গর্ভকালীন সময়ে মেনে চলুন কয়টি বিষয়

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

গর্ভকালীন সময়ে মেনে চলুন কয়টি বিষয়

  • প্রকাশিত ১৮ নভেম্বর, ২০১৮

ফারজানা বীথি

১. ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ ও তার পরামর্শ মেনে চলুন

গর্ভাবস্থায় সবচেয়ে জরুরি একটি বিষয়, ডাক্তারের নিয়মিত চেকাপে থাকা। অনাগত সন্তানের জন্য তার সুস্বাস্থ্যের জন্য জন্মপূর্ব যত্নের বিষয়ে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। প্রথম থেকেই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চললে মা ও শিশর পক্ষে গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকা সম্ভব হবে।

২. খাবারের ব্যাপারে সচেতন হোন

গর্ভাবস্থায় মায়ের খাদ্যাভ্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুস্থ থাকার জন্য এ সময় স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্য খাওয়া উচিত। খাদ্য তালিকায় তাই সব খাদ্য উপাদানের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। প্রচুর শর্করা জাতীয়, ফাইবার এবং ভিটামিন ও মিনারেলস্ গ্রহণ করতে হবে। একবারের বেশি না খেয়ে বার বার অল্প করে খাবার গ্রহণ করুন। গর্ভবতীর খাদ্যে মাছ, চর্বিহীন মাংস, ডাল, ডিম, বাদাম এবং দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাবার থাকা প্রয়োজন। এ ছাড়া মাছ প্রোটিন, ভিটামিন ডি, খনিজ এবং ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ। ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড গর্ভজাত সন্তানের নার্ভাস সিস্টেম বা স্নায়ুতন্ত্রের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৩. প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন

প্রেগন্যান্সিতে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণে অনেকেই অনাগ্রহ দেখায়। তবে আপনি যদি ঠিকমতো খেতে না পারেন বা অনেক বেশি অসুস্থ থাকেন, তাহলে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট শরীরে খাদ্যের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করতে পারে। আপনার সাপ্লিমেন্টে ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড আছে কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন। প্রেগন্যান্সির প্রথম তিন মাসে এটি মায়ের জন্য প্রয়োজন। ফলিক অ্যাসিড গর্ভস্থ শিশুর নিউরাল টিউবের ত্রুটি যেমন- স্পিনা বিফিডা হওয়ার ঝুঁকি কমায়। এ ছাড়াও সাপ্লিমেন্টে ১০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি থাকা উচিত। যদি আপনি মাল্টিভিটামিন গ্রহণ না করেন, তাহলে আলাদাভাবে ফলিক অ্যাসিড ও ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন। তবে সব সাপ্লিমেন্ট ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করা উচিত।

৪. কিছু খাবার গ্রহণ বিষয়ে সচেতন হোন

গর্ভাবস্থায় কিছু খাবার আছে, যা খাওয়া নিরাপদ নয়। কারণ এই খাবারগুলো শিশু স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। লিস্টেরিওসিস এক ধরনের সংক্রামক ব্যাধি, যা লিস্টেরিয়া ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা হয়ে থাকে। এটি একটি বিরল রোগ এবং সাধারণত এটি আপনার স্বাস্থ্যের ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলে না। কিন্তু এটি গর্ভাবস্থায় জন্মগত জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। লিস্টেরিওসিসের কারণে গর্ভপাতও হতে পারে। কিছু কিছু খাবার লিস্টেরিয়া পোষণ করে, তাই গর্ভাবস্থায় এদের এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। যেমন- যেকোনো ধরনের মগজ, অপাস্তুরিত দুধ, নরম ও চিতি পড়া পনির ইত্যাদি। এ ছাড়া সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া ফুড পয়জনিং সৃষ্টি করতে পারে। কাঁচা বা অসিদ্ধ মাংস, কাঁচা ডিম, কাঁচা খোলসযুক্ত মাছে সালমোনেলা থাকে। তাই খাবার সবসময় উচ্চমাত্রার তাপে রান্না করে খাওয়া প্রয়োজন।

৫. নিয়মিত ব্যায়াম করুন

হবু মায়েদের নিয়মিত ব্যায়াম করা জরুরি। ব্যায়াম গর্ভবতীকে প্রেগন্যান্সির সময়ে শরীরের অতিরিক্ত ওজন বহন করা এবং প্রসবের শ্রম সহ্য করার ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য। বিষণ্নতা কাটিয়ে প্রফুল্ল থাকতে সাহায্য করে। প্রসবের পর দেহের আকৃতি পুনরায় পূর্বের অবস্থায় ফিরে পেতে সাহায্য করে।

৬. বদঅভ্যাস ত্যাগ করুন

গর্ভাবস্থায় অ্যালকোহল গ্রহণ খুব সহজেই প্লাসেন্টা বা নাড়ি ও রক্তস্রোতের মাধ্যমে শিশুর শরীরে পৌঁছাতে পারে। এর ফলে শিশুর জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে এবং মিসক্যারেজও হতে পারে। অন্যদিকে প্রেগন্যান্সির সময়ে ধূমপানের অভ্যাসের কারণে মিসক্যারেজ হওয়া, কম ওজনের শিশু জন্মগ্রহণ, প্রিম্যাচিউর বার্থ, গর্ভের শিশুর মৃত্যু বা জন্মের সময় শিশুর মৃত্যুও হতে পারে।

৭. ক্যাফেইন গ্রহণের মাত্রা কমান

চা, কফি, কোলা এবং এনার্জি ড্রিঙ্ক মধ্যম মানের উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। অনেক বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ করলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়াও অনেক বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ করলে কম ওজনের শিশু জন্মগ্রহণ করে।

৮. বিশ্রাম

গর্ভাবস্থার প্রথম কয়েক মাসে হবু মা বেশ ক্লান্তি অনুভব করেন, এটি হয়ে থাকে উচ্চমাত্রার প্রেগন্যান্সি হরমোনের কারণে। যদি রাতে ভালো ঘুম না হয়, তাহলে দিনের মাঝামাঝি সময়ে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিন। এটা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে আপনার পা দুটো একটু উঁচু স্থানে রেখে আধাঘণ্টা বিশ্রাম নিন। যদি পিঠের ব্যথার কারণে আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, তাহলে বাম কাত হয়ে ও হাঁটু বাঁকা করে শোয়ার চেষ্টা করুন এবং কোমরের কাছে একটি বালিশ বা কুশন দিয়ে রাখুন।

৯. যেসব সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন

প্রথমবার মা হওয়ার সময় কোন লক্ষণটি স্বাভাবিক আর কোন লক্ষণটি স্বাভাবিক নয়, এটা বোঝা মুশকিল হয়। যে লক্ষণগুলো দেখলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন যেমন- যেকোনো ধরনের ব্যথা অনুভব করলে, খিঁচুনি এলে, রক্তপাত হলে বা তরল নিঃসৃত হলে, মাথা ঘোরালে বা অজ্ঞান হয়ে গেলে, শ্বাসকষ্ট হলে, হূদস্পন্দন বেশি হলে বা বুক ধড়ফড় করলে, ঘন ঘন বমি বমি ভাব থাকলে বা বমি হলে, হাঁটতে অসুবিধা হলে, জয়েন্ট ফুলে গেলে, শিশুর নড়াচড়া অনুভব না করলে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads