রেকর্ড সর্বোচ্চ চালের মজুত গড়েছে বর্তমান সরকার। তবে সেটা কোনো কাজে আসছে না দ্রব্যটির মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে। গত এক সপ্তাহ ধরেই মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় রয়েছে চাল। এতে মানুষকে বাড়তি খরচ করে ভাত খেতে হচ্ছে প্রতিদিন। মজুতের এ সুফল পাননি তারা।
খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ‘খাদ্যশস্যের সরকারি গুদামগুলোতে মোট মজুত ১৫ লাখ ৩৫ হাজার টন। এর মধ্যে চাল ১২ লাখ ৫ হাজার টন এবং বাকিটা গম। খাদ্যশস্যের এ মজুত সর্বোচ্চ ও সন্তোষজনক। যা মাসিক চাহিদা ও বিতরণ পরিকল্পনার তুলনায় পর্যাপ্ত। এ মুহূর্তে খাদ্যশস্যের কোনো ঘাটতি নেই বা ঘাটতির হওয়ার কোনো শঙ্কা নেই।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার খোলা বাজারে চালের মূল্যবৃদ্ধি রোধ ও দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবেলায় চাল মজুত করে। সাধারণত ৭ থেকে ৮ টন চাল সরকারের কাছে মজুত থাকলে সেটা সন্তোষজনক পর্যায় বলা যায়। কিন্তু বর্তমানে মজুত প্রায় দ্বিগুণ। এরপরও চলতি আমনের প্রায় ১০ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহ চলছে, বোরো মৌসুমও আসন্ন। তারপরও সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে এসব চাল বিক্রির কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।
সরকারের কাছে বাড়তি চাল থাকলে তা অতি দরিদ্রদের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কার্যক্রম ‘ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট (ভিজিডি)’, ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি (১০ টাকায় চাল)’ নামের বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেওয়া হয়। তবে এখন এসব কোনো কর্মসূচি চলমান নেই। এমনকি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোলা বাজারে চাল বিক্রি (ওএমএস) কর্মসূচির আওতায় কিছু চাল বিক্রি হচ্ছিল; সেটাও বন্ধ রয়েছে। কারণ প্রতি কেজি ৩০ টাকা দরে এসব মোটা চালে আগ্রহ নেই সাধারণ মানুষের। যদিও কয়েক বছর আগেও এ চাল ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হতো।
এদিকে খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাড়তি মজুত চাল বিক্রির জন্য ওএমএসে প্রতি কেজি চালের দাম ২০ টাকার নিচে নামিয়ে আনতে প্রস্তাব করেছিল তারা। তবে এতে সায় দেয়নি সরকারের সর্বোচ্চ মহল। ফলে কম দামে চাল কিনতে পারছে না দরিদ্ররা।
এ বিষয়ে অধিদপ্তরের পরিচালক আমজাদ হোসেন (সরবরাহ, বণ্টন ও বিপণন বিভাগ) বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ৩০ টাকায় মোটা চাল খেতে চায় না মানুষ। এ কারণে আমরা প্রস্তাব করেছিলাম যে দাম কমিয়ে চাল বিক্রি করে দিতে। তবে সে অনুমতি পাওয়া যায়নি।
দরিদ্রদের জন্য কম দামে চাল কেনার কোনো সুযোগ রয়েছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে এ পরিচালক বলেন, এখন কোনো কর্মসূচি নেই। ওএমএসে শুধু আটা বিক্রি করছি। তবে মার্চ থেকে ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’ চালু হবে। সেটা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মার্চ থেকে। এ বছর ৫ মাসের পরিবর্তে ৭ মাস চলবে এ কর্মসূচি।
ফলে গরিব মানুষের সামনে বাজার থেকে চড়া দরে চাল কিনে খাওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। বাজারে এখন মোটা চালের কেজি ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা। আর বেশি বাড়তি মাঝারি মানের চালের দাম। বাজারে সবচেয়ে জনপ্রিয় মিনিকেট চালের দাম কেজিতে তিন থেকে চার টাকা বেড়েছে গত এক সপ্তাহে। ফলে এ চাল এক কেজি চাল কিনতে লাগছে ৫০ থেকে ৫৪ টাকা।
এমন পরিস্থিতিতে গতকাল (বৃহস্পতিবার) চালের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে চালকল মালিকদের ডেকে বৈঠক করেছে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তবে বৈঠকে প্রতিবারের মতো চালের মোকামে দাম আর বাড়ানো হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন মিলমালিকেরা। যা গত ডিসেম্বরেও শেষ বৈঠকে বলেছিল তারা।
ওই সময় উপস্থিত ছিলেন খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ। তিনি বলেন, ব্যবসায়ী ও মিলমালিকরা জানিয়েছেন বোরো মৌসুম শেষ বলে শুধু মিনিকেট চালের দাম ২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। প্রতি বছরই মৌসুম শেষে সামান্য হেরফের হয়। তবে এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
তিনি বলেন, বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য কিছু ব্যবসায়ী চালের দাম নিয়ে নেতিবাচক কথা বলছে। প্রকৃতপক্ষে মোটা চালের দাম কিন্তু একটুও বাড়েনি। ফলে দরিদ্রদের সমস্যা নেই। আমাদেরও সেটা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। কারণ বর্তমান পরিস্থিতি সহনীয়।
এদিকে গত নভেম্বরেও দেশের বাজারে হঠাৎ চালের দাম বেড়েছিল। সে সময় চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাজার তদারকির জন্য তিনটি কমিটি করেছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছিল। তবে কিছুদিন পরেই সেসব কার্যক্রম গতিহীন হয়ে পড়ে।
সে সময় বাজার তদারক কমিটি ঢাকা মহানগরের বড় বড় পাইকারি বাজার সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল। বাজার পরিদর্শন করে দিনের বাজার দর ও আগের দুদিনের বাজারদর সংগ্রহ করে প্রতিবেদন তৈরি করবে বলে জানিয়েছিল কমিটি। সেটা এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
অন্যদিকে চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে জেলা প্রশাসকদের তদারকি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি খাদ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বাজার তদারকি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল সে সময়। সার্বক্ষণিক খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে বলা হয়েছে তাদের। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সেসব নির্দেশনা ছিল ‘কথার কথা’।