পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের নাম রোয়াইলবাড়ী দুর্গ। এটি কোটবাড়ী দুর্গ নামেও পরিচিত। রোয়াইলবাড়ী বাজার থেকে প্রায় এক কিলোমিটার মাটির সড়ক ধরে দক্ষিণ-পশ্চিমে এগোতেই চোখে পড়বে সেই ঐতিহাসিক প্রাচীন নিদর্শন রোয়াইলবাড়ী দুর্গ। তবে দুর্গের দিকে এগোলেই চোখে পড়বে বিশাল আকারের দুটি পাশাপাশি পুকুর। যেগুলোর অবস্থান দুর্গটির ঠিক উল্টোদিকে। এমন বিশাল আকারের পুকুরের সন্ধান এখন খুব একটা পাওয়া যায় না। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মতে, প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রোয়াইলবাড়ী দুর্গটি ‘কোটবাড়ী দুর্গ’ নামেও পরিচিত।
‘রোয়াইলবাড়ী’ শব্দটি আরবি এবং বাংলা দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। ‘রোয়াইল’ শব্দটি আরবি ‘রেইল’ বা ‘রালাহ’ হতে এসেছে, যার অর্থ মানুষ অথবা ঘোড়ার অগ্রবর্তী দল বা অশ্বারোহী সৈন্যদল। আর বাংলা ‘বাড়ী’ মানে ঘর বা বাসস্থান। সে হিসেবে বলা যায়, রোয়াইলবাড়ী মানে সৈন্যদলের বাসস্থান। আয়তাকার পরিকল্পনায় নির্মিত এ দুর্গের আয়তন উত্তর-দক্ষিণে ৫৩৩.২৩ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৩২৭.৫৭ মিটার। দুর্গের পূর্ব দিকে রয়েছে দুটি বিশাল আকারের দিঘি। দিঘি থেকে কিছু পূর্বে ছিল পরিখা। মূলত, দুর্গটি তিন স্তরবিশিষ্ট প্রাচীরঘেরা। আর বাইরের প্রাচীরটি ছিল মাটির তৈরি, যা বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায় এবং সেখানে গড়ে উঠেছে ঘরবাড়ি ও বসতি। মাটির প্রাচীর ও পরিখাবেষ্টিত এই দুর্গের ভেতরে রয়েছে সম্ভবত আরো ইটের নির্মিত দুটি প্রাচীর। পূর্বদিকে পাশাপাশি অবস্থিত বিশাল দিঘি দুটির মাঝখানে দুর্গে প্রবেশের জন্য একটি প্রবেশপথ ছিল বলে ধারণা করা হয়, যা বর্তমানে বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয়ভাবে এই প্রবেশপথটিই সিংহদরজা হিসেবে পরিচিত।
দুর্গের সুরক্ষা প্রাচীর তিন মিটার প্রশস্ত এবং ইট দ্বারা নির্মিত হলেও তোরণের বিশাল স্থাপত্যিক কাঠামো বড় বড় বোল্ডার পাথর ও ইটের সমন্বয়ে নির্মিত যা প্রায় ৯ মিটার প্রশস্ত। ওয়াচ টাওয়ার দুর্গ প্রাচীরের বাইরে এবং ভেতরে (বিপরীত দিকে) উভয় দিকে রয়েছে। পাথরে নির্মিত পিলার ও বুরুজসহ সুলতানি আমলে নির্মিত একটি ১৫ গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদের ধ্বংসাবশেষও উৎখননের ফলে আবিষ্কৃত হয়েছে। আর ওই মসজিদের ৩০ মিটার উত্তরে একটি প্রাচীন কবরস্থান রয়েছে। এটি স্থানীয়ভাবে নিয়ামত বিবির মাজার ও ডেঙ্গুমিয়ার সমাধি নামে পরিচিত।