কৃষি শিক্ষায় কর্মক্ষেত্র

কৃষি নিয়ে পড়াশোনা করে পেশামুখী ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

কৃষি শিক্ষায় কর্মক্ষেত্র

  • আশিকুর রহমান
  • প্রকাশিত ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষির উন্নয়নের ওপর নির্ভর করে দেশের সমৃদ্ধি। এদেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতির ভিত্তিই হলো কৃষি। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা- এই মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের মূল উৎস হলো কৃষি। তাই কৃষি নিয়ে পড়াশোনা করে পেশামুখী ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে। চলুন জেনে নিই কৃষিবিষয়ক কোন বিষয় পড়ে কোথায় চাকরি হয়-

কৃষি

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হওয়ায় কৃষি গ্র্যাজুয়েটদের কর্মক্ষেত্র ব্যাপক বিস্তৃত। দক্ষিণ এশিয়ার কৃষিশিক্ষার সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অনুষদের অধীনে ১৬টি বিভাগ রয়েছে। তাই উচ্চ শিক্ষার জন্যে কৃষি গ্র্যাজুয়েটদের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। উচ্চ শিক্ষার জন্য স্কলারশিপসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেতে পারেন কৃষি গ্র্যাজুয়েটরা।

ভালো ফল অর্জনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ কর্ম কমিশনে (বিসিএস) চাকরির সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি কৃষি ক্যাডারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অধীনে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়নে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন অধিদফতর, কৃষি তথ্য সার্ভিস, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলসহ এ রকম অনেক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট, চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, রেশম উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি যেমন- ব্র্যাক, স্কয়ার, লালতীর, ন্যাশনাল অ্যাগ্রোফেয়ার, প্রশিকা, আশা, এসিআইসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন- ইউএসএইড, ড্যানিডা, সিডা, ইরি, আইএফডিসি, অক্সফাম জিবির মতো প্রতিষ্ঠানেও কৃষি গ্র্যাজুয়েটদের কাজের সুযোগ রয়েছে।

পশুপালন

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রাণিজ আমিষের চাহিদা মেটাতে পশুপালন গ্র্যাজুয়েটদের অবদান চোখে পড়ার মতো। প্রাণিসম্পদের উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাই হলো এই অনুষদের গ্র্যাজুয়েটদের মূল কাজ।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিনিয়োগ শিল্প পোল্ট্রি পশুপালন অনুষদের অধীনে। এ ছাড়াও পশুপালন অনুষদের অধীনে রয়েছে ডেইরি বিজ্ঞান, পশুবিজ্ঞান, পশুপুষ্টি এবং পশু প্রজনন ও কৌলিতত্ত্ব বিভাগ। তাই পশুপালন অনুষদের গ্র্যাজুয়েটদের কর্মক্ষেত্র ব্যাপক বিস্তৃত। দেশ তো বটেই, দেশের বাইরেও চাকরির সুযোগ রয়েছে। ফলে পেশামুখী ক্যারিয়ার গড়তে এই বিষয়টির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে তরুণ শিক্ষার্থীরা।

ভালো ফল অর্জনের মাধ্যমে দেশে ও দেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সুযোগ তো থাকছেই। পশুপালন অনুষদ থেকে পাস করে বাংলাদেশ কর্মকমিশনের মাধ্যমে বিসিএস পরীক্ষায় দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন কর্মকর্তা, হাঁস-মুরগি উন্নয়ন কর্মকর্তাসহ ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেওয়া যেতে পারে। বিসিএসে কোটা ক্যাডার ছাড়াও রয়েছে সাধারণ ক্যাডার হওয়ার সুযোগ। পশুপালন অনুষদ থেকে পড়াশোনা করে বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় ক্যাডারে কিউরেটর এবং নন-ক্যাডারে জ্যু অফিসার হিসেবে চাকরি করা যায়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে অগ্রাধিকারসহ বিভিন্ন ব্যাংক ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোতে নিজেদের অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ক্যারিয়ার গড়ছেন এই অনুষদের বহু গ্র্যাজুয়েট। এ ছাড়াও বাংলাদেশ প্রাণিজসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিএলআরআই) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিচ্ছে পশুপালন অনুষদের গ্র্যাজুয়েটরা। অনেকেই পশুপালন বিষয়ে অর্জিত জ্ঞানকে ব্যক্তিগতভাবে কাজে লাগিয়ে পোল্ট্রি এবং ডেইরি খামার গড়ে তুলেছে। আর এই পোল্ট্রি এবং ডেইরি খামারকে তারা নিজেদের কর্মসংস্থানের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেছে।

ভেটেরিনারি সায়েন্স

প্রাণী চিকিৎসকরাই সাধারণত ভেটেরিনারিয়ান হিসেবে পরিচিত। এদেশ খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও প্রাণিজ আমিষে এখনো স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারেনি। দেশের প্রাণিজ সম্পদকে এগিয়ে নিতে গবাদি পশু-পাখির সুস্বাস্থ্যের জন্য চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। দেশের প্রাণিজ সম্পদ উন্নয়নে ভেটেরিনারিয়ানরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছেন। আর এই গ্র্যাজুয়েটদেরও কর্মক্ষেত্রের পরিসীমা ব্যাপক বিস্তৃত।

