চুলচেরা হিসাবের রাজনীতি শুরু

লোগো আ.লীগ-বিএনপি

রাজনীতি

চুলচেরা হিসাবের রাজনীতি শুরু

ক্ষমতার স্বপ্নে আ.লীগ-বিএনপি যুক্তফ্রন্ট নিয়ে রহস্যজট

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ২৫ অগাস্ট, ২০১৮

সবকিছু ঠিক থাকলে অক্টোবর-নভেম্বরে তফসিল। ডিসেম্বরে ভোট। রাজনীতিতে চলছে চুলচেরা লাভক্ষতির হিসাব। ক্ষমতার ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বপ্ন আওয়ামী লীগের, মিত্রদের নিয়ে আবার সরকার গঠন করতে চায় বিএনপি। লক্ষ্য পূরণে তারা জোট ভারী করার চেষ্টা করছে।

দুই জোটে থাকা একাধিক সারির নেতারা শেষ পর্যন্ত কী করবেন তা নিয়ে সন্দেহের শেষ নেই। ভোটের মাঠে ফ্যাক্টর জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ও জামায়াত আখেরে কী করবে তা এখনো অনিশ্চিত। অন্যদিকে বি. চৌধুরী ও ড. কামালের যুক্তফ্রন্ট বিএনপির সঙ্গে থাকবে এমন ভাবা হলেও রহস্যের জট কাটছে না। গত ১৮ আগস্ট দীর্ঘ বৈঠক করেছেন ড. কামাল হোসেন ও কাদের সিদ্দিকী। এদিকে নামসর্বস্ব দলের অনেকেই রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে মন্ত্রী-এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর হিসাব কষাটাই স্বাভাবিক বলে মনে করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই বড় দলগুলো নিজেদের শক্তি আরো বাড়াতে ছোট দলগুলোকে কাছে টানে। তাতে উভয়পক্ষই লাভবান হয়। এটা গণতন্ত্রের সৌন্দর্য বলা যায়।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার মতে, রাজনীতির চলমান হিসাবে লাভের অঙ্ক কষে তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসতে চায় দলটি। এজন্য স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির ঐক্য গড়ার ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তাদের সঙ্গে মধ্যসারির ও ছোট দলগুলো রাখতে নানা কৌশলও নেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার অধীনেই জাতীয় নির্বাচনের সিদ্ধান্তে অটল অবস্থানে থাকায় ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। আবার কয়েকটি দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দু’পক্ষের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছে।

জানা গেছে, মহাজোটের পরিধি বাড়ানোর ইচ্ছা ক্ষমতাসীনদের। তা সম্ভব না হলে ছোট দলগুলো যাতে নির্বাচনে অংশ নেয়, সেই চেষ্টা করছে তারা। এ জন্য ছোট দলগুলোর সঙ্গে এরই মধ্যে যোগাযোগ শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি সিপিবি, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ, বিএনএ, বিকল্পধারার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এছাড়া ফোনে কথা বলেছেন এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদের সঙ্গেও।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশের খবরকে জানান, নির্বাচনের আগেই ১৪-দলীয় জোট আরো বড় হতে পারে। অনেকেই জোটে আসতে চাচ্ছে। অনেকে আলাদা জোটে থাকতে চাচ্ছে। শেষটা জানা যাবে অক্টোবরে।

এদিকে সরকারবিরোধী জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে আন্দোলন এবং পরে মিত্রদের নিয়ে নির্বাচনে নামতে চায় বিএনপি। জোট সম্প্রসারণেও গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে কোনো দল যদি জোটে আসতে না চায়, তাহলে আন্দোলন ও নির্বাচনের জন্য পৃথক জোট গঠন করে হলেও অভ্যন্তরীণ ঐক্যের চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে যুক্তফ্রন্টকে নিয়ে নানা পরিকল্পনা বিএনপির। এর বাইরে সিপিবি, বাসদ, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিসহ কয়েকটি বাম দলের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে বিএনপি। দলগুলোর বেশ কয়েকটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির সঙ্গে একমতও পোষণ করছে। তবে তারা বিএনপির সঙ্গে জোট গড়তে ইচ্ছুক নয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, আওয়ামী লীগ আবারো একতরফা নির্বাচন করতে পারে এমন ধারণা থেকে অনেক দল ক্ষমতসীনদের ছেড়ে যাওয়ার প্রকাশ্যে ঘোষণা দিচ্ছেন না। তবে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ রাখছে। পরিস্থিতি যাদের পক্ষে মোড় নেবে, তাদের পক্ষে দল ও নেতার অভাব হবে না।

বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক ঐক্যের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা ও অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ সঙ্কট উত্তরণে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। বিএনপি এর জন্য কাজ করছে।

বড় দুই জোটের বাইরে অন্য ছোট-বড় সব রাজনৈতিক দলই আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নিজেদের লাভক্ষতির হিসাব কষছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি নজর জাপা (এরশাদ) ও জামায়াতে ইসলামীর দিকে। 

বিএনপি বা আওয়ামী লীগের সঙ্গে নয়, আগামী নির্বাচনে এককভাবে লড়ার প্রকাশ্য সিদ্ধান্ত জাপার। এককভাবে লড়তে ৫৮টি দল নিয়ে একটি জোটও গঠন করেছে দলটি। গত কয়েক দিন যাবত জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলে বেড়াচ্ছেন পরিস্থিতি বুঝে পদক্ষেপ নেবে তার দল। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন এরশাদ। আর বিএনপি না এলে এককভাবে নির্বাচন করবে জাপা।

এক যুগের নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও বিএনপি জোট থেকে বের না হলেও জামায়াতকে নিয়ে সন্দিহান রাজনৈতিক মহল। জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সিলেটে মেয়র প্রার্থী দেওয়ায় দলটির প্রতি ক্ষোভ বেড়েছে বিএনপির। এ বিষয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, স্থানীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জোট ভাঙার কোনো কারণ নেই। বিএনপির সঙ্গে এজন্য সম্পর্কেরও কোনো অবনতি হবে না।

সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারা, আ স ম রবের জাসদ ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ে গঠিত ‘যুক্তফ্রন্ট’ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশি আলোচনা হচ্ছে। এই ফ্রন্টে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। আরো কিছু দল টেনে বিকল্প শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে চান তারা। কাদের সিদ্দিকীর ঘোষণা, তারা সরকার গঠন করলে রাষ্ট্রপ্রধান হবেন ড. কামাল আর ফ্রন্টের প্রধান থাকবেন বি. চৌধুরী।

এই জোটগুলোর বাইরে থাকা একাধিক নেতা আলাপকালে জানান, তাদের হিসাবটা লাভের দিকে, ক্ষমতায় যাওয়ার পথ যাদের প্রচ্ছন্ন সেদিকেই থাকবেন তারা। গত নির্বাচনের আগে মন্ত্রী-এমপি হওয়ার প্রস্তাব পেয়েও যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে যাননি, তাদের অনেকে এবার পরিস্থিতি বুঝে পা বাড়ানোর কথা ভাবছেন। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন জোটে থাকা অনেকের ভাবনায় পরিস্থিতি বুঝে লাভজনক পক্ষেই থাকার।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads