কোটা বহালে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে

সব ধরনের সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখার দাবিতে গতকাল শাহবাগে বিক্ষোভ

ছবি -বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

চতুর্থ দিনে শাহবাগ অবরোধ

কোটা বহালে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে

# সোমবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে পরিপত্র প্রত্যাহার দাবি # স্থল, নৌ ও বিমানপথ অবরোধের আহ্বান

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৭ অক্টোবর, ২০১৮

সরকারি সব চাকরিতে ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ সব ধরনের কোটা বহাল রাখার দাবিতে গতকাল শনিবারও চতুর্থ দিনের মতো রাজধানীর ব্যস্ততম শাহবাগ মোড় অবরোধ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। গতকালও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডসহ কয়েকটি সংগঠনের সদস্যরা এই অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেন। অবরোধের কারণে এই পথে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।

কোটা বাতিলে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হবে বলে শনিবার জানানো হয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের পক্ষ থেকে। এদিন বিভিন্ন জেলা থেকেও ব্যানার নিয়ে এ সংগঠনের নেতাকর্মীরা শাহবাগে এসে অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেন। এ ছাড়া অনির্দিষ্টকালের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের সংগঠন। এ ছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও নাটোরেও কোটা পুনর্বহালের দাবিতে কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

শনিবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তন উপলক্ষে গত শুক্রবার রাত ১টা থেকে শনিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, তারা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন। তারা ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখা ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য সুরক্ষা আইন, রাজাকারের সন্তানদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ না দেওয়া ও তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানান। আন্দোলনকারীরা বলেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কোটা পর্যালোচনা কমিটির সিদ্ধান্ত অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা স্বাধীনতাবিরোধীদের কাছে হেরে যাওয়ার শামিল।

এদিকে, কোটা বাতিলের দাবিতে ডাকা অবরোধ কর্মসূচি অনির্দিষ্টকাল চলবে ঘোষণা দিয়ে শনিবার বিকালে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের মুখপাত্র আ ক ম জামাল উদ্দিন বলেন, ‘পরিপত্র স্থগিত করে সোমবারের মন্ত্রিসভায় তা প্রত্যাহার করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের  স্থলপথ, নৌপথ ও বিমানপথ অবরোধ করার আহ্বান জানাচ্ছি, এই এক দফা এক দাবি আমাদের। এখন থেকে দাবি আদায় না পর্যন্ত অবস্থান করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’

শনিবারের কর্মসূচিতে সারা দেশ থেকে সমাবেশে বিভিন্ন ব্যানারে আসেন অনেকে। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয় চারপাশ। সাময়িক বৃষ্টির কারণে দাঁড়িয়েই স্লোগান দেন তারা। খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কমান্ড, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড হবিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মাধবপুর উপজেলা ও চট্টগ্রাম মহানগরের ব্যানার দেখা যায়।

পঞ্চগড় থেকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের ব্যানারে থাকা নাজমুল বলেন, আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। ৩০ ভাগ কোটা পুনর্বহাল করা উচিত। এজন্য অবস্থান নিয়েছি।

বিকাল ৪টায় সম্মিলিতভাবে আসা মুক্তিযোদ্ধারা ভাষণ দেন। প্রত্যেকেই শেখ হাসিনাকে অভয় দিয়ে সব ক্ষেত্রে ৩০ ভাগ কোটা বহাল করার দাবি জানান।

নিজেকে হবিগঞ্জ এলাকার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিয়ে বাবুল শিকদার বলেন, ‘এই দেশ আমরা রক্ত দিয়ে স্বাধীন করেছি। সরকারি চাকরিতে আমাদের সন্তানদের কোটা থাকবে না, তা হতেই পারে না। তারা না খেয়ে মরবে, তা দেখতে চাই না। শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের এই দাবি মেনে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য কোটা সংরক্ষিত রাখবেন, এই আশায় অবস্থান নিয়েছি।’

অবরোধে অংশ নেওয়া চট্টগ্রাম মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার পাভেল বলেন, ‘কোটা সংস্কারের নামে জামায়াতে ইসলামী ও তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের এজেন্টরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। তারা দেশটিকে অস্থির করার চেষ্টা করছে।’

এদিকে, সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যান চলাচলে ধীরগতি ছিল। অবরোধের কারণে শাহবাগ মোড় দিয়ে যাতায়াতকারী পথচারীরা টিএসসি দিয়ে ঘুরে যান। বাংলামোটর ও প্রেস ক্লাবগামী গাড়িগুলো দীর্ঘক্ষণ জ্যামে আটকে থাকে। ঢাকা মেডিকেল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলে আসা অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করতে বেগ পেতে হয় যানজটের কারণে।

অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে যাওয়া জামালপুর থেকে আসা সিদ্দিকী সোহেল বলেন, ‘খুব কষ্ট হচ্ছে ভাই। রোগী কষ্ট পাচ্ছে জ্যামে বসে আছি। জ্যাম কখন ছাড়বে বুঝছি না।’ যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কোনো উপস্থিতি লক্ষ করা যায়নি।

এর আগে মেডিকেল পরীক্ষা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তনের নিরাপত্তার স্বার্থে শাহবাগ থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার।

রাবি : সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা বহালের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন করা হয়েছে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় আদিবাসী শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন।

নাটোর : মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের দাবিতে নাটোরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সদস্যরা। শনিবার দুপুরে নাটোর প্রেস ক্লাবের সামনে তারা এই কর্মসূচি পালন করে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads