ক্যাসিয়া রেনিজেরা, কৃষ্ণচূড়ার রঙে মনোমুগ্ধকর জাবি ক্যাম্পাস

ছবি : শাহিনুর রহমান শাহিন

ফিচার

ক্যাসিয়া রেনিজেরা, কৃষ্ণচূড়ার রঙে মনোমুগ্ধকর জাবি ক্যাম্পাস

  • শাহিনুর রহমান শাহিন, জাবি
  • প্রকাশিত ১২ মে, ২০১৯

বৈশাখের তপ্ত সূর্য ও কাঠফাটা রোদ। চারদিকে ভ্যাপসা গরম। প্রকৃতি যখন প্রখর রোদে পুড়ছে তখনি দু;চোখে প্রশান্তির ডালি সেঁজে বসেছে বাহারি রঙের ক্যাসিয়া রেনিজেরা ও লাল কৃষ্ণচূড়া ফুল। জানান দিচ্ছে অপরুপ সৌন্দর্যের। গ্রীষ্মের রুক্ষতা ছাপিয়ে কৃষ্ণচূড়া নিজেকে মেলে ধরেছে আপন মহিমায়। আর দৃষ্টিনন্দন ফুল পল্লবে দুচোখ জুড়িয়ে দিচ্ছে ক্যাসিয়া রেনিজেরা। এই সময়টায় সারা দেশের মতোই সবুজের সমারোহে সেঁজেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। চোখ ধাঁধানো টুকটুকে লাল কৃষ্ণচূড়া ও বাহারি রঙের ক্যাসিয়া রেনিজেরার ফুলে সেঁজেছে ক্যাম্পাসের চারদিক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রবেশ গেট দিয়ে এক পা দু’পা করে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, অমর একুশে ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অতিক্রম করলেই ক্যাসিয়া রেনিজেরার অপরূপ সৌন্দর্যের ফুল পথচারীদের থামিয়ে দিয়ে বলছে ‘দাঁড়াও পথিক একটু দেখে যাও।’

এ ভিনদেশী ফুল ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে একটু বেশি মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে। আদি নিবাস জাপানে হলেও ক্যাসিয়া রেনিজেরা এখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর স্নিগ্ধ রূপ ও রং বৈচিত্র্য থেকে চোখ সরানো মোটেও সহজ নয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম (Burmese Pink Cassia) মধ্যম আকারের বৃক্ষ। এই ফুল বৃত্তের উচ্চতা ৮-১০ মিটার লম্বা। চিকন ঝুলানো ডাল। ৪-৫ বছরের মধ্যে বৃক্ষে নয়ানিভিরাম শ্বেতশুভ্র গোলাপি ফুল আসে। আর এই বৃক্ষটি আমাদের সহজাত বৃক্ষ নয়, যেহেতু এটি তুলনামলূক কম পরিচিত। বর্ষা ছাড়া মোটামুটি বছরের বেশিরভাগ সময়ই বৃক্ষটি পত্রহীন অবস্থায় থাকে।
ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ করলেই দূর থেকে রক্তিম পুষ্পরাজি চোখে পড়বে পথচারীদের। পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে রঙিন কৃষ্ণচূড়ার ছড়াছড়ি। সবুজ পাতার মাঝে যেন আগুনের ফুলকি ছড়াচ্ছে। শাখে আগুন ঝরাচ্ছে আকাশ, কাঠফাটা রোদে তপ্ত বাতাস। প্রাণ ও প্রকৃতি যখন প্রখর রোদে পুড়ছে, কৃষ্ণচূড়া ফুল তখন হৃদয়ে প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে ডাকছে। গ্রীষ্মের প্রখর তাপদাহ ছাপিয়ে ক্যাম্পাসের সবুজ প্রকৃতিতে কৃষ্ণচূড়া নিজেকে মেলে ধরেছে আপন সৌন্দর্যে। চোখ কিছুতেই সরবে না। যেন রক্ত লাল রঙে হাজারও কৃষ্ণচূড়া পসরা সাজিয়ে বসে আছে প্রকৃতিতে। প্রাণে আসে নতুন উদ্যম। যে কারও চোখে এনে দেবে শিল্পের দ্যোতনা, অবাক চোখে তাকিয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করবে সবাই। মন রঙিন হয়ে যাবে কৃষ্ণচূড়ার রঙে। যেন মনের অজান্তেই স্বভাব কবি হয়ে যায় যে কেউ!

৭০০ একর বিস্তৃত ক্যাম্পাসটির বিভিন্ন অনুষদ ও আবাসিক হলের সামনে নয়নাভিরাম ফুলগাছগুলোর দেখা মেলে। ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবন, কলা ও মানবিকী অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, পুরাতন কলা ভবন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, প্রীতিলতা হল, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের সামনে এবং জাহাঙ্গীরনগর স্কুল এন্ড কলেজের রাস্তাজুড়ে ফুটেছে গ্রীষ্মের রঙে রাঙা কৃষ্ণচূড়া ফুল।
লাল ইটের সারি সারি দালানকোঠার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিয়েছে আগুনঝরা কৃষ্ণচূড়ার রুপ। কখনো লাল, কখনো হলুদ আবার কখনো মিশেল। নজরকাড়া ফুলের বর্ণিল রঙের সাজে সেজেছে নির্মল জাবি ক্যাম্পাস। গরমে অতিষ্ঠ ক্যাম্পাসবাসীকে এনে দিয়েছে একমুঠো স্বস্তি।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, 'গন্ধে উদাস হওয়ার মতো উড়ে/তোমার উত্তরী কর্ণে তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জুরী'।

খরতাপ রোদে কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ সৌন্দর্য প্রকৃতির সাজ সাজ রব আমাদের এক অপার প্রাপ্তির কথা বলে। মনে এক অনাবিল সুখ এনে দেয়। এভাবেই বাহারি ক্যাসিয়া রেনিজেরা ও রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া এবং সোনালু ফুল শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের মনকে আলোড়িত করছে। শহুরে জীবনের রুক্ষতা, যানজট, ভ্যাপসা গরম আর ধুলোবালির বাইরে ক্যাম্পাসের এ কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে এক প্রশান্তির নিশ্বাস নেয়া যায়, কিছুক্ষণের জন্য হলেও মন হারিয়ে যায় প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads