোখের জলে তাকে শেষ বিদায় জানালেন সর্বস্তরের জনতা। তার শেষযাত্রায় ঢল নেমেছিল লাখো মানুষের। দলমত নির্বিশেষে মানুষ তার জানাজায় অংশ নেন। যেসব মানুষ তাকে ভোট দিয়ে পাঁচবার পাঠিয়েছেন জাতীয় সংসদে, অভিভাবক হারানো কিশোরগঞ্জের সেসব মানুষের আর্তনাদে গোটা জেলার পরিবেশ শোকাবহ হয়ে ওঠে। ঢাকা, কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহে তিন দফায় জানাজা শেষে গতকাল রোববার বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে তাকে ঢাকার বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাজায় অংশ নিতে এসে সবার কণ্ঠ থেকে ঝরে সৈয়দ আশরাফের উদারতার কথা। স্মরণ করেন কিশোরগঞ্জ নিয়ে তার উন্নয়ন ভাবনা।

গত বছরের জুলাই মাসে ফুসফুসে ক্যানসারের কারণে তাকে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি বিজয়ী হন। কিন্তু সংসদ সদস্য হিসেবে শপথের আগেই গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে থাইল্যান্ড থেকে তার মরদেহ দেশে আনা হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বিমানবন্দরে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে মরদেহ গ্রহণ করেন।

সেখান থেকে মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজধানীর ২১, বেইলি রোডে সৈয়দ আশরাফের সরকারি বাসভবনে নেওয়া হয়। সেখানে প্রিয় নেতাকে শেষবারের মতো দেখতে আসেন আত্মীয়-স্বজন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষী ও সাধারণ মানুষ। এরপর রাতেই মরদেহ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের হিমঘরে নেওয়া হয়।

গতকাল সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাধারী ব্যক্তিরা। এ সময় তাকে দেওয়া হয় গার্ড অব অনার।

প্রথমে তার কফিনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এ ছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলের পক্ষে দলীয় নেতাদের নিয়ে আরেকবার শ্রদ্ধা জানান। এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, ১৪ দলের পক্ষে মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এবং জাতীয় পার্টি, জাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষে আশরাফের কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এর আগে তার কর্মময় জীবন নিয়ে আলোকপাত করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এবং পরিবারের পক্ষে তার ছোট ভাই ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম। এ সময় মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনায় মোনাজাত করা হয়।

এরপরই প্রিয় এই নেতার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। সেখানে ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে তার জানাজায় ঢল নামে সর্বস্তরের মানুষের। মাঠ ছাড়িয়ে পাশের রাস্তা, বাড়ির ছাদ ও সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে মানুষকে জানাজায় অংশ নিতে দেখা যায়। জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকেই দলে দলে লোকজন আসতে থাকেন শোলাকিয়ায়। দুপুরের আগেই বিশাল শোলাকিয়া ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এক সময় মাঠের সীমানা পেরিয়ে আশপাশ লোকারণ্য হয়ে ওঠে।

শোলাকিয়ায় নেওয়ার আগে দুপুর পৌনে ১টার দিকে বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে সৈয়দ আশরাফের মরদেহ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্টেডিয়ামে নেওয়া হয়। সেখানে জাতীয় পতাকা মোড়ানো কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতারা। সেখান থেকে মরদেহবাহী গাড়ির বহর পৌঁছে শোলাকিয়া মাঠে। সেখানে প্রয়াত সৈয়দ আশরাফকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।

দুপুর দেড়টায় শোলাকিয়া মাঠে সৈয়দ আশরাফের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন শহরের পাগলা মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা খলিলুর রহমান।

জানাজা শুরুর আগে সৈয়দ আশরাফের ছোট ভাই সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম তার প্রয়াত ভাইয়ের জন্য দোয়া কামনাসহ কোনো অপরাধ বা ভুলত্রুটি করে থাকলে মাফ করে দেওয়ার আবেদন জানান। সৈয়দ আশরাফের কাছে কারো কোনো দেনা থাকলে তারা তা পরিশোধ করবেন বলে জানান। এখানে নামাজে জানাজায় শরিক হন সৈয়দ আশরাফের তিন ভাই মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ শাফায়াতুল ইসলাম, ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম ও ড. সৈয়দ শরীফুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বিসিবি সভাপতি ও কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপন, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুল আহসান শাহজাহান, জেলা প্রশাসক সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী ও পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিপুল সংখ্যক মানুষ। এ সময় সেখানে সৈয়দ আশরাফের একমাত্র মেয়ে সৈয়দা রীমা ইসলাম, দুই বোন সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি, সৈয়দা রাফিয়া নূর রূপাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

জানাজা শেষে মরদেহে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

কিশোরগঞ্জ জানাজা শেষে হেলিকপ্টারে করে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ময়মনসিংহে। দুপুর আড়াইটার পর তার তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রিয় নেতাকে শেষবার দেখতে ও শ্রদ্ধা জানাতে লাখো মানুষের ঢল নেমেছিল ঈদগাহ মাঠে। জানাজা শেষে অশ্রুসিক্ত চোখে তারা প্রিয় এ মানুষটিকে বিদায় জানান।

বিকাল ৪টা ৩৫ মিনিটে আশরাফের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স ঢাকার বনানী কবরস্থানে এসে পৌঁছায়। দুপুর থেকেই নেতাকর্মীরা তাদের প্রিয় নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে চিরবিদায় জানাতে উপস্থিত হন বনানী কবরস্থানে। গতকাল আছর এ কবরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

অন্যদিকে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের রুহের মাগফিরাত কামনায় আগামীকাল মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় রাজধানীর ২১ বেইলি রোডের তার সরকারি বাসভবনে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।

 

 

 

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads