কুড়িগ্রামে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই যত্রতত্র ইটভাটা

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই এভাবে যত্রতত্র গড়ে উঠছে ইটভাটা। দেখার কেউ নেই

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

কুড়িগ্রামে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই যত্রতত্র ইটভাটা

হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্য

  • কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২ এপ্রিল, ২০১৯

কুড়িগ্রামে ফসলি জমিতে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক ইটভাটা। ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও বর্জ্যে বিপন্ন হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ। হুমকির মুখে পড়েছে ভাটা সংলগ্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, নদী, শহরাঞ্চল ও গ্রামীণ জনপদের জনস্বাস্থ্য। অবৈধ ইটভাটার সৃষ্ট দূষণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে বয়স্ক ও শিশুরা। ঢিলেঢালা অভিযানে বেপরোয়া মালিক কর্তৃপক্ষ। অবৈধ এসব ইটভাটা বন্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নেই কার্যকরি ভূমিকা।

কুড়িগ্রামের অধিকাংশ ইটভাটায় পরিবেশগত ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স ছাড়াই চলছে ইট পোড়ানো কার্যক্রম। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইনে (২০১৩) নিষেধ থাকা সত্ত্বেও বেশির ভাগ ভাটাই স্থাপন করা হয়েছে বা হচ্ছে লোকালয় তথা মানুষের বসতবাড়ি, কৃষি জমিতে, নদীর তীরে ও স্কুল কলেজের ৩’শ মিটারের মধ্যে। ইটভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে আবাদি জমির উপরিভাগ, উঁচু ফসলি জমির মাটি, যা আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কাঠ ও অত্যন্ত নিম্নমানের কয়লা পোড়ানো এবং স্বল্প উচ্চতার ড্রাম চিমনি ব্যবহার করায় ইটভাটাগুলোতে নির্গত হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে কালো ধোঁয়া। সে ধোঁয়া বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে চার পাশে। ফলে পরিবেশ বিপর্যয় ও মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে এখানকার জনস্বাস্থ্য।

এ বিষয়ে করণীয় কী জানতে চাইলে পরিবেশ বিজ্ঞানী ও কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান বলেন- বর্তমানে যে পদ্ধতিতে ইট তৈরি হয় তাতে প্রচুর পরিবেশ দূষণ হয়। প্রতি বছরে এ জেলায় ফলের গাছ এবং ধান ক্ষেত মরে যাচ্ছে। স্কুল-কলেজ সংলগ্ন ইটভাটাগুলোও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কুড়িগ্রামের অধিকাংশ ইটভাটা অনুমোদনহীন। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়াপত্র বিহীন ইটভাটাগুলোর বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ডিসি মহোদয়কে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। আশা করি তিনি ইটভাটাগুলো বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন।

২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী পৌর এলাকা, সদর উপজেলা এলাকায় ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। অথচ ওই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুগুলি দেখিয়ে কুড়িগ্রামের পৌর ও সদর উপজেলায় গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক ইটভাটা। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম ধরলা ব্রিজ এলাকা থেকে শুরু করে ভোগডাঙ্গা পর্যন্ত রাস্তার আশপাশে অনেক ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এছাড়াও কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়ক ঘেঁষে গড়ে ওঠা এসব ভাটার কালো ধোঁয়ায় ওই এলাকার বাতাস দূষিত হচ্ছে। এসব ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র নেই।

অথচ স্থানীয় প্রশাসন অজ্ঞাত কারণে এদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অভিযোগ আছে স্থানীয় ইটভাটার মালিকদের কেউ কেউ কৃষকদের ম্যানেজ করে জমি লিজ নিয়ে অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন করছেন।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সদর উপজেলার ফোর স্টার ব্রিকস্, এস.এম ফোর বিকস্, সিএইচবি ব্রিকস্, কেজিবি ব্রিকস্, এআরবি ব্রিকস্ সহ বেশির ভাগ ইটভাটায় কাঠ, গাড়ির পুরাতন টায়ার, রাবার ও প্লাস্টিকের দানা (গুঁড়া) পোড়ানো হয়, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। এর মধ্যে পৌর এলাকার ইটভাটাগুলো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত।

কুড়িগ্রাম সদরে অবস্থিত সিএইচবি ব্রিকস্ মালিক শাহীন চৌধুরীর, কেজিবি ব্রিকস্ মালিক রওশন এবং ফোর স্টার ব্রিকস্ মালিক গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়ার সাথে কথা হলে তারা প্রত্যেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বিহীন ইটভাটা পরিচালনার কথা স্বীকার করে বলেন, ইটভাটা পরিচালনার যে নিয়ম তা কেউ মানে না। এভাবে মানাও সম্ভব নয়। আর যেখানে যে পরিমাণ খরচ তা আমরা করেই পরিচালনা করছি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অবৈধ ইটভাটা বন্ধে প্রশাসন একেবারেই নীরব। মাঝে মধ্যে অভিযান চললেও তা খুব একটা কার্যকর হয় না। ঢিলেঢালা অভিযানে বেপরোয়া মালিক কর্তৃপক্ষ। অবৈধ ইটভাটা বন্ধে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি তাদের।

এ ব্যাপারে কথা হলে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোছাঃ সুলতানা পারভীন বলেন- ইটভাটাগুলি পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া চললেও কেউ লিখিত অভিযোগ দেয় না। কেউ অভিযোগ দিলে আমরা অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত পদক্ষেপ নিব।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads