কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি:
কিশোরগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার তানিয়া ইসলাম ঝুমুর। যোগদানের পর থেকে তার বিরুদ্ধে সংস্কৃতি কর্মীদের একের পর এক অভিযোগ উঠতে থাকে। গত ৮সেপ্টেম্বর থেকে শিল্পিরা তার অপসারনসহ শিল্পকলা সংস্কারে ৪দফা দাবিতে আন্দোলনে নামে। পরে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও শিল্পকলা সভাপতি আবুল কালাম আজাদ শিল্পীদের আশ্বস্ত করেন এবং বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কালচারাল অফিসার কে কাজ থেকে বিরত রেখে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবু রাসেলকে দায়িত্ব দেন।
কিন্তু এরপর থেকেই নানা অভিযোগ আরো দানা বাঁধতে থাকে শিল্পীদের মাঝে। আন্দোলনকারী শিল্পীরা অভিযোগ করে নানাভাবে তাদেরকে হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে। এমনকি শিল্পকলা থেকে বিভিন্ন ফাইল ও প্রমাণপত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে ইউএনও সদর একজন প্রতিনিধি পাঠিয়ে শিল্পকলার তার কক্ষ তালাবদ্ধ করে রাখেন।
কিন্তু এতেও থেমে থাকেননি কালচারাল অফিসার তার অধীনে কর্মরত প্রশিক্ষক সহ বেশ কয়েকজন শিল্পী কে নিয়ে একটি দল তৈরি করেন। তাদেরকে ভুল বুঝিয়ে কাউকে চাপ প্রয়োগ করে একটি ভুয়া স্মারকলিপি জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠানো হয়। স্মারক লিপিতে স্বাক্ষরিত সাংস্কৃতিক কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে বেশিরভাগ লোকজনই জানান তারা না বুঝে এমনকি তাদের ভুল বুঝিয়ে এই স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে।
একতা নাট্যগোষ্ঠী অধিকর্তা ও শিল্পকলা একাডেমির নৃত্য প্রশিক্ষক বাবু মানুষ কর বলেন, "একজন শিল্পী হিসাবে আমি চাই শিল্পকলা শিল্প বান্ধব হোক। আন্দোলনকারীদের যৌক্তিক দাবির পক্ষে আমি নিজেও। কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না। আমি এখানে চাকরি করি, আমার কাছে কাগজ পাঠানো হয়েছে স্বাক্ষর করার জন্য, আমি বারবার বলেছি লেখাটা দেখানোর জন্য আমাকে দেখানো হয়নি শুধু একটা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে।
সিনিয়র সঙ্গীত শিল্পী ও নজরুল সংগীত একাডেমীর সভাপতি আবুল হাসেমের কাছে স্বাক্ষরের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমাকে ভুল বুঝানো হয়েছে। আমাকে বলছে ব্যক্তিগতভাবে তাকে কয়েকজন বিরক্ত করছে। তার পক্ষে একটা স্বাক্ষর দেন। কিন্তু শিল্পকলা সংস্কারে যে আন্দোলন হচ্ছে তার বিরুদ্ধে স্বাক্ষর সেটা আমাকে বলা হয়নি। আমাকে ভুল বুঝিয়ে তারা স্বাক্ষর নিয়ে গেছে। আমিও ব্যক্তিগতভাবে চাই শিল্পকলা সংস্কার হোক। "
শিল্পকলার আন্দোলনের সমন্বয়ক ইফতেখার হোসেন সাকিব বলেন, তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। তিনি সরকারি চাকরি করেন বদলি তো তার কোন না কোন সময় হবেই। কিন্তু তার প্রয়োজনে এখন শিল্পীদের মধ্যে বিভিন্ন বিভাজন তৈরি করছে। যারা আন্দোলন করছে তাদেরকে বিভিন্ন ট্যাগ লাগিয়ে করে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। অথচ আমরা গণঅভ্যুত্থানের সামনের সারিতে ছিলাম আমাদেরকেই ট্যাগ দিচ্ছে বলছে আমরা নাকি ফ্যাসিবাদী। শিল্পীদের তো কোন দল হয় না। সে মূলত শিল্পীদের মধ্যে একটা সংঘাত লাগানোর চেষ্টা করছে যেন সে এখানে বহাল থাকতে পারে। আর ফ্যাসিবাদি কর্মকান্ড চালিয়ে যেতে পারে। তার অপসারণ ও চার দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।
এ ব্যাপারে দায়িত্বরত শিল্পকলার এ্যাডক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবু রাসেলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উনার ব্যাপারে ডিসি স্যারের সঙ্গে কথা হয়েছে। আর দু-একদিনের মধ্যেই শিল্পকলার ডিজি মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে এর একটা ব্যবস্থা নিবেন।
অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন আওয়ামিলীগ সরকারের শক্তিবলে নানাভাবে শিল্পকলাকে মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছিল। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে নানান কৌশলে শিল্পকলা বিমুখ করে রাখার অভিযোগ ছিল বহুদিন ধরেই। সরকারি নানা আয়োজনের পাশাপাশি আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক অনুষ্ঠানকে গুরুত্ব দিয়ে নিয়মিত বাতিল করা হতো সংগঠনগুলোর হল বরাদ্দ।
এছাড়াও শিল্পিরা শিল্পকলার বারান্দায় রিহের্সাল করতে গেলে ৫০০টাকা ও বসে সাংগঠনিক আড্ডা দিলেও ১৫০০টাকা ভাড়া দাবি করা হতো। কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে তাকে অপমান ও ভয়ভীতি দেখানো হতো। ফলে শিল্পিরা যখন বিমুখ হতে থাকে তখন সে গড়ে তুলে এক বড় সিন্ডিকেট। মুষ্টিমেয় কয়েকজনকে নানা সুবিধা দিয়ে তাদের নিয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলার নানা প্রকল্প আত্মসাৎসহ নানা কর্মকাণ্ডে হয়ে উঠে অঘোষিত কালচারাল টেরোরিস্ট। এমনটি দাবি জেলার অধিকাংশ সাংস্কৃতিক কর্মীর।