ঘুরে আসুন সীতাকুণ্ড

ঝরনার সামনে লেখক

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

ঘুরে আসুন সীতাকুণ্ড

  • প্রকাশিত ২৭ অক্টোবর, ২০১৮

কাজী সুলতানুল আরেফিন

মানুষের মন কিছুটা পরিবর্তনের আমেজ চায়। চায় কিছুটা বৈচিত্র্য। ভ্রমণই দূর করতে পারে ক্লান্তি আর অবসাদ। তাই ভ্রমণে বের হলাম। আমি মনেপ্রাণে প্রকৃতিপ্রেমী। যেথায় প্রকৃতির ঘন আঁধার খেলা করে, সেথায় আমার হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে! চট্টগ্রাম অভিমুখে সীতাকুণ্ড বাজার থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণে সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক অবস্থিত। আরো কিছুটা দক্ষিণ-পশ্চিমে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত অবস্থিত। ভ্রমণ ক্লান্তিময় জীবনে নতুন আমেজ তৈরি করে দেয়। যদিও শীতেও অনেকে ভ্রমণে বের হন। কিন্তু শীতের দিনগুলো ছোট, তাই দিনের আলো দ্রুত ফুরিয়ে যায়। আমার মনে হয়েছিল ভ্রমণের তৃপ্তি পুরোপুরি এই অল্প সময়ে অপূর্ণ থেকে যায়। যাহোক, খুব সকালে আমরা ক’জন বন্ধু মিলে বাসে করে যাত্রা করলাম। রাস্তাগুলো এখন দু’লেনের হওয়াতে খুব দ্রুত পৌঁছে যাওয়া যায়। ফেনী থেকে আমরা মাত্র এক ঘণ্টায় সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক পৌঁছে গেলাম। এই পার্কটি ভ্রমণের জন্য একটা কমন জায়গা। ভ্রমণপিপাসু অনেকেই গিয়ে থাকবেন এই স্থানে। আমার উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃতির সমুদ্রে কিছুক্ষণ ডুবে থাকা।

ইকোপার্কে প্রবেশ করতেই জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত একটি সাইনবোর্ড চোখে পড়ল। প্রবেশপথেই বিদ্রোহী কবির ছবি দেখে মনটা ভালো হয়ে গেল। এই পার্কে প্রবেশ পথেই নানা রকমের ফুল ও পাতাবাহার গাছের সৌন্দর্য চোখে পড়ল। সেই সঙ্গে একটি নাগরদোলা। এই স্থানের মূল আকর্ষণ হচ্ছে পার্ক থেকে প্রায় ৩.৫ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের উপরে ঝরনা। ঝরনা আছে দুটি। একটি বড় ঝরনা। অন্যটি ছোট ঝরনা নামে পরিচিত। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা আর খাড়া পথ বেয়ে হেঁটে ওঠা খুব কষ্টসাধ্য। তাই পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়া অনেকেই হেঁটে ঝরনা দেখতে রওনা দিলেও মাঝপথে গিয়ে হাঁপিয়ে যান। কেউ কেউ আবার অসুস্থ হয়েও পড়তে পারেন। তাই পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে হেঁটে রওনা দেওয়া উচিত। যদি বাড়তি সময় নিয়ে যাওয়া যায়, তবে হেঁটেই যাওয়া উচিত। কারণ এতে সরাসরি প্রকৃতির ছোঁয়া পাওয়া যায়। অবশ্য একটা সিন্ডিকেট বেশি ভাড়ায় সিএনজি করে যাওয়ার ব্যবস্থা করে রেখেছে। সিএনজি চালকরা সুযোগ বুঝে ২৫০-৩০০ টাকা হাঁকায়। এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত। শিশু, বৃদ্ধ বা যারা হেঁটে এই পথ পাড়ি দিতে অক্ষম, তাদের জন্য স্বল্প ভাড়ায় এখানে যানের ব্যবস্থা করা উচিত! আমরা হেঁটে হেঁটে উঁচু পাহাড়ি পথ বেয়ে চলতে লাগলাম। পাহাড়ের কোলে ঝোপঝাড় দেখে মুগ্ধ হচ্ছিলাম। যেতে যেতে একটি র‍্যাব ক্যাম্প চোখে পড়ল। প্রায় এক ঘণ্টা পরে পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছলাম। বেশ ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। একটু জিরিয়ে নিতে হবে। সঙ্গে কিছু পানীয় পান করে সতেজ হতে হবে। কারণ এই চূড়া থেকে ঝরনা দেখতে হলে সিঁড়ি বেয়ে প্রায় ৩০০ ফুট নিচে নেমে যেতে হবে। যা অনেকটা গিরিখাদের মতো। বিশ্রাম নিয়ে না নামলে শরীর বিদ্রোহ করে বসতে পারে। শরীর নতুন শক্তি পেতেই নেমে গেলাম সিঁড়ি বেয়ে, তবে খুব সাবধানে। অবশেষে আরো ২০ মিনিট পরে পাহাড়ের কান্না দেখতে পেলাম। অনেক উপর থেকে পাহাড়ের দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। কেউ কেউ সে অশ্রুতে স্নান করতে লাগলেন। মনপ্রাণ জুড়িয়ে গেল। ঝরনার কোলে কিছুক্ষণ বাদে অতিবাহিত করে খুব খাড়া আর উঁচু সিঁড়ি ভেঙে ফিরে এলাম। এই সিঁড়িতে খুব সাবধানের সঙ্গে পা ফেলতে হবে। অনেকেই মাঝে মাঝে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়তে লাগলেন। অনেকেই আবার সিঁড়ি গুনতে গুনতে উঠতে লাগলেন। উপরে এসে পা আর চলল না! তাই অগত্যা সিএনজি ধরে মূল ফটকে ফিরে এলাম। ফটকে দুপুরের খাবার সেরে আবারো বাসে চড়ে বসলাম বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রের উদ্দেশে। বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত কাছেই। মিনিট বিশেক পরে পৌঁছে গেলাম। মূল সড়ক থেকে সরু রাস্তা চলে গেছে পশ্চিম-দক্ষিণ দিকে। এই রাস্তা এত সরু যে দুটো গাড়ি মুখোমুখি হলেই সমস্যা দেখা দেয়। এই সৈকত দেখে নয়ন জুড়াল। এই বিচের দৈর্ঘ্য পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের সমান বা একটু বড় হতে পারে। আছে সারি সারি ঝাউ বাগান। শুধু আর কয়েকটি দোকানপাট গড়ে উঠলে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে আসবে। সমুদ্রে লাল সূর্যের বিদায় নেওয়া দেখে আমরাও বিদায় নিলাম। নীড়ে ফিরতে শুরু করলাম। যারা প্রকৃতির সমুদ্রে ডুবে যেতে চান তারা সীতাকুণ্ড যেতে পারেন।        

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads