খাশোগি ইস্যু : হিসাব-নিকাশে ভুল করে ফেলেছিলেন যুবরাজ

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান

সংগৃহীত ছবি

মধ্যপ্রাচ্য

খাশোগি ইস্যু : হিসাব-নিকাশে ভুল করে ফেলেছিলেন যুবরাজ

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২১ অক্টোবর, ২০১৮

সাংবাদিক জামাল খাশোগি ইস্যুতে হিসাব-নিকাশে ভুল করে ফেলেছিলেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। খাশোগির নিখোঁজ ঘটনা বিশ্বব্যাপী এতটা আলোচিত হবে এমনটা ভাবেননি তিনি। এ কারণে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তিনি খুন হয়েছেন বলে তুরস্ক অভিযোগ করলেও সৌদি আরব বরাবরই কোনো কিছু জানে না বলে দাবি করে আসছে। কিন্তু চতুর্মুখী চাপের মধ্যে অবশেষে স্বীকার করতে বাধ্য হন ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটেই ওই সাংবাদিক খুন হন। খবর বিবিসি, সিএনএন ও আলজাজিরা।

সৌদির বহুদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়টি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়ায় আসরে নামেন বাদশাহ সালমান। ঘটনাটি যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তখন সৌদি যুবরাজ বাদশাহকে জানান, একটি সমস্যা হয়েছে এবং তা মোকাবেলা করতে হবে। এর আগে যুবরাজ ও তার সহযোগীরা প্রাথমিকভাবে ধরে নিয়েছিলেন বিষয়টি নিয়ে কয়েক দিন আলোচনা চললেও ধীরে ধীরে সমস্যা কেটে যাবে। কিন্তু এর পরিণতি এত ভয়াবহ হতে পারে তা তারা ভাবতেই পারেননি।

বাদশাহর হস্তক্ষেপের আগ পর্যন্ত আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বলে যাচ্ছিল সৌদি কর্তৃপক্ষ। উল্টো হুমকির সুরে তারা বলছিল, খাশোগি নিখোঁজের জেরে কেউ যদি এই দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তাহলে এর পাল্টা জবাব দেওয়া হবে। এতে তেল সরবরাহে বিঘ³সহ বিশ্ববাজারে দামও এক লাফে বেড়ে যেতে পারে বলে হুশিয়ারি দেওয়া হচ্ছিল সৌদির সরকারি পত্রিকায়।

খাশোগির হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে হয়তো সৌদি যুবরাজ নিজেই নিজের ভবিষ্যৎ শাসক হওয়ার পথ রুদ্ধ করে দিলেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র তরে বাদশাহ সালমানকে এখন পুনরায় ভাবতে হচ্ছে তার ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমান আদৌ শাসক হওয়ার যোগ্য কি না। যদিও সঙ্কট সামলাতে ইতোমধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। বিষয়টি তদন্ত করতে গত ১১ অক্টোবর তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও ব্যক্তিগত উপদেষ্টা প্রিন্স খালেদ আল-ফয়সালকে ইস্তাম্বুলে পাঠান।

খালেদের সফরকালে খাশোগির বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে তুরস্কের সঙ্গে একটি যৌথ টিম গঠনে একমত হয় সৌদি। এছাড়া বাদশাহ টেলিফোনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেন। এরপর থেকেই বাদশাহ নিজেই বিষয়টি তদারকি করেন। তার আসরে মাঠে নামার পরই খাশোগি যে আর বেঁচে নেই সে বিষয়টি নিশ্চিত হলো বিশ্ববাসী- এমনটিই বলছেন সৌদি রাজপরিবারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

তাদের মতে, এ বিষয়ে বাদশাহ কোনোভাবেই জড়িত নন। তার এসব নিয়ে মাথা ঘামানোরও দরকার নেই। তিনি ছেলে মোহাম্মদকেই সবকিছু দেখাশোনার ভার দিয়ে দিয়েছিলেন। খাশোগিকে নিয়ে যে সঙ্কট সৃষ্টি হয় সে বিষয়টিও তার জানা ছিল না বললেই চলে। কারণ যুবরাজের সহযোগীরা বাদশাহকে কেবল দেশের গৌরবোজ্জ্বল সংবাদগুলোই সব সময় দেখিয়ে এসেছেন। কিন্তু সাংবাদিকের ঘটনাটি বহুদূর গড়ানোয় তা আর লুকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি।

গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে ঢোকার পর থেকে খাশোগিকে আর দেখা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে সব আরব এবং সৌদি টিভি চ্যানেলেই সে খবর আসে। আর তখনই বাদশাহ সব জানতে পারেন। এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী তোলপাড় শুরু হলে যুবরাজ সঙ্কট সামাল দিতে বাদশাহকে অনুরোধ জানান।

যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে ভবিষ্যৎ শাসক হিসেবে ঘোষণার পর থেকেই তার হাতে বিপুল ক্ষমতা দিয়েছিলেন বাদশাহ। কিন্তু খাশোগি ইস্যুতে তার শাসন করার যোগ্যতা নিয়ে দেশে-বিদেশে অনেকের মনেই প্রশ² উঠেছে। রাজপরিবারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাদশাহর কাছে তার সন্তান যতই প্রিয় হোক না কেন, এখন তাকে শুধু বাঁচানো নয় বরং সামগ্রিকভাবে নিজের এবং রাজপরিবারের অস্তিত্ব রক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads