কান্তনগর মন্দির

কান্তনগর মন্দির

সংরক্ষিত ছবি

ফিচার

কান্তনগর মন্দির

  • দিনাজপুর প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৪ জুলাই, ২০১৮

কান্তনগর মন্দির (কান্তজির মন্দির নামেও পরিচিত) বাংলাদেশের প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কারুকার্যময়। দিনাজপুর শহর থেকে ১২ মাইল উত্তরে ঢেপা নদীর তীরে, কান্তনগর গ্রামে অবস্থিত এ প্রাচীন মন্দিরটি নির্মাণ করেন মহারাজা প্রাণনাথ ও তার পুত্র মহারাজা রামনাথ।  বাংলার স্থাপত্যগুলোর মধ্যে বিখ্যাত এ মন্দিরটির বিশিষ্টতার অন্যতম কারণ হচ্ছে পৌরাণিক কাহিনীসমূহ পোড়ামাটির অলঙ্করণে দেয়ালের গায়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এ নবরত্ন বা ‘নয় শিখর’যুক্ত হিন্দু মন্দিরের চূড়া হতে আদি ৯টি শিখর ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশের সর্বোৎকৃষ্ট টেরাকোটা শিল্পের নিদর্শন রয়েছে এ মন্দিরে।

১৭২২ সালে মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু করেন দিনাজপুরের মহারাজা প্রাণনাথ রায়। যদিও নির্মাণকাজ শেষ হয় তার পোষ্যপুত্র রামনাথ রায় কর্তৃক ১৭৫২ সালে। শুরুতে মন্দিরের চূড়ার উচ্চতা ছিল ৭০ ফুট। ১৭৫২ সালে মন্দিরটি উৎসর্গ করা হয়। ১৮৯৭ সালে মন্দিরটি ভূমিকম্পের কবলে পড়লে এর চূড়াগুলো ভেঙে যায়। মহারাজা গিরিজানাথ মন্দিরের ব্যাপক সংস্কার করলেও চূড়াগুলো আর সংস্কার করা হয়নি। কিছু মানুষের ধারণা, মন্দিরটি এক রাতে তৈরি হয়েছিল। মন্দির প্রাঙ্গণ আয়তাকার হলেও, পাথরের ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো ৫০ ফুট উচ্চতার মন্দিরটি বর্গাকার। মন্দিরটি তিন তলাবিশিষ্ট। প্রতিটি তলার চারপাশে বারান্দা রয়েছে। মন্দিরের বাইরের দেয়ালজুড়ে পোড়ামাটির ফলকে দেবমূর্তির ছবি খোদাই করা রয়েছে, যা রামায়ণ, মহাভারত এবং বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনীর কথা বর্ণনা করে। মন্দিরের পশ্চিম দিকের দ্বিতীয় বারান্দা থেকে সিঁড়ি উপরের দিকে উঠে গেছে। মন্দিরের নিচ তলায় ২৪টি, দ্বিতীয় তলায় ২০টি এবং তৃতীয় তলায় ১২টি দরজা রয়েছে। যত্নের অভাবে মন্দিরটি বিলুপ্তির পথে।

মন্দিরের নির্মাণ তারিখ নিয়ে যে সন্দেহ ছিল তা অপসারিত হয় মন্দিরের পূর্বকোণের ভিত্তি দেয়ালের সঙ্গে সংযুক্ত সংস্কৃত ভাষার লেখা কালানুক্রম জ্ঞাপক একটি শিলালিপি থেকে। সূত্র অনুযায়ী দিনাজপুরের মহারাজ প্রাণনাথ ১৭২২ সালে এ মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু করেন এবং তার স্ত্রী রুকমিনির আদেশে পিতার