চারশ বছরের পুরনো বটগাছ

চারশ বছরের পুরনো বটগাছ

জীব ও পরিবেশ

চারশ বছরের পুরনো বটগাছ

  • ইমদাদুল হক দুলাল, রূপগঞ্জ
  • প্রকাশিত ৩ অক্টোবর, ২০১৮

কালীগঞ্জের মল্লিকপুরে এশিয়ার বৃহত্তম প্রাচীন বটগাছ আবিষ্কারের পর ইতিহাস-ঐতিহ্য ঘেঁটে নারায়ণগঞ্জে সন্ধান মিলেছে ৪০০ বছরের প্রাচীন এক বটগাছের। ধারণা করা হচ্ছে, জেলার রূপগঞ্জের হিরনালে থাকা বটগাছটি বয়স ও আকার বিবেচনায় হয়তো এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ হবে। এক একর জমিজুড়ে বর্তমানে বটগাছটির অবস্থান। গাছটির বয়স অনেকের মতে, ৪০০ বছর হলেও কেউ কেউ বলছেন, ৫০০ বছরের বেশি। রূপগঞ্জ উপজেলার কুলাদি মৌজায় এ গাছটি ‘হিরনাল বাগবাড়ী বটগাছ’ নামে বিশেষভাবে পরিচিত। পথের ধারে ডাল-পাতায় পরিপূর্ণ গাছটি পথিকের বিশ্রামস্থল। বটগাছটি একের পর এক ঝুরি নামিয়ে বিরাট আকার ধারণ করেছে।

জানা যায়, বটগাছটি যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেই স্থানটির মালিক ছিলেন হজরত আল হাদী (রহ.), যিনি ৩৬০ আউলিয়ার একজন। তিনি ছিলেন মিরপুরের শাহ আলী (রহ.)-এর বড় ভাই। জনশ্রুতি রয়েছে, প্রায় ৫০০ বছর আগে আল হাদী (রহ.) এ এলাকায় বসবাস শুরু করেছিলেন। তার মৃত্যুর পর জায়গাটি খাস হিসেবে সাব্যস্ত হয়। একসময় তিথি অনুযায়ী এখানে পাঁঠা বলি হতো। গাছটির নিচে কালীপূজার জন্য একটি স্থায়ী আসন স্থাপন করা আছে। এখনো মানুষ এখানে মানত করে।

কথিত আছে, তৎকালীন জমিদার রামরতন ব্যানার্জি হাতির শুঁড় দিয়ে বটগাছটি টেনে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। বটগাছটির নিচে এ প্রতিবেদকের কথা হয় স্থানীয় জসিম সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাপ-দাদাগো মুখে হুনতাম এই বটগাছের কথা।’ তার মতে, গাছটির বয়স ৫০০ বছরের বেশি। তবে এই গ্রামের সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তি নাসির ফকিরের মতে, গাছটির বয়স কম করে হলেও সাড়ে ৩০০ বছর হবে। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা মজিবুর রহমান ওরফে ঠান্ডু ফকিরই বেঁচে ছিলেন ১০০ বছর। আমার বাবায় কইতো, দাদায়ও এই গাছটা এমন দেখছে।’ হিরনাল বাগবাড়ী এলাকার পঞ্চাশোর্ধ্ব রাবিয়া বেগম বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেইক্যা এই বটগাছটা দেইহ্যা আইতাছি। অনেক মানুষ এহানে আয়ে। মানত করে। একবার গাছটার মধ্যে আগুন লাগছিল। অনেকখানি পুইড়াও যায়। পরে গ্রামের লোকজনে মিল্যা (মিলে) আগুন নিভায়।’

গাছটির দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাখির কল-কাকলি আর শীতল পরিবেশ যে কাউকে মুগ্ধ করে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বটগাছটির প্রতি কারো কোনো দায়িত্ব নেই, কেউ এর পরিচর্যা করেন না। এলাকাবাসী ও পথচারীর অযত্ন-অবহেলায় বিলীন হতে চলেছে গাছটি। ঐতিহ্যবাহী এই গাছটি সরকারি উদ্যোগে রক্ষা করলে এখানে গড়ে উঠতে পারে পর্যটনকেন্দ্র, যা সমৃদ্ধ করবে দেশের অর্থনীতি।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads