কোরআন-হাদিসে কিয়ামতের আলামত

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

কোরআন-হাদিসে কিয়ামতের আলামত

  • প্রকাশিত ৭ এপ্রিল, ২০২১

মিশকাত বিন আমীর হোসেন

মুসলমানদের ওপর যেসব বিষয়ের প্রতি ঈমান আনা ফরজ, তারমধ্যে আখিরাত তথা পরকাল এবং সেখানকার নিয়ামত অন্তর্ভুক্ত। মানুষ পার্থিব জগত এবং তার ভোগ বিলাসের মাঝে ডুবে পরকালের জীবনে পদাপর্ণ করার অনিবার্য ঘটনা কেয়ামত ও এর ভয়াবহতার কথা ভুলে যেতে পারে। ফলে আখেরাতের মঙ্গলের জন্য আমল করাও ছেড়ে দিতে পারে। এই জন্য মহান আল্লাহতায়ালা কেয়ামতের পূর্বে এমন কতগুলো আলামত নির্ধারণ করেছেন যা আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার অকাট্য প্রমাণ বহন করে। এ বিষয়ে সব প্রকার সন্দেহ দূর করে দেয়। কেয়ামতের ছোট ছোট আলামত প্রায়ই প্রকাশ হয়ে গিয়েছে। যেমন সৎকাজের আদেশ করা অসৎকাজের নিষেধ করাকে ছেড়ে দেওয়া। আমানতের খিয়ানত করা। অন্যায়হীনতা, মানুষরা সমাজের কাছে অন্যায়ের বিচার না পাওয়া। মূর্খলোক সমাজের নেতা হওয়া। মসজিদেও ভেতরে ফাসেকদের আওয়াজ বৃদ্ধি পাওয়া। দরিদ্র ব্যক্তিরা বড় বড় দালানকোঠা-বিল্ডিং তৈরি করা। অন্যায়কারীর বিচার না হওয়া। গান-বাদ্যের আওয়াজ বৃদ্ধি পাওয়া। আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা। মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। দুনিয়াবী স্বার্থে ইলম অর্জন করা। মানুষের জন্য মানুষদের থেকে মায়া মুহাব্বত ভালোবাসা উঠে যাওয়া। পর্দাহীনতা ইত্যাদি।

কেয়ামতের বড় বড় আলামতগুলো হলো- ইমাম মাহাদি আলাইহিস সালামের আগমন করা। দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ লাভ করা। ইয়াজুস এবং মাজুজের আবির্ভাব হওয়া। হজরত হুযাইফা ইবনে আসিদ ফাইল গিফারী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, একদিন আমাদের সমালোচনার মধ্যখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসে উপস্থিত হলেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমরা কী বিষয়ে আলোচনা করছ? তারা বললেন, আমরা কিয়ামত বিষয়ে কথা বলছি। তিনি বললেন ১০ টি আলামত প্রকাশ হওয়ার পূর্বে কেয়ামত কখনো সংঘটিত হবে না। তারপর তিনি সেগুলো উল্লেখ করে বলেন ৬ নাম্বারে ইয়াজুস-মাজুস সমপ্রদায়ের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে।’ (সহিহ মুসলিম)

আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা সে দিনকে ভয় করো, যেদিন কেউ কারো কোনো কাজে আসবে না। আর কারো পক্ষ থেকে কোনো সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না এবং কারো কাছ থেকে কোনো বিনিময় নেওয়া হবে না। আর তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না।’ (আল কোরআন) আল্লাহতায়ালা আরো বলেন, ‘অতঃপর তোমরাই তো তারা, যারা নিজদেরকে হত্যা করছ এবং তোমাদের মধ্য থেকে একটি দলকে তাদের গৃহ থেকে বের করে দিচ্ছ। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে সহায়তা করছ। আর তারা যদি বন্দি হয়ে তোমাদের নিকট আসে, তোমরা মুক্তিপণ দিয়ে তাদেরকে মুক্ত কর। অথচ তাদেরকে বের করা তোমাদের জন্য হারাম ছিল। তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে তাদেরকে কঠিনতম আজাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন।’ (আল কোরআন)

আবু উমামা বাহেলি (রা.) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করে বলেছেন, ‘ইসলামের কড়াগুলো একটি একটি করে ভেঙ্গে যাবে। একটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর মানুষ তার পরেরটি আঁকড়ে ধরবে। সর্বপ্রথম যে কড়াটি ভাঙবে, সেটি হলো ইসলামী শাসন। আর সর্বশেষটি হলো নামাজ।’ (মুসনাদ আহমাদ, হাকিম, ইবনে হিব্বান) আব্দুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘কিয়ামত যখন কাছে চলে আসবে তখন এমন দিন আসবে যখন মূর্খতা ছড়িয়ে পড়বে, জ্ঞান তুলে নেওয়া হবে এবং প্রচুর ‘হারজ’ হবে। হারজ হলো হত্যা।’ (সহিহ বুখারি) আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষণ না ফিতনা প্রকাশ পাবে এবং মিথ্যাচার বেড়ে যাবে এবং বাজার হবে কাছাকাছি।’ (আহমদ) ‘নিশ্চয়ই কিয়ামতের পূর্বে অন্ধকার রাত্রির মতো ঘন কালো অনেক ফিতনার আবির্ভাব হবে। সকালে একজন লোক মুমিন অবস্থায় ঘুম থেকে জাগ্রত হবে। বিকালে সে কাফেরে পরিণত হবে। বহু সংখ্যক লোক ফিতনায় পড়ে দুনিয়ার সামান্যলাভের বিনিময়ে তাদের দীন বিক্রি করে দিবে।’ (সহিহ মুসলিম)

লেখক : প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads