ফরম্যাট যত ছোট, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ততটাই ভয়ঙ্কর। এমন কথা ওয়ানডে সিরিজের আগে বলেছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। বাস্তবেই তাই। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিবীয়রা বেশ ভয়ঙ্কর। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ হারের তিক্ত জ্বালা। ফলে ২০ ওভারের ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কতটা মরিয়া হতে পারে, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে। যেখানে এক অর্থে উড়েই গেছে বাংলাদেশ। ক্যারিবীয় শিবির জয় তুলে নিয়েছে প্রবল দাপটে, ৮ উইকেটে। ব্যাটিং কিংবা বোলিং, কোনো ভার্সনেই নিজেদের কাজটি সুচারুভাবে করতে পারেনি সাকিব ব্রিগেড।
মিরপুরে আগামীকাল দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। একই ভেন্যুতে ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি। প্রথম ম্যাচে বাজে হারের পর রীতিমতো শঙ্কার বাতাস মিরপুরে। সিরিজ রক্ষা করতে পারবে তো বাংলাদেশ। মানে সিরিজের ট্রফি ঘরে রাখতে বাকি দুটি ম্যাচে জয়ের বিকল্প নেই সাকিবদের। একটি হার মানেই সিরিজ খোয়া। ক্যারিবীয় শিবির টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ হারলেও প্রথম টি-টোয়েন্টির জয় দলকে চাঙ্গা করেছে পুরোদমে। সেই ছন্দে বাকি দুটি ম্যাচও নিজেদের করে নিতে চাইবে তারা, এটা সহজেই অনুমেয়।
এখন কথা হলো, মিরপুরে কতটা কামব্যাক করতে পারে বাংলাদেশ? এই ভেন্যু টাইগারদের হাতের তালুর মতো চেনা। পরিচিত আবহের সঙ্গে থাকবে হাজার হাজার দর্শকের সমর্থন। আর সিরিজে ফেরার প্রবল আকাঙ্ক্ষা তো থাকছেই। তবে প্রথম ম্যাচের অভিজ্ঞতা যা বলে, তা হলো ক্যারিবীয়দের থামাতে বড় স্কোরের বিকল্প নেই। প্রথম টি-টোয়েন্টি হারের পর সে কথা অকপটে বলেছেন অধিনায়ক সাকিব। নির্দ্বিধায় কাঠগড়ায় তুলেছেন ব্যাটসম্যানদেরও। কারণ সাকিবের ৬৩ রান ছাড়া টপ অর্ডারের কেউ টপকাতে পারেননি দুই অঙ্কের রানই। তামিম, লিটন, মুশফিক, সৌম্য- যাদের ব্যাটে আশা ছিল বিগ স্কোরের, তারাই ব্যর্থ। ফলে সিরিজে ফিরতে হলে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের রানের বিকল্প নেই।
মিরপুরে দুই ম্যাচের আগে টাইগার শিবির প্রেরণা পেতে পারে ক্যারিবীয়দের কাছ থেকেই। গত জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে হেরেও সিরিজ জিতেছিল সাকিবরা ২-১ ব্যবধানে। মানে প্রথম ম্যাচে হার, পরের দুটি ম্যাচে টানা জয়। সেই স্মৃতি ঘুরেফিরে মিরপুরে আসুক, তা কায়মনে চাচ্ছে সবাই।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের পরিসংখ্যানে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম টি-টোয়েন্টির আগেও ছিল সমানে সমান। নয়বারের মোকাবেলায় দুই দলের জয়ই ৪টি করে। হারও ৪টি। একটি ম্যাচে রেজাল্ট হয়নি। তবে এখন ১০ বারের মোকাবেলায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয় ৫টি, বাংলাদেশের ৪টি। মজার বিষয় হলো, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের লড়াইয়েই বাংলাদেশ জিতেছিল ৬ উইকেটের ব্যবধানে, ২০০৭ সালে বিশ্বকাপে, জোহানেসবার্গে। এরপর কখনো হার, কখনো জয়। তার মানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে এই ফরম্যাটে পরিসংখ্যানগত দিক থেকে খুব বেশি পার্থক্য নেই বাংলাদেশের। জুলাইয়ের সিরিজ তো বাংলাদেশের জন্য আত্মবিশ্বাসের উৎস। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রথম ম্যাচে ৭ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। যদিও সেটা ছিল বৃষ্টি আইনে। আগে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৯ উইকেটে ১৪৩। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩ উইকেটে ৯৩ রান করার পর বৃষ্টির শুরু।
তবে দ্বিতীয় ম্যাচেই দারুণ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের। লোডারহিলে এই ম্যাচে বাংলাদেশ জেতে ১২ রানের ব্যবধানে। সিরিজে আসে ১-১ সমতা। আগে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ করেছিল ৫ উইকেটে ১৭১ রান। তামিম (৭৪) ও সাকিবের (৬০) ব্যাটেই এসেছিল চ্যালেঞ্জিং স্কোর। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ছিল ৯ উইকেটে ১৫৯। মোস্তাফিজ ও নাজমুল ইসলাম অপু তিনটি করে উইকেট নিয়ে শামিল হয়েছিলেন জয়ের উৎসবে। তৃতীয় ম্যাচটি দাঁড়িয়েছিল অলিখিত ফাইনালে। যে ম্যাচে আরো বিধ্বংসী ছিল বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৫ উইকেটে ১৮৪ রান। লিটনের (৩২ বলে ৬১ রান) ঝড়ো ফিফটির সঙ্গে রান পেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ (৩২*), সাকিব (২৪), তামিম (২১)। জবাবে সাত উইকেটে ১৩৫ রান তোলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর শুরু হয় বৃষ্টি। ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ১৯ রানে জিতে যায় বাংলাদেশ। সঙ্গে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের হাসি।
ক্যারিবীয় সফরের সুখকর স্মৃতি মিরপুরে ফিরিয়ে আনতে তারকা ব্যাটসম্যানদের রানের বিকল্প নেই। সেটা পরিষ্কার। ব্যাট হাতে আগে করতে হবে বড় স্কোর। তারপর আঁটসাঁট বোলিং। তবেই টেস্ট-ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টির ট্রফিটা নিয়েও উৎসব করতে পারবে বাংলাদেশ। নচেৎ সিরিজ হারের হতাশা নিয়ে বছর শেষ করতে হবে সাকিবদের।
বাকি দুই ম্যাচ (বক্স হবে)
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি : মিরপুর, ২০ ডিসেম্বর, বিকাল ৫টা
তৃতীয় টি-টোয়েন্টি : মিরপুর, ২২ ডিসেম্বর, বিকাল ৫টা