কিশোরগঞ্জে নদীর তীরভূমিতে প্রভাবশালীর অবৈধ স্থাপনা নিমার্ণ
আবু হাসান শেখ, কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি: নদীর তীরভূমি (পাড়) যেন নিজের ভূমি। তাই আপন মনে নদীর তীরভূমিতে ইট—বালু—সিমেন্ট দিয়ে গড়ে তুলছে আবাস (গৃহ)। উপজেলা প্রশাসনিক চত্ত্বর থেকে প্রধান বাজার,থানা, হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিসের সাথে যোগাযোগের মাঝস্থলে অবস্থিত একমাত্র ব্রীজটি সংলগ্ন ধাইজান নদীর তীরভূতিতে পাঁকা ভবনের নিমার্ণ কাজ করায় হুমকীর মুখে পড়েছে ব্রীজটি। যেন নদীটি এতিম, দেখার কেউ নেই। ঘটনাটি নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার কিশোরীগঞ্জ বহুমুখী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন ধাইজান নদীর উপরে অবস্থিত ব্রীজের স্থানে। ফলে বর্ষাকালে ভাঙ্গণের হুমকীতে পড়েছে ব্রীজটি।
কিশোরগঞ্জ উপজেলার প্রধান বাজার, হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন, থানা, ভূমি অফিস, সাব—রেজিস্ট্রারের কার্যালয়, কিশোরীগঞ্জ সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়, কৃষি অফিস, এজিইডি, পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস। এর মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে ধাইজান নদী। এ নদীর উপরে অবস্থিত ব্রীজটি। এর পাশে রয়েছে হাসি ট্রেডার্স নামে রড—সিমেন্ট, টাইলসের বড় একটি দোকান। দোকানের মালিক তার দোকানের পার্শ্ববতীর্ স্থানে মাটি ভরাট করতে করতে নদীর তীরভূমি (পাড়) ভরাট করে ফেলে। সম্প্রতি তিনি দোকান সংলগ্ন ওই তীরভূমিতে রড—সিমেন্ট—ইট—বালু দিয়ে ভবনের জন্য পিলার ও ওয়াল নিমার্ণ করে ফেলেছে। ইতোমধ্যে যা রাস্তা সমান নিমার্ণ হয়েছে। ফলে বষার্কালে পানি প্রবাহের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে ব্রীজটির অন্য প্রান্তের তীরভূমিতে (পাড়ে) পানি প্রবাহের চাপে ব্রীজটির কর্ণার ভেঙ্গে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। ব্রীজটি ভেঙ্গে গেলে উপজেলার সাথে বিভাগীয় শহর রংপুর, জেলা শহর নীলফামারী, উপজেলার প্রধান বাজার, হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন, থানা, ভূমি অফিস, সাব—রেজিস্ট্রারের কার্যালয়, কিশোরীগঞ্জ সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়, কৃষি অফিস, এজিইডি, পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসসহ সাধারণ মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে। বাইপাস সড়ক না থাকায় অন্য প্রান্তের সাধারণ মানুষ, অফিস, প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হবে উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরের সাথে।
সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে— ধাইজান নদীর উপরে অবস্থিত ব্রীজটির পিলারের কাছেই নদীটি’র তীরভূমিতে মাটি ভরাট করে হাসি ট্রেডার্সের মালিক ফরহাদ হোসেন স¤্রাট আবাস (গৃহ) নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে রাস্তা বরাবর হয়েছে। এ অবৈধ স্থাপনা তৈরি করায় সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে নদীটি। হারাচ্ছে ভূ—প্রাকৃতিক অস্তিত। ধীরে ধীরে নদীটির যেন অপমৃত্যু হয় সেভাবেই ওয়াল ও পিলার নিমার্ণ করা হয়েছে বলে অনেকে মন্তব্য করছেন।
নদী তীরভূমিতে স্থাপনা নির্মাণকারী ফরহাদ হোসেন স¤্রাট সাবেক বিডিআর সদস্য ও নীলফামারী—৪ আসনের এমপি পদে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে পোস্টারও সাঁটিয়ে ছিলেন নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থানে।
সাধারণ মানুষ বলছেন— সরকার নদী রক্ষায় সম্প্রীতি নদীটি কোটি কোটি টাকা খরচ করে খনন করেছে বাঁচানোর জন। অন্যদিকে নদীটিকে মেরে ফেলার জন্য ব্রীজটি সংলগ্ন নদীর জায়গায় স্থাপনা করছে ওই ব্যক্তিটি। প্রভাবশালী বলেই নদীর জায়গায় স্থাপনা করছে। যেন ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতিতে যে যেভাবে পারে এই দখলদারিত্ব চালিয়ে যাক। তাই নদীটি রক্ষায় উর্দ্ধতন কতৃর্পক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে নদীর তীরভূমিতে (পাড়ে) আবাস (গৃহ) নিমার্ণকারী ও হাসি ট্রেডার্সের মালিক ফরহাদ হোসেন স¤্রাটের সাথে কথা হলে তিনি জানান—আমার নিজস্ব জায়গায় স্থাপনাটি করা হচ্ছে। জায়গাটি কত শতাংশ আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন—জমি কিনবেন নাকি। আরও বলেন জমির কাগজপত্র সেটেলমেন্ট, ভূমি অফিস ও রেজিস্ট্রি অফিস গিয়ে দেখেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সৈয়দপুরের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা উপ—বিভাগীয় প্রকৌশলী মুন্না জানান— আমরা সার্ভেয়ার পাঠিয়েছিলাম। ওই ব্যক্তি আমাদের সার্ভেয়ারকে বলেছেন ভূমি অফিস থেকে মাপযোগ করা হয়েছে। এরপরেই আমি স্থাপনার কাজশুরু করেছি।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সানজিদা রহমান জানান— স্থাপনাটি যদি নদীর জায়গায় হয়ে থাকে, আমরা তা ভেঙ্গে ফেলবো। আমরা ওই জায়গাটি মাপযোগ করি নাই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর—ই—আলম সিদ্দিকী জানান— স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি শুনেছি। নদীর জায়গায় স্থাপনাটি হলে মাপযোগের পরেই তা ভেঙ্গে ফেলা হবে।