ছবি: সংগৃহীত

আনন্দ বিনোদন

ভারতীয় বাংলা মেগাসিরিয়াল

চরিত্রের অবাস্তবতা ও সামাজিক প্রভাব

  • আল কাছির
  • প্রকাশিত ২৮ এপ্রিল, ২০১৮

প্রতিটি মেগাসিরিয়ালের শুরুটা হয় নাটকীয়ভাবে। আর সকল নির্মাতাই দাবি করেন ভিন্ন গল্পের। ভারতীয় মেগাসিরিয়ালগুলোর প্রথম অবাস্তবতা এটাই। মূলত এগুলো হলো ব্যবসায়িক চমক। প্রতিটি চ্যানেল নতুন বিষয়বস্তুর খোঁজে বের হয় ঠিকই কিন্তু ঘুরে-ফিরে সেই পুরনো বিষয়কেই উপস্থাপন করে। নতুন মোড়কে। বাস্তবের রূপান্তর বলে গল্প শুরু করলেও বিষয় উপস্থাপনের ক্ষেত্রে বাস্তব থেকে হাজার মাইল দূরে অবস্থান করছে সিরিয়ালগুলো।

প্রতিটি সিরিয়ালের গল্প একই। প্রান্তিক ছেলেমেয়েদের জীবন সংগ্রাম, ধনী-দরিদ্রের চিরকালীন দ্বন্দ্ব, সাধারণ মেয়ের অসাধারণ হয়ে ওঠা। সঙ্গে অবশ্যই একটা প্রেম। ঘুরে-ফিরে এগুলোই গল্পের রসদ।

স্টার জলসার বহুল প্রচারিত ধারাবাহিক ‘ইষ্টিকুটুম’, ‘আঁচল’ বা ‘জলনুপুর’-এর কথা বলা যায়। প্রতিটি সিরিয়ালের কেন্দ্রীয় চরিত্রই নারী। এবং তাদের ঠিকানা বাংলার কোনো এক প্রান্তিক গ্রামাঞ্চলে। বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে তাদের শহরের জীবনে প্রবেশ, লড়াই, বিয়ে এবং তাদের সুখ-দুঃখের কাহিনী ছিল এই তিন সিরিয়ালের গল্পে। কাকতালীয়ভাবে তিনটি গল্পের বিষয়বস্তুই এক ঘাটে এসে ভেড়ে।

নাটকীয় উপাদান এবং মোড়

সিরিয়ালগুলোর গল্পে হঠাৎ করে নাটকীয় মোড় তৈরি করা হয়। নাটকীয় উপাদান ও অবস্থার মাধ্যমে এই মোড় সৃষ্টি করা হয়। যাতে দর্শক বাধ্য থাকে সিরিয়ালটির একনিষ্ঠ দর্শক হয়ে থাকতে। বাস্তব জীবনে যে পরিস্থিতির কথা কল্পনা করা যায় না, সে পরিস্থিতি দেখা যায় সিরিয়ালগুলোতে। নিছক দর্শক ধরে রাখার তাগিদে।

‘ইষ্টিকুটুম’ সিরিয়ালের কথা মনে আছে? গল্পে কেন্দ্রীয় পুরুষ চরিত্রটি বাধ্য হয়ে বিয়ে করে সাঁওতাল মেয়েকে। তাকে সামাজিক স্বীকৃতি না দিয়ে কাজের মেয়ে হিসেবে নিজের বাড়িতে এনে তোলে। এবং পূর্ববর্তী বাগদত্তাকে বিয়ে করে। ‘বাহা’ ও ‘কমলিকা’ দর্শকের কাছে দুই সতীন বলে পরিচিতি পায়। সিরিয়ালের পর্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের নতুন সম্পর্ক প্রকাশ পায়। দুই ভিন্ন মায়ের গর্ভে এক পিতার সন্তান হিসেবে পরিচিত হয় তারা। এ আরেক অভাবনীয় নাটকীয় মোড়। বাস্তব জীবনে এমনটা ঘটে না বললে ভুল হবে না। এতটা নাটকীয়তা শুধু পর্দাতেই সম্ভব।

হাস্যকর ষড়যন্ত্রের ঘনঘটা

সিরিয়ালগুলোর জনপ্রিয়তার আরেক উপাদান হলো ষড়যন্ত্র। পর্দায় এ ষড়যন্ত্রকে ঘিরে উত্তেজনা দর্শককে উত্তেজিত করে থাকে। ষড়যন্ত্রের বুনন করতে গিয়ে গল্পকাররা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভিত্তিহীন এবং হাস্যকর পরিস্থিতি তুলে ধরেন। আর গল্পের সৎ-সরল প্রধান চরিত্রই বার বার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়। তার দুঃখ-কান্না-অপমানের পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে দর্শকের পারদও চড়চড় করে চড়তে থাকে। ষড়যন্ত্রের খেলা দেখা যায় বউ-শাশুড়ি, বড় বউ-ছোট বউ, ননদ-ভাবির মধ্যে।

স্টার জলসার ‘বধূবরণ’ বা ‘মিলন তিথি’ যারা দেখেছেন তাদের হয়তো মনে আছে। এক বোনের সংসার উৎখাত করে নিজের সংসার তৈরি বা শুধুমাত্র ঈর্ষার বশবর্তী হয়ে প্রিয় বান্ধবীর সংসার ভাঙার গল্পটি। জি বাংলার জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘রাশি’র কথা বাংলার দর্শক আজো মনে রেখেছে। যে রাশি তার শাশুড়ির রাজনীতির শিকার হয়েছিল।

চিরকালীন ধনী-দরিদ্র দ্বন্দ্ব

সিরিয়াল জগতের অন্যতম উপাদান হলো ধনী-দরিদ্রের দ্বন্দ্ব। সিরিয়াল দুনিয়ার শুরু থেকে আজো এ দ্বন্দ্ব দেখে আসছে বাংলার দর্শক। পাঠক মনে করুন, ‘আঁচল’ সিরিয়ালের কথা। এটি শুরু হয়েছিল প্রান্তিক তাঁতিদের জীবন সংগ্রাম এবং শহুরে দোকান মালিকদের বিবাদের মধ্য দিয়ে। যেখানে নামকরা এক শাড়ি প্রতিষ্ঠানের মালিকের ষড়যন্ত্র এবং অপমানের মুখোমুখি হয় কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘টুসু’। অথচ পরে টুসুর সঙ্গেই প্রেমের সম্পর্ক হয় বড়লোক মালিকের ছেলের। সিরিয়াল জগতের অবাস্তব রূপকথা আমাদের সমাজে ব্যাপকভাবে ছাপ ফেলছে। সিরিয়ালে ঘটতে থাকা অযৌক্তিক ঘটনাগুলো প্রায়ই বাস্তব হয়ে উঠছে।

বলা যায়, বাংলা সিরিয়ালের হাওয়া বদল করতে গেলে প্রথমেই প্রয়োজন নতুন বিষয়বস্তুর। যার সঙ্গে সমাজের মিল থাকবে। বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যাবে। তাহলে ওই সিরিয়াল হবে সমাজের পক্ষে মঙ্গলজনক। সামাজিক অবক্ষয় থেকে তাহলেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads