কৃষি অর্থনীতি

কুষ্টিয়ায় ভুট্টার বাম্পার ফলন চাষীরা দাম না পেয়ে হতাশ

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ২ মে, ২০২৩

আকরামুজ্জামান আরিফ, কুষ্টিয়া:
আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং সুসম সার ব্যবহার ও সুসম সেচ ব্যবস্থা নেয়ায় এবার কুষ্টিয়ায় ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে সরকারীভাবে সহযোগীতা না পাওয়ায় চাষীরা হতাশ হয়েছে। কৃষি অফিসের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ভুট্টার আবাদে বেশী ফলন হয়েছে । তবে এ বছর ভুট্টার দাম কম হওয়ায় চাষীরা লোকসানের মুখ দেখছে।
কুষ্টিয়ার মাঠে ভুট্টা কাটার মহা উৎসব চলছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে ভুট্টা কাটার পর ভুট্টা ছড়ানো কাজে চাষীরা ব্যস্ত সময় পার করেছে। তবে খরচের চেয়ে ভুট্টার দাম গত বছরের চেয়ে কম হওয়ায় চাষীরা খুশি হতে পারছে না। সার, পানি, কীটনাশক ও ডিজেলে যত টাকা খরচ হচ্ছে ভুট্টা বিক্রি করে তেমন লাভ হচ্ছে না বলেও অনেক চাষী ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। ফলে চাষীদের মাঝে হতাশা কাটছেনা। কুষ্টিয়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া জেলায় মোট আবাদ যোগ্য জমি রয়েছে ১লাখ ১৫ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে চলতি মৌসুমে ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৯১৬ হেক্টর জমি। সেখানে আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং সুসম সারের ব্যবহারসহ সুসম সেচ ব্যবস্থা ও শষ্য সংরক্ষনের ব্যবস্থা নেয়ায় ফলন বেশী হয়েছে। উচ্চ ফলনশীল ভুট্টা বিঘা প্রতি ৩০ মন ফলন হয়েছে। ভুট্টা চাষীরা এবার ভুট্টার দাম গত বছরের চেয়ে কম পাওয়ায় ভুট্টা চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে।
কুষ্টিয়া শহরতলী বাড়াদী গ্রামের ভুট্টা চাষী হাসান আলী বলেন, এ বছর ভুট্টা ভালো হয়েছে। উন্নত মানের বীজ বপন করায় ভালো ফরন পেয়েছি। তবে ভুট্টার দাম হঠাৎ করে পড়ে যাওয়ায় লাভ হবে না। প্রথমে প্রায় দেড় হাজার টাকা মন দরে ভুট্টা বিক্রি হয়েছে তা বর্তমানে কমে ৯’শ থেকে ৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে চলতি মৌসুমে ভুট্টা চাষে সরকারী ভাবে সহযোগীতা পায়নি বলে অনেক চাষী ক্ষোভ প্রকাশও করেছে।
মোল্লা তেঘরিয়ার চাষী কমর আলী বলেন, জেলার অধিকাংশ চাষী পরের জমি বরগা নিয়ে ভুট্টা চাষ করলেও তারা এবার ভুট্টা আবাদ করে লাভবান হতে পারছেনা। বিঘা প্রতি যে ফলন হয়েছে তা বিক্রি করে জমির মালিককে অর্ধেক এবং সার, কীটনাশক, পানি ও শ্রমের দাম দিতে যেয়ে বরগা চাষীদের কিছুই থাকছেনা।
কুষ্টিয়ার গোপালপুরে চাষী কহর আলী বরেন, তিনি ৯ কাঠা জমিতে ভুট্টা রোপন করে ভালো ফলন পেয়েছে। সেচের মূল্য বৃদ্ধি, তেলের দাম বেশীর পাশাপাশি সার এবং শ্রমিকের মূল্য বেশী হওয়ায় ভুট্টা ক্ষেত করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। ভুট্টার দাম না পেলে আগামীতে ভুট্টা লাগানো ছেড়ে দিবেন বলেও তিনি জানান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপ পরিচালক ড. হায়াৎ মাহমুদ বলেনকুষ্টিয়া জেলার আবাদযোগ্য জমির ৯০ ভাগ জমিতে এবার বোরো ধান চাষের পাশাপাশি ভুট্টার আবাদ কিছুটা বেড়েছে। যে পরিমান জমিতে ভুট্টা আবাদ হয়েছে তাতে করে বাম্পার ফলন হয়েছে। ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাত কৃষক পর্যায় পৌছে যাওয়ায় এবং সুসম সার ব্যবহার করায় ফলন ভালো পেয়েছে চাষীরা। তিনি বলেন, মাঠ পর্যায় কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা চাষীদেরকে সার্বক্ষনিক পরামর্শ দেয়ায় ভুট্টার আবাদ যেমন বেড়েছে তেমনি ফলনও পেয়েছে ভালো। আগামীতে আরো বেশী জমিতে ভুট্টা আবাদ হবে বলে তিনি ধারনা করছেন।
কুষ্টিয়া জেলায় ভুট্টার বাম্পার ফলন হলেও খরচের তুলনায় চাষীরা লাভবান হতে পারছেনা। তাই দেশকে খাদ্যে স্বংয় সম্পূর্ন করতে এবং ধানের আবাদের পাশাপাশি ভুট্টার আবাদ বাড়াতে চাষীদের তেলের মূল্য কমিয়ে ভুট্টার মূল্য বুদ্ধি করলে এ জেলার চাষীরা আরো ভুট্টা আবাদে ঝুকে পড়বে বলে এমনটি মন্তব্য করছে চাষীরা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads