সৈয়দ মিজান
টিএসসি, চারুকলা, ডাস, রাজু ভাস্কর্য, মল চত্বর, জগন্নাথ হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেখানেই কোনো সাংস্কৃতিক আয়োজন হোক, ক্যাম্পাসের ব্যান্ড হিসেবে প্রথমেই ডাক পড়ে কৃষ্ণপক্ষ ব্যান্ডের। এই ব্যান্ডের মুখগুলো ক্যাম্পাসে সবার কাছেই পরিচিত এবং প্রিয়। গানের দল হিসেবে কৃষ্ণপক্ষের বেড়ে ওঠার পেছনে যে কয়জনের অবদান রয়েছে, তাদের মধ্যে ইয়াসির আরাফাত রুবেল একজন। পড়ছেন নাট্যকলা বিভাগের শেষ বর্ষে। গানকে ভালোবেসেছিলেন সেই ছোটবেলায়। পথচলার শুরুটা মসৃণ ছিল না। পরিবার থেকে গান শিখতে দেওয়া হয়নি। এই কষ্টটা বুকে চেপে রুবেল পণ করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে গান করবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে সঙ্গীতে ভর্তি হতে চেয়েছিলেন রুবেল। কিন্তু এক বড়ভাইয়ের পরামর্শে নাট্যকলাকেই বেছে নিলেন। কেননা এখানে নাটকের পাশাপাশি গানচর্চারও সুযোগ আছে। সেই থেকে গানকে আঁকড়ে ধরলেন সত্যিকার অর্থে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল প্রাঙ্গণে খুঁজে পেলেন বিশাল একটি পরিবার, যাদের সঙ্গে প্রাণ খুলে গাওয়া যায়। প্রতিদিন বিকাল থেকে সন্ধ্যা টিএসসির বারান্দা, কারাসের চায়ের আড্ডায় গান গাইতে গাইতে একটি গানের দল করার প্রয়োজন অনুভব করেন। সমমনা কয়েকজন তৈরিই ছিল, তাদের নিয়ে গড়ে তুললেন কৃষ্ণপক্ষ ব্যান্ড। নানা ঝড়-ঝাপ্টা এসেছিল। দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে গেছেন সেসব। প্রায় দুই বছর পাড়ি দিয়ে ফেলেছে ব্যান্ডটি। এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় একশ’র মতো কনসার্টে অংশ নিয়েছেন। বিভিন্ন টিভি আর রেডিও চ্যানেলে ডাক পান নিয়মিত। গান নিয়ে ছুটে গেছেন ওপার বাংলাতেও। মুগ্ধতা ছড়িয়ে এসেছেন কাঁটাতারের ওপারেও।
একটা সময় বাড়ি থেকে গান শিখতে না দিলেও নিজের ইচ্ছাশক্তির জোরে খুব দ্রুত সময়ে রপ্ত করেছেন সঙ্গীতের নানা পাঠ। এখনো শিখছেন। লিখছেনও নিয়মিত। জানালেন, নিজের লেখা গানগুলো যখন সুর হয়ে মানুষের কানে পৌঁছায় এর চেয়ে বড় তৃপ্তির কোনো অনুভূতি আর কোথাও পান না। নিজের অন্তরের ব্যথা, হাসি সব গান হয়ে নিজের সামনে শ্রোতাদের মাঝে ছড়াচ্ছে, এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে! কৃষ্ণপক্ষ ব্যান্ডের বেশকিছু নিজস্ব গান রয়েছে, যার প্রায় সবই রুবেলের লেখা। তার লেখা ভাঙা সাইকেল, কেয়াফুল, রসের বন্ধু, অবনী, লালবাস গানগুলো শিক্ষার্থীদের মুখে মুখে ফেরে। নিজের গান নিয়ে তার স্বপ্ন অনেক বড়। দেশ এবং দেশের বাইরে ছড়িয়ে দিতে চান কৃষ্ণপক্ষের গানকে। সবকিছুর ঊর্ধ্বে নিজেকে একজন শিল্পী ভাবতেই পছন্দ করেন চুয়াডাঙ্গা থেকে পড়তে আসা এই শিক্ষার্থী । পছন্দের বাদ্যযন্ত্র ইউকেলেলের নাম রেখেছেন ‘মৃন্ময়ী’। একে কাঁধে নিয়েই ঘুরে বেড়ান ক্যাম্পাসের সবুজ প্রাঙ্গণে সুরের মায়া ছড়াতে ছড়াতে।