একাডেমিক ভালো ফলের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার পাশাপাশি বিদেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ কর্মকমিশনে (বিসিএস) ভেটেরিনারিয়ানদের রয়েছে আলাদা কোটা। বিসিএস ক্যাডারের মাধ্যমে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ চিকিৎসক হওয়ার পাশাপাশি বিসিএসের মাধ্যমে প্রশাসনের বিভিন্ন পদে কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিতে পারেন এই গ্র্যাজুয়েটরা। উচ্চ শিক্ষার জন্য স্কলারশিপসহ বহির্বিশ্বে যাওয়া এই অনুষদের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন চিড়িয়াখানায়, সাফারি পার্কে, সুন্দরবনে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও চিকিৎসক হিসেবে কাজের সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন প্রজেক্ট ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (যেমন- বিএলআরআই, এলআরআই, এফআরআই) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ওষুধ কোম্পানিতে মেডিসিন বিশারদ হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানিতে উচ্চ বেতনে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান

কৃষি অর্থনীতি একটি সম্পূর্ণ প্রায়োগিক অর্থনৈতিক বিজ্ঞান। কৃষি অর্থনীতি কৃষককে বিভিন্ন ফসল, পশু-পাখি, মাছ ইত্যাদির লাভজনক প্রজাতি নির্বাচন করতে পরামর্শ প্রদান, ফসল উৎপাদনের জন্য জমি নির্বাচন ও তাতে সার, বীজ, পানি ইত্যাদি ব্যবহারের দিক নির্দেশনা, কৃষি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান, কৃষিপণ্য বিপণন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করে। সর্বোপরি জাতীয় অর্থনীতির বিবেচনায় কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে।

কৃষি অর্থনীতি গ্র্যাজুয়েটরা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান, পরামর্শ দানকারী প্রতিস্থান, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক, অ্যাগ্রিবিজনেস ফার্মসহ বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের আওতাভুক্ত সরকারি সব প্রথম শ্রেণির চাকরিতে আবেদন করতে পারে।

এই গ্র্যাজুয়েটরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান যেমন- বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি), বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআরআরআই), বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই), বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএসআরআই), বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই), আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ব্যাংকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজের সুযোগ রয়েছে।

এ ছাড়াও একাডেমিক ভালো ফলের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি

বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি আনয়ন এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে কৃষি সম্পর্কিত যাবতীয় শাখাগুলোর পাশাপাশি কৃষিতে আধুনিক প্রকৌশল একান্ত অপরিহার্য। এটি উপলব্ধি করে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৬৪ সালে এই অনুষদটি খোলা হয়। কৃষি প্রকৌশলীদের উদ্ভাবিত নতুন নতুন কলাকৌশল কাজে লাগিয়ে আজ কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে। আর এই অনুষদের গ্র্যাজুয়েটদেরও বিস্তৃত কর্মক্ষেত্র রয়েছে।

বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য এই গ্র্যাজুয়েটরা অনেক সুবিধা পেয়ে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই গ্র্যাজুয়েটদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ আছে। একজন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বিজ্ঞানের অন্য বিষয়েও পড়াশোনা ও গবেষণার সুযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি), বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআরআরআই), বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই), বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএসআরআই), বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই), আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি), ওয়াটার রিসোর্সেস প্লানিং, নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মতো জায়গায় কাজের সুযোগ রয়েছে। তা ছাড়াও ফুড ইঞ্জিনিয়ারদের খাদ্য মন্ত্রণালয়, ফুড রিসার্চ ল্যাবরেটরি, ফুড হোলসেলার, হাসপাতাল, ক্যাটারিং সংস্থা, রিটেইলার প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ রয়েছে।

একাডেমিক ভালো ফলের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালিয়ের শিক্ষক হওয়ার সুযোগ তো থাকছেই। এ ছাড়াও বাংলাদেশ কর্মকমিশনে চাকরি করার সুযোগ রয়েছে।

মাৎস্যবিজ্ঞান

প্রবাদ আছে মাছে-ভাতে বাঙালি। আমাদের দেশে প্রাণিজ আমিষের প্রায় ৬০ শতাংশ পূরণ হয় মাছ থেকে। এদেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ ও উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে মৎস্য সেক্টরকে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রথম ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই অনুষদটি খোলা হয়। আর এই গ্র্যাজুয়েটদের জন্যই বিশ্বে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়।

মাৎস্যবিজ্ঞান থেকে উত্তীর্ণ গ্র্যাজুয়েটরা দেশের মৎস্য সেক্টরে তাদের দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। এই গ্র্যাজুয়েটদের একাডেমিক ভালো ফল অর্জনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার পাশাপাশি বিদেশে স্কলারশিপের সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই), জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (বিসিএসের মাধ্যমে), বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন, মৎস্য অধিদফতর, ওয়ার্ল্ড ফিশ সেন্টার, দেশি-বিদেশি এনজিও, সরকারি-বেসরকারি মৎস্য খামার এবং বিভিন্ন হ্যাচারিতে কাজের সুযোগ রয়েছে।

কৃষিতে বিস্তৃত কর্মক্ষেত্র থাকার কারণে উদীয়মান অনেক তরুণেরই লক্ষ্য কৃষি শিক্ষায় ক্যারিয়ার গড়া।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads