ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই)

ফাইল ছবি

পুঁজিবাজার

ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী

চীনা জোটের সংশোধিত প্রস্তাব আজ যাচ্ছে বিএসইসিতে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৩০ এপ্রিল, ২০১৮

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত শেয়ারে চীনা জোটের সংশোধিত বিনিয়োগ প্রস্তাবে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতি নিতে আজ সোমবার বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) আহ্বান করা হয়েছে। এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দেওয়া শর্ত পূরণে এ সভা ডেকেছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ। আজ রাজধানীর একটি হোটেলে আর্থিক ও কারিগরি প্রস্তাবসহ চীনা জোটের শেয়ার ক্রয় চুক্তি পর্যালোচনা শেষে তা অনুমোদন দেবেন ডিএসইর শেয়ারহোল্ডাররা। এরপর আজই প্রস্তাবটি বিএসইসিতে পাঠাবে ডিএসই কর্তৃপক্ষ।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতি সাপেক্ষে চীনা জোটের সংশোধিত বিনিয়োগ প্রস্তাবটি বিএসইসিতে পাঠানোর দিনই (আজ) চীনা জোটের প্রস্তাবটিতে বিএসইসি অনুমোদন দিতে পারে। মে মাসে দুজন কমিশনারের মেয়াদ শেষ হবে। যেহেতু বর্তমান কমিশনের অধীনেই স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশন কার্যক্রম শুরু হয়েছে, সে কারণে তাদের মেয়াদেই ডিমিউচুয়ালাইজেশনের সবশেষ প্রক্রিয়া কৌশলগত বিনিয়োগকারী ইস্যুটির অনুমোদন দিয়ে যেতে চায় কমিশন। এ জন্য আজ জরুরি সভার মাধ্যমে বিএসইসি বিষয়টির অনুমোদন দিতে পারে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে শেয়ারহোল্ডাররা ২০১৭ সালের ৩০ জুন হিসাব বছরের পূর্বঘোষিত ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ অনুমোদন করায় ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী অংশের শেয়ারে চীনা জোটের বিনিয়োগের পরিমাণ কমবে। উন্মুক্ত দরপত্রে অংশ নিয়ে চীনা জোট ২০১৭ সালের ৩০ জুন হিসাব বছরের অনিরীক্ষিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ডিএসইর ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতি শেয়ারের দর ২২ টাকায় কেনার প্রস্তাব দেয়। তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত ছিল যে, ডিএসইর সম্পদমূল্যে যদি কোনো পরিবর্তন ঘটে, তাহলে দরপ্রস্তাবেও পরিবর্তন আসবে। এ হিসাবে যেহেতু ডিএসইর শেয়ারহোল্ডাররা নগদ লভ্যাংশের অনুমোদন দিয়েছেন, সে কারণে ডিএসইর শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য কমে যাবে। তাই ডিএসইতে চীনা জোটের বিনিয়োগ অন্তত ৪৫ কোটি টাকা কমে যেতে পারে বলে ডিএসই সূত্রে জানা গেছে। এতে ডিএসইর শেয়ারের দর ২১ টাকায় নেমে আসবে।

এর আগে চীনা জোটের বিনিয়োগ প্রস্তাব বিষয়ে বিএসইসির গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন যাচাই বাছাই শেষে গত ১৯ মার্চ ডিএসইর প্রস্তাবে সম্মতি দেয়নি বিএসইসি। তবে বেশ কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে ডিএসইকে সংশোধিত প্রস্তাব হিসেবে জমা দেওয়ার সুযোগ দেয় কমিশন।

