চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের অবসানের ইঙ্গিত মিলেছে। আশা করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চলতি বসন্তকালীন সম্মেলনের পরে খুলতে পারে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যদ্বার।
বার্তা সংস্থা এএফপির এক খবরে বলা হয়েছে, দেশ দুটির মধ্যে চলমান বাণিজ্যিক যুদ্ধ নিয়ে গত শনিবার তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থমন্ত্রীরা। এ ছাড়া আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টিনা লাগার্দও দেশ দুটির প্রতি এ ধরনের ক্ষতিকর প্রতিবাদ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, চলতি সপ্তাহান্তে দেশ দুটি বৈঠকে বসবে।
এদিকে আইএমএফ প্রধানের এমন মন্তব্যের কিছু সময় পরেই যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি বা অর্থমন্ত্রী স্টিভেন এমনাচিন ঘোষণা দেন, তিনি এই বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর এক সপ্তাহ পরে থেকেই এই বিষয়ে চীনের সঙ্গে আলোচনা করতে চাচ্ছিলেন। শিগগিরই তিনি বিষয়টি নিয়ে চীন ভ্রমণ করবেন।
এদিকে চীনের তরফে আইএমএফ প্রধানের এই পরামর্শকে স্বাগত জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত মার্চ মাসের শেষের দিকে কথিত এই বাণিজ্যযুদ্ধ ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। গত ২২ মার্চ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে মেধাস্বত্ব চুরির অভিযোগে চীন থেকে আমদানিকৃত প্রায় ১০০টি পণ্যের ওপর ৬০ বিলিয়ন ডলার শুল্ক আদায়ের পরিকল্পনায় সই করেন। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক খাতে বিনিয়োগকারী চীনা পুঁজিপতিদের বিনিয়োগও কড়াকড়ির মধ্যে পড়ে।
তখন চীনের তরফে বলা হয়, ওয়াশিংটন দ্রুত সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসলে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে বেইজিং। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলে, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর থেকে অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার করা না হলে মার্কিন পণ্য শূকরের মাংস, আপেল ও ইস্পাতের পাইপের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে বেইজিং। তবে ওয়াশিংটন তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা ১২৬টি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধি করে চীন।
এর কয়েক দিন বাদে গত ৫ এপ্রিল নতুন করে চীনের বিরুদ্ধে ১০ হাজার কোটি ডলার শুল্ক আরোপের পরিকল্পনার কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। তখন বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বলা হয়, শত শত চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের বিদ্যমান প্রস্তাবের সঙ্গে নতুন করে নির্দেশিত শুল্ক যুক্ত হবে।
তখন এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, এ ব্যাপারে বিবেচনা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
আমদানি শুল্ক আরোপকে কেন্দ্র করে বিশ্বের দুই বৃহত্তর অর্থনীতির দেশের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর পর বিশ্বের শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন দেখা দেয়। তখন বাজার বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দেন, ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ পূর্ণমাত্রায় শুরু হলে তা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।