প্রথম ইনিংসে অল আউট মাত্র ১৪৩ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে আশা জাগিয়েও ১৬৯ রানে প্যাকেট। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ হেরেছে ১৫১ রানের বড় ব্যবধানে। ১৮ বছর ধরে টেস্ট খেলা বাংলাদেশের এই হাল? যা মোটেই আশাজাগানিয়া নয়, বরং একরাশ হতাশার। সিলেট টেস্টে বাংলাদেশ হেরেছে মূলত ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে। কেন এমন ব্যাটিং? এর কোনো ব্যাখ্যাই খুঁজে পাচ্ছেন না বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
বড় ব্যবধানে হারের পর গতকাল আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে অনেকটাই বিমর্ষ ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। প্রথম প্রশ্নটাই যেন শেল হয়ে বিঁধল তার বুকে, এমন ব্যাটিংয়ের ব্যাখ্যা কী? তিনি বলেন, ‘এমন ব্যাটিংয়ের ব্যাখ্যা দেওয়া আসলে খুবই কঠিন। একটা জিনিস বলতে পারি, টেস্ট ক্রিকেট খেলতে যেই ধরনের ডিসিপ্লিন থাকা উচিত, আমার মনে হয় না আমরা সেই ডিসিপ্লিন দেখাতে পেরেছি। কারণ উইকেট বেশ ভালো ছিল, ইভেন আজকেও (গতকাল) উইকেট ভালো ছিল। হয়তো আজকেও দুই-একটি বল টার্ন করেছে। এছাড়া আমার কাছে ভালোই মনে হয়েছে। আমার মনে হয় ডিসিপ্লিনের ইস্যুটা আমাদের আরেকটু ভালো করে দেখতে হবে। নিজেদের ওপর বিশ্বাসটা আরেকটু বাড়াতে হবে। কারণ, বেশ কয়েকটি টেস্টে আমাদের ব্যাটিং খুব বাজে হচ্ছে। আমাদের এসব নিয়ে ভাবতে হবে, একটা উপায় বের করতে হবে।’
চতুর্থ দিনে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৯৫। হাতে দশ উইকেট। কেমন ছিল দলের পরিকল্পনা। মাহমুদউল্লাহ জানালেন, ‘প্ল্যান তো সফল হয়নি। কারণ গতকাল আমাদের টার্গেট যখন সেট হয়, তখন আমরা মাঠে আলোচনা করেছিলাম আমরা পজিটিভ থাকব। ম্যাচ জেতার জন্যই খেলব। কারণ উইকেট ভালোই ছিল। কোনো রকম অজুহাত দেওয়া উচিত হবে না এবং দেওয়া ঠিকও নয়। আমরাই বাজে ব্যাটিং করেছি। আমরা মোটেও ডিসিপ্লিন ছিলাম না। এ কারণেই আমাদের ব্যাটিং ব্যর্থতা। তবে আমরা বিশ্বাস করি, আমরা নিজেরা যদি চিন্তা করি অ্যাজ অ্যা গ্রুপ, আমরা অবশ্যই ভালোভাবে ফিরতে পারব। এই বিশ্বাসটা আমাদের সবার মধ্যেই আছে।’
দলের বেশিরভাগ ব্যাটসম্যান বাজে বলে আউট হয়েছে, যা ছিল বেশ দৃষ্টিকটু। মানছেন অধিনায়কও, ‘আমরা অনেকগুলো বলে খুব লেইম আউট হয়েছি, যা দৃষ্টিকটু। ওই জিনিসগুলো ঠিক নয় বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে। এখানে ডিসিপ্লিন, কনসান্ট্রেশনের ইস্যু আছে। যদি পারসোনালি বলি, আমি আজ বেশ পজিটিভ ছিলাম। ভেবেছিলাম আমি হয়তোবা ভালো খেলে বড় জুটি গড়লে তাদের টার্গেটের কাছাকাছি যেতে পারব, আমরা ওই বড় পার্টনারশিপই করতে পারিনি। আপনি বড় জুটি না গড়তে পারলে ম্যাচ জিতবেন না।’ বিশ্বকাপ ভাবনায় টেস্ট ক্রিকেট কি মূল্য হারাচ্ছে? রিয়াদের মতে, ‘উই ডু কেয়ার অ্যাবাউট টেস্ট ক্রিকেট। আমরা পাঁচ-ছয়টা (আট ইনিংস) ইনিংসে হয়তো রান করতে পারিনি। তবে বোলাররা যথেষ্ট ভালো বোলিং করেছে। অপনেন্টকে অল্প রানে আটকে ফেলছে। ব্যাটসম্যানরা ভালো করছে না। ওয়ানডে ফরম্যাটে ভালো ছন্দে আছে। কিন্তু ওই ডিসিপ্লিনটা হয়তো আমরা টেস্ট ক্রিকেটে নিতে পারছি না। অবশ্যই এটা চিন্তার বিষয়। কারণ, এভাবে ব্যাট করতে থাকলে মনে হয় না আমরা টেস্ট ক্রিকেটে কোন অবস্থানে থাকব। এটা আমাদের ইমেজের ইস্যু। আমাদের অবশ্যই শক্তভাবে ফাইট ব্যাক করতে হবে।’
উইকেটের কোনো দোষ নেই। কারণ, বাংলাদেশের বোলাররা তুলনামুলক ভালো করেছে। মাহমুদউল্লাহ দায় দিলেন ব্যাটিংকেই, ‘আমি শুধু ব্যাটিংটা নিয়ে বলতে পারি। আপনি উইকেটের দোষ দিতে পারবেন না। বোলারদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করতে পারবেন না। কারণ, তারা ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করছে। তাইজুলের কথা বলি, সে অনেক ভালো বল করেছে। মিরাজ, রাহি ভালো বল করেছে। আল্টিমেটলি এটা আমাদের ব্যাটসম্যানদের দায়িত্ব আমরা কেমন রান করেছি। ব্যাটসম্যানরা যদি ভালো রান না দিতে পারে, তাহলে লাভ নেই কোনো। এভাবে ব্যাটিং ব্যর্থতার দায়ভার আমরাও নিতে চাই না।’ সিলেটের অভিষেক টেস্ট। দর্শকরা কষ্ট পেয়েছে সবচেয়ে বেশি। মাহমুদউল্লাহ সেজন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন, ‘দর্শকরা এসেছে আমাদের ভালো খেলা দেখতে। আমরা পারফর্ম করতে পারিনি। এটার জন্য আমরা দুঃখিত। বাংলাদেশের ক্রিকেটের আগেও এমন সময় এসেছে তখনো আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। আশা করি সবাই মিলে আবার ঘুরে দাঁড়াব।’