সংশোধিত প্রস্তাব জমা দিতে বিএসইসি যেসব শর্ত বেঁধে দেয়, সেগুলো হচ্ছে- শেয়ার ক্রয় চুক্তিতে এমন কোনো শর্ত থাকতে পারবে না, যা দেশের আইন, ডিএসইর সাধারণ শেয়ারহোল্ডার ও পুঁজিবাজারের উন্নয়নের পরিপন্থি। ডিএসইর সংঘস্মারক পরিবর্তনের কোনো প্রস্তাব দিতে পারবে না চীনা জোট। শেয়ার ক্রয়চুক্তিসহ জোটের বিনিয়োগ প্রস্তাবটি বিএসইসিতে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানোর আগে ডিএসইর সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতি নিতে হবে। বিএসইসির তদন্ত কমিটির পর্যবেক্ষণ ও চীনা জোটের শর্ত প্রত্যাহারের বিষয়টি সাধারণ সভায় নোটিশের মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে। চীনা জোটের চূড়ান্ত প্রস্তাব, সংশোধিত শেয়ার ক্রয়চুক্তি ও এ সংক্রান্ত অন্য দলিলাদিসহ সাধারণ সভার কার্যাবলি বিএসইসিতে পাঠাতে হবে।

প্রসঙ্গত, ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী অংশের শেয়ার ক্রয় বিষয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি এক উন্মুক্ত দরপত্রে ভারতীয় ও চীনা জোট অংশ নেয়। এতে ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ারের প্রতিটি ২২ টাকা দরে কেনার প্রস্তাব করে চীনা জোট। অপরদিকে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃত্বে ভারতীয় জোট ২৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ শেয়ারের প্রতিটি ১৫ টাকায় কেনার প্রস্তাব জমা দেয়। দরপত্র অনুযায়ী ডিএসইর বোর্ড চীনা জোটের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়ে বিএসইসিতে প্রস্তাব পাঠায়। চীনা জোটের অসম্পূর্ণ দরপ্রস্তাব অনুমোদনের জন্য গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিএসইসিতে পাঠায় ডিএসই কর্তৃপক্ষ, তা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য একটি কমিটি গঠন করে বিএসইসি। এ প্রস্তাব যাচাই বাছাইকালে বিএসইসির তদন্ত কমিটি শেয়ার ক্রয়চুক্তিসহ প্রস্তাবের বিভিন্ন শর্তের ব্যাখ্যা চেয়ে পাঠায়। কমিটির ব্যাখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ার ক্রয়সংক্রান্ত দরপ্রস্তাবে দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে ১৬টি পুরোপুরি প্রত্যাহার করে সাংহাই ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত চীনের জোট। এ ছাড়া তিন শর্তে পরিবর্তন আনে।

পরিবর্তিত শর্তে চুক্তিটি যুক্তরাজ্যের বদলে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী করতে সংশোধনী প্রস্তাব দেয় চীন জোট। অবশ্য চুক্তির বিষয়ে বিবাদ প্রশ্নে লন্ডনের আন্তর্জাতিক আরবিট্রেশন অনুযায়ী করার পূর্বশর্ত বহাল রয়েছে। এ ছাড়া ডিএসইর ন্যূনতম শেয়ারধারীর সঙ্গে কোনো চুক্তির বিষয়ে স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন সংক্রান্ত ধারা থেকে চীন জোটের অব্যাহতির শর্ত বহাল রয়েছে।

বিএসইসি জানায়, ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী বিষয়ে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সাংহাই ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ সমন্বয়ে গঠিত চীনা জোটের দেওয়া প্রস্তাবে (শেয়ার ক্রয়চুক্তিসহ) সম্মতি দেওয়া সম্ভব নয়। যদিও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রস্তাবে দেশের আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও ডিএসইর সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ পরিপন্থি অধিকাংশ শর্ত চীনা জোট প্রত্যাহার করে নেয়।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, বিএসইসি গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ডিএসইর এ প্রস্তাবটিকে অসম্পূর্ণ ও দেশীয় আইনের সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব শর্ত ডিএসইর অন্য অংশীদারদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করবে। অবশ্য গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর দেওয়া প্রস্তাব যাচাই বাছাই করে এমন অভিমত প্রকাশ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তদন্ত কমিটির ব্যাখ্যার প্রেক্ষিতে চীনা জোটের বিভিন্ন শর্ত প্রত্যাহার ও সংশোধনের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads