গণহারে কর্মী-সমর্থকদের পুলিশি হয়রানির অভিযোগ বিএনপির

গণহারে গ্রেফতার

প্রতীকী ছবি

রাজনীতি

গণহারে কর্মী-সমর্থকদের পুলিশি হয়রানির অভিযোগ বিএনপির

সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব : মোখলেসুর রহমান

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পাইকারি গ্রেফতার ও হয়রানি নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ বিএনপিসহ বিরোধী দলের। অভিযোগ উঠেছে, এক যুগ ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা বিএনপি কর্মী-সমর্থকদেরও গ্রেফতার করছে পুলিশ। অবস্থার সুযোগ নেওয়ার অভিযোগ আছে খোদ রাজধানী ঢাকাসহ বেশ কিছু থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। এ সুযোগকে ‘বাণিজ্য’ হিসেবে চালাচ্ছে তারা। 

রাজধানীর বংশাল থানা এর মধ্যে অন্যতম। ওসির নেতৃত্বে থানার পুলিশ কর্মকর্তারা বেপরোয়া। বিএনপি সমর্থক ধরে নগদ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিচ্ছে। অভিযোগ আছে, টাকা নিয়ে লোক ছাড়ার কথা বলে পুলিশ লোক না ছেড়ে টাকা আত্মসাৎ করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ গত মঙ্গলবার রাতে কেরানীগঞ্জের কালিন্দী গ্রামের ব্যবসায়ী আকুকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। এ ব্যবসায়ীকে কেন গ্রেফতার করা হয়েছে জানতে চাইলে ওসি মো. জুবায়ের বলেন, ‘ওপরের নির্দেশ, কিছুই করার নেই।’ বংশাল থানায় বাড়ি মো. মমিন হোসেনের। পেশায় তিনি সাংবাদিক। এক প্রায় দেড় যুগ আগে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার দায়ে তাকে খুঁজছে পুলিশ। হয়রানি এড়াতে মমিন রাতে বাসায় থাকছেন না। প্রতিদিন পুলিশ তার বাসায় যাচ্ছে। এতে পরিবারের অন্য সদস্যরা আতঙ্কিত। জানতে চাইলে বংশাল থানার ওসি সাইদুর রহমান বলেন, ‘ভাই কিছু করার নেই। নির্বাচন পর্যন্ত উনাকে যেন এলাকায় না দেখা যায়। নির্বাচনের পরে সব ঠিক হয়ে যাবে।’

এছাড়া রাজধানীসহ সারা দেশের থানায় একই অবস্থা। অপরাধ কিংবা মামলা নয়, কোনো ব্যক্তি বিএনপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কি না, আগে ছিল কি না, তা দেখে কাজ করছে পুলিশ। আটকের পরপর শুরু হয় মুক্তিপণ নিয়ে দরকষাকষি। ছাড়া পাওয়া ব্যক্তিরা বলেছেন, ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় ছাড়া পাওয়ার টিকেট মিলছে। দরকষাকষির সময় পুলিশের বড় হুমকি- দ্রুত বিচার আইনে মামলার। দ্বিতীয় হুমকি- পুরনো মামলায় জড়িয়ে রিমান্ডে নেওয়া। এই দুই হুমকি বেশ কার্যকরভাবে পুলিশ ব্যবহার করেছে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন মুঠোফোনে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, এটা তো পুলিশ এবং সরকারের জন্য ড্যামেজিং। কিছু পুলিশ বাড়াবাড়ি করছে, এটা তাদের কর্তৃপক্ষের দেখা উচিত।

মামলার ভয় দেখিয়ে নিরপরাধ মানুষকে আটক এবং নগদ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ বিভিন্ন জেলা থেকে পাওয়া গেলেও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা তা স্বীকার করতে নারাজ। পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (প্রশাসন) মোখলেসুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, এরূপ কোনো অভিযোগ কেউ করেনি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গেই ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, কাউকে আটক করার পর সে যদি দোষী না হয় তাহলে ছেড়ে দেওয়া হয়। টাকা নিয়ে ছাড়ার অভিযোগ ও মামলার ভয় দেখিয়ে সমঝোতার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।

সাবেক আইজিপি মো. মোদাব্বির হোসেন চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, পুলিশ তুলনামূলকভাবে অনেক অগ্রসরমান একটি বাহিনী। পুলিশ সম্পর্কে জনমনে নেতিবাচক ধারণা কাটছে। কিন্তু কিছু কিছু কর্মকর্তার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলে বাহিনীর সাফল্য ম্লান হচ্ছে। এটা সংশ্লিষ্ট পদস্থ কর্মকর্তাদেরই দেখা উচিত। তিনি বলেন, পুলিশের কাছে বিএনপি, আওয়ামী লীগ বলে কোনো কিছু থাকা উচিত নয়। পুলিশের কাজ হচ্ছে অপরাধ যেই করুক তার বিরুদ্ধে আইনের ব্যবস্থা নেওয়া। ক্ষমতাসীন সরকারও বলবে না আওয়ামী লীগের কেউ অপরাধ করলে তাকে ছেড়ে দিতে হবে বা কেউ বিএনপি করেছে বলে তাকে গ্রেফতার করতে হবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads