প্রত্ন পর্যটনে কুমিল্লার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। আরো কিছু প্রত্নস্থাপনা খনন,হোটেল ও খাবার রেস্তোরাঁ স্থাপন করা হলে কুমিল্লা হয়ে উঠবে দেশের সেরা পর্যটন এলাকা। কুমিল্লা শালবন বৌদ্ধ বিহার ও লালমাই পাহাড়কে ঘিরে এ সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে।
এদিকে লালমাই পাহাড়ের ঘুমিয়ে আছে ১৩শত বছরের প্রাচীন আরো ৪৪টি স্থাপনা। এগুলোও খনন করে এখানে পর্যটনের নতুন দিগন্তের দ্বার খোলা যায়।
সূত্র মতে, কুমিল্লা নগরীর কোটবাড়িতে ১৯৪৩ সালে ব্রিটিশ সরকার ৫৬টি প্রত্ন স্থাপনা শনাক্ত করে। এগুলো সপ্তম শতকের স্থাপনা। কারো মতে,সমতট রাজ্যের রাজধানী এই অঞ্চল। কারো মতে,বৌদ্ধ ধর্মের ধর্মীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে পড়তে আসতো পৃথিবীর বিভন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীরা। ১৯৫৬ সালে এখানে খনন শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ১৪টি স্থাপনা খনন করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য-শালবন বৌদ্ধ বিহার,ইটাখোলা মুড়া,রুপবান মুড়া,লতিকোট মুড়া,ভোজ বিহার,আনন্দ বিহার,কুটিলা মুড়া,চারপত্র মুড়া,ময়নামতি ১,২,৩,রানী ময়নামতি প্রাসাদ ও সর্বশেষ খনন হাতিগাড়া মুড়া। খনন করা স্থাপনার সবগুলোর সৌন্দর্য বর্ধন করে টিকেটের আওতায় আনা হলে দর্শনার্থীদের আগ্রহ বাড়বে, বৃদ্ধি পাবে সরকারের রাজস্ব আয়।
এদিকে শালবন বৌদ্ধ বিহার ও ময়নামতি জাদুঘরের একটি সূত্র জানায়,রানীর ময়নামতির প্রাসাদ থেকে চন্ডিমুড়া পর্যন্ত একটি প্রত্ন হাইওয়ে করা যেতে পারে। এতে এখানে পর্যটকের ঢল নামবে। কারণ নিকটবর্তী এত গুলো প্রত্ন স্থাপনা পৃথিবীর কম দেশেই আছে। প্রত্ন হাইওয়ে সবগুলো প্রত্ন সাইট ঘেঁষে অতিক্রম করবে। এই এলাকায় শুধু পর্যটকের পরিবহন চলবে। হাইওয়ে চালু হলে এই এলাকায় এক হাজার রুমের একাধিক হোটেলও তখন চালু করা যাবে।
সম্প্রতি শালবন বৌদ্ধ বিহারে দেখা যায়, অফিস খোলার দিনেও দর্শনার্থীর প্রচুর ভিড়। যে যার মতো ঘুরে দেখছেন। কেউ ছবি, কেউ সেলফি তুলছেন। একদল শিক্ষার্থী এসেছেন ঢাকা তিতুমীর কলেজ থেকে। তারা গিটার নিয়ে বসে গান গাইছেন। তাদের একজন বলেন,যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। ঢাকা থেকে কুমিল্লা সকালে এসে ঘুরে ফিরে বিকালে ফেরা যায়। তাই আমরা সময় ফেলে এদিকে ঘুরতে আসি। দূরের দর্শনার্থীদের জন্য থাকার হোটেল ও খাবার রেস্তোরাঁ থাকলে দর্শনার্থীরা আরো বেশি ঘুরতে আসবেন।
ঐতিহ্য কুমিল্লার পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল বলেন, প্রত্ন পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় জনপদ কুমিল্লা। এখানে বহু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। তা সত্ত্বেও সত্যিকার পর্যটন নগরী বলতে যা বুঝায় কুমিল্লা এখনো তা হয়ে ওঠেনি। এর অন্যতম কারণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং রাজনৈতিক নেতাদের উদাসীনতা। এজন্য প্রত্ন স্থাপনা খনন,হোটেল ও খাবার রেস্তোরাঁ স্থাপন করতে হবে। এতে লালমাই পাহাড় ঘিরে কুমিল্লা হয়ে উঠবে দেশের সেরা পর্যটন এলাকা।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. আতাউর রহমান বলেন,এই করোনায়ও এখানে দর্শনার্থীদের ভালো সমাগম হচ্ছে। প্রত্ন পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় অঞ্চল কুমিল্লা। এখানে বহু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে, যা এখনো খননের বাকী রয়েছে। এগুলো খনন হলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। এছাড়া হোটেল ও খাবার রেস্তোরাঁ স্থাপন হলে দর্শনার্থীদের আগ্রহ বাড়বে।