দেশের উন্নয়নের চালিকাশক্তি কৃষির সম্ভাবনার কথা বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুও দৃঢ়ভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। ২৬ মার্চ ১৯৭৫ জনসম্মুখে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া শেষ ভাষণে সোনার বাংলা গড়ার ডাক দিয়ে তিনি বলেন, ‘ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত নাই। আমি ভিক্ষুক জাতির নেতা হতে চাই না। আমি চাই বাংলাদেশের কৃষক ভাইদের কাছে, যারা সত্যিকারের কাজ করে। যারা প্যান্ট পরা-কাপড় পরা ভদ্রলোক তাদের কাছেও চাই, জমিতে যেতে হবে। ডাবল ফসল করুন। তাহলে কারো কাছে ভিক্ষুকের মতো হাত পাততে হবে না।’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের পেশা কৃষির উন্নয়ন ঘটাতে পারলেই দেশের উন্নতি করা সম্ভব। তবে তার মতে, কৃষি মানে শুধু ফলন বৃদ্ধি করা নয়, কৃষকের হাতে তার ফসলের ন্যায্যমূল্য প্রদান এবং আধুনিক বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে কৃষকদের উৎপাদনে আগ্রহী করে তোলাই হবে সফলতার দাওয়াই। তিনি কৃষিতে দক্ষতা অর্জন এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের আবশ্যকতা বুঝতে পেরে নিজের ছেলেকে অক্সফোর্ড বা কেমব্রিজে না পাঠিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষিবিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত কৃষক তৈরি করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ । কৃষি আমাদের সমৃদ্ধির অন্যতম উৎস। কাজেই কৃষিই বাংলাদেশের ভরসা এবং ভবিষ্যৎ। দেশ-বিদেশের গবেষক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোও বলছে, বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করতে হলে কৃষিতে মনোযোগ দিতে হবে। কৃষিই পথ দেখাবে।
‘দ্বিতীয় বিপ্লব’
বাংলাদেশ বিপ্লব ’৭১-এর তিন বছর পর ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু নতুন যে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনে উদ্যোগী হন, একে তিনি ‘This is our second revolution’ বা ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’ বলে আখ্যাত করেন। স্বাধীনতার ঠিক পরে ১৯৭২ সালে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন হয় এক কোটি ১০ লাখ টন। এর মধ্যে ধান উৎপাদন হয় ৯৩ লাখ টন। তখন সাড়ে সাত কোটি মানুষের জন্য ওই খাদ্য পর্যাপ্ত ছিল না। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন, কৃষিই যেহেতু এ দেশের জাতীয় আয়ের প্রধান উৎস সেহেতু কৃষির উন্নতিই হবে দেশের উন্নতি। ১৯৭৫ সালের ২৫ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এক জনসভায় তিনি বলেন, ‘আমি চাই বাংলাদেশের প্রত্যেক কৃষক ভাইয়ের কাছে যারা সত্যিকার কাজ করে, যারা প্যান্ট-পরা কাপড়-পরা ভদ্রলোক তাদের কাছেও চাই, জমিতে যেতে হবে, ডবল ফসল করুন। প্রতিজ্ঞা করুন, আজ থেকে ঐ শহীদদের কথা স্মরণ করে ডবল ফসল করতে হবে। যদি ডবল ফসল করতে পারি, আমাদের অভাব ইনশা আল্লাহ হবে না।’ তিনি ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দৃপ্তকণ্ঠে এবং পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করেছেন, ‘আঘাত করতে চাই এই ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে। নতুন সিস্টেমে যেতে চাচ্ছি আমি। গ্রামে গ্রামে বহুমুখী কো-অপারেটিভ করা হবে। ভুল করবেন না। আমি আপনাদের জমি নেব না। পাঁচ বছরের প্ল্যানে বাংলাদেশের ৬৫ হাজার গ্রামের প্রত্যেকটিতে বহুমুখী কো-অপরেটিভ করা হবে। এই কো-অপারেটিভে জমির মালিকের জমি থাকবে। বেকার অথচ কর্মক্ষম প্রত্যেকটি ব্যক্তিকে কো-অপারেটিভের সদস্য করা হবে। আয়-রোজগারের পয়সা যাবে তাদের হাতে, টেস্ট রিলিফ যাবে তাদের হাতে, ওয়ার্কস প্রোগ্রাম যাবে তাদের আওতাধীনে। আস্তে আস্তে ইউনিয়ন কাউন্সিল থেকে টাউটদের বিদায় দেওয়া হবে। তা না হলে দেশকে বাঁচানো যাবে না। আপনার জমিতে উৎপাদিত বর্ধিত ফসলে আপনিও আগের তুলনায় বেশি ভাগ পাবেন। অংশ যাবে কো-অপারেটিভের হাতে, অংশ যাবে সরকারের হাতে। থানায় থানায় একটি করে কাউন্সিল হবে। মহকুমা আর থাকবে না। প্রতিটি মহকুমাকে জেলায় রূপান্তরিত করা হবে। নতুন জেলায় একটি করে প্রশাসনিক কাউন্সিল থাকবে। এর মধ্যে জনসাধারণের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।’
দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি
দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির মধ্যে দুটি দিক ছিল সরকার ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক কর্মসূচি এবং আর্থসামাজিক কর্মসূচি। প্রথমত ছিল সরকার পদ্ধতির পরিবর্তন, একটি জাতীয় দল গঠন, প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ, মহকুমাগুলোকে জেলায় উন্নীত করা, জেলা প্রশাসনের দায়িত্বে জনগণের প্রতিনিধি বা গভর্নর, বিচার ব্যবস্থার সংস্কার এবং দ্বিতীয়ত সমবায়ভিত্তিক কৃষি উৎপাদন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, গ্রামে মাল্টিপারপাস বা বহুমুখী কো-অপারেটিভস, পল্লী অঞ্চলে ‘হেলথ কমপ্লেক্স’ প্রতিষ্ঠা, পরিকল্পিত পরিবার এবং শিক্ষার প্রসার ইত্যাদি। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতির স্থলে রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। বঙ্গবন্ধু হলেন রাষ্ট্রপতি আর ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী হন সরকারের প্রধানমন্ত্রী। পরিবর্তিত সংবিধানের আওতায় ৬ জুন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল দল, সরকারি-বেসরকারি এবং সামরিক অন্যান্য বাহিনীর কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সদস্য নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিবিশেষকে অন্তর্ভুক্ত করে ‘বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ’ নামে একটি জাতীয় দল গঠন করা হয়। ২১ জুন সকল মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করে পূর্বের ১৯টি জেলার স্থলে ৬১টি জেলা সৃষ্টি করা হয়। ১৬ জুলাই বঙ্গবন্ধু ৬১ জেলার প্রতিটির জন্য একজন করে গভর্নর নিয়োগদান করেন।
‘প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড’ হতো বাংলাদেশ
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ ‘প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড’ হবে বলে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তিনি জীবিত থাকলে তা এতদিনে বাস্তবায়ন হতো। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছাড়াই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরে ৮ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল, যা এখন পর্যন্ত আর কখনো হয়নি। ‘বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজ কতদূর যেত’ শীর্ষক সেমিনারে তোফায়েল আহমেদ একথা বলেন। তিনি বলেন, তার দুটি লক্ষ্য ছিল, স্বাধীনতা অর্জন এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়া। তিনি একেবারেই শূন্য হাতে শুরু করেছিলেন। কোনো গুদামে খাবার ছিল না, ব্যাংকে টাকা ছিল না; যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল না। তার মধ্যেও অল্প দিনের মধ্যে যমুনা সেতু, সমুদ্রসীমা, স্যাটেলাইট, সব নিয়েই তিনি ভেবেছেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে আবুল বারকাত বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে অর্থনৈতিকভাবে অনেক আগেই আধুনিক মালয়েশিয়াকে ছাড়িয়ে যেত বাংলাদেশ। ১৯৯৪-৯৫ সালেই মাথাপিছু জিডিপিতে দেশটিকে ছাড়িয়ে যেত বাংলাদেশ। ২০১১ সালে বাংলাদেশের মোট জাতীয় আয় দাঁড়াত ৪২ হাজার ৫১৪ কোটি ডলার। ওই সময় মালয়েশিয়ার মোট জাতীয় আয় ১৫ হাজার ৪২৬ কোটি ডলার ছিল। বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে ১৯৭৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত গড়ে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতো। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার কারণে ১৯৭৫ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ৩৬ বছরে দেশের অর্থনীতির পুঞ্জীভূত ক্ষতির পরিমাণ ৩ লাখ ৪১ হাজার ৬৮৯ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের অর্জন কম নয়। মাত্র ৮ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি এখন ২৭০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার দুই মাস আগে বলেছেন, ‘আমি অনেক রাজা-উজিরের সাক্ষাৎ পাই। তবে এতদিনে একজনই জাতির পিতার (বঙ্গবন্ধু) সাক্ষাৎ পেয়েছি।’
বঙ্গবন্ধু আরো ৩-৪ বছর সময় পেলে দেশ পিছিয়ে থাকত না : প্রধানমন্ত্রী
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদি আরো ৩-৪ বছর সময় পেতেন তাহলে দেশ আজ পিছিয়ে থাকত না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর একটি বিধ্বস্ত দেশকে দাঁড় করাতে বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। তিনি যদি আরো ৩-৪ বছর সময় পেতেন তাহলে দেশ পিছিয়ে থাকত না, এগিয়ে যেত। তার মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগের জীবন থেকেও ২১ বছর ঝরে গেছে নিষ্ফলা হিসেবে।’
১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ বেতার-টিভিতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে বঙ্গবন্ধু কৃষকদের কথা বলেন এভাবে, ‘আমাদের চাষিরা হলো সবচেয়ে দুঃখী ও নির্যাতিত শ্রেণি এবং তাদের অবস্থার উন্নতির জন্য আমাদের উদ্যোগের বিরাট অংশ অবশ্যই তাদের পেছনে নিয়োজিত করতে হবে।’ (‘শেখ মুজিব বাংলাদেশের আরেক নাম’)। কৃষকদের ভাগ্যোন্নয়নে বঙ্গবন্ধু নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সদ্য স্বাধীন দেশের ত্রিশ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি পূরণে তাৎক্ষণিক আমদানি, স্বল্প মেয়াদে উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ, উন্নত বীজ, সেচ ও অন্যান্য কৃষি-উপকরণ সরবরাহ, কৃষি ঋণ মওকুফ, সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার এবং কৃষকের মাঝে খাসজমি বিতরণ করে কৃষির উৎপাদনশীলতা ও উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জনের চেষ্টা করেন। কৃষিতে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের জন্য কৃষি ব্যাংক স্থাপন করেন। উচ্চতর কৃষি গবেষণা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ১৯৭৩ সালের মধ্যেই ধ্বংসপ্রাপ্ত কৃষি-অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ করেন। পাকিস্তানি শাসনকালের দশ লাখ সার্টিফিকেট মামলা থেকে কৃষকদের মুক্তি ও তাদের সকল ঋণ সুদসহ মাফ করে দেন। ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা চিরদিনের জন্য রহিত করেন। পরিবারপিছু জমির সিলিং ১০০ বিঘায় নির্ধারণ করেন। শক্তিচালিত সেচ পাম্পের সংখ্যা ১১ হাজার থেকে ৩৬ হাজারে উন্নীত করেন। বিশ্ববাজারে সারের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির কারণে সারে ভর্তুকি দিয়ে কৃষককে রক্ষা করেন। কৃষকদের সততা ও দেশপ্রেমের প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ধারণা ছিল স্বচ্ছ ও শ্রদ্ধাপূর্ণ। ১৯৭৫ এর ২৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে এক ভাষণে বলেন, ‘করাপশন আমার বাংলার কৃষকরা করে না। করাপশন আমার বাংলার মজদুর করে না। করাপশন করি আমরা শিক্ষিত সমাজ। যারা আজকে ওদের টাকা দিয়ে লেখাপড়া করেছি।’
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করলেও বঙ্গবন্ধু বিজয়ীর বেশে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি ফিরে আসেন স্বাধীন বাংলাদেশে। ফিরে আসেন তার প্রিয় জনগণের মাঝে। নিজেকে সঁপে দেন দেশ গড়ার কাজে। শুরু হয় জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তিলাভের সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধু আজীবন সংগ্রাম করেছেন এ দেশের শোষিত, বঞ্চিত, অবহেলিত কৃষকদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। তাই তিনি সব সময় কৃষির প্রতি শ্রদ্ধা ও অগ্রাধিকার প্রদান করেছিলেন।
১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ প্রথম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বেতার ও টিভি ভাষণে ‘কেমন বাংলাদেশ চাই?’ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমার সরকার অভ্যন্তরীণ সমাজ বিপ্লবে বিশ্বাস করে। এটা কোনো অগণতান্ত্রিক কথা নয়। আমার সরকার ও পার্টি বৈজ্ঞানিক সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিশ্রতিবদ্ধ। একটি নতুন ব্যবস্থার ভিত রচনার জন্য পুরাতন সমাজব্যবস্থা উপড়ে ফেলতে হবে। আমরা শোষণমুক্ত সমাজ গড়ব।’ বঙ্গবন্ধু তারই উদ্ভাবিত উন্নয়ন দর্শন বাস্তবে রূপ দিতে অন্যতম মৌল-উপাদান হিসেবে সমবায়ের অন্তর্নিহিত শক্তি পুরো মাত্রায় ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন গ্রামীণ সমাজে সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দেশের প্রতিটি গ্রামে গণমুখী সমবায় সমিতি গঠন করা হবে, যেখানে গরিব মানুষ যৌথভাবে উৎপাদন যন্ত্রের মালিক হবেন; যেখানে সমবায়ের সংহত শক্তি গরিব মানুষকে জোতদার-ধনী কৃষকের শোষণ থেকে মুক্তি দেবে; যেখানে মধ্যবর্তী ব্যবসায়ীরা গরিবের শ্রমের ফসল আর লুট করতে পারবে না; যেখানে শোষণ ও কোটারি স্বার্থ চিরতরে উচ্ছেদ হয়ে যাবে।
বঙ্গবন্ধুর গৃহীত কৃষি নীতি বাংলাদেশকে বিশ্বের রোল মডেলে পরিণত করেছে
বাংলাদেশ গত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে খাদ্যশস্যর উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে বিশ্বে ‘রোল মডেলে’ পরিণত হয়েছে। এই কয়েক দশকে দেশকে খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলতে পেরেছে বাংলাদেশ। এ ছাড়াও শাক-সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় এবং মাছ উৎপাদনে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উদ্দীপনামূলক আকর্ষণীয় উন্নয়ন নীতিমালা গ্রহণ করেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিগত বছরগুলোতে সেই নীতিমালা অনুসরণ করে কৃষি খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আসছেন। স্বাধীনতার পরে ৪৫ বছরে প্রায় ৩০ শতাংশ আবাদি ভূমি কমে যাওয়া সত্ত্বেও ধানসহ খাদ্যশস্য উৎপাদন ১৯৭২ সালের ১ দশমিক ১০ কোটি টন থেকে বেড়ে প্রায় ৪ কোটি টনে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, কৃষিখাতে বঙ্গবন্ধুর অবদান ছিল বিস্মরকর। তখনকার প্রচলিত চাষাবাদ পদ্ধতির ক্ষেত্রে কৃষির আধুনিকায়নে জাতির পিতা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সে সময়ে কৃষকদের খাদ্যশস্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধু কিছু দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, যাতে কৃষকরা ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারে।
বঙ্গবন্ধু কৃষিখাতের মাঠ কর্মী, সরকারি কর্মকর্তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।
‘বঙ্গবন্ধু কৃষি ও কৃষক তথা আপামর জনগণের মুক্তির জন্য আজীবন প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। তার প্রদত্ত ভাষণ থেকে তা সহজেই অনুমেয়। তিনি ছিলেন আবহমান বাংলার একজন পথচারী। বংলার মাটির সাধারণ মানুষ।
কৃষি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক, writetomukul36@gmail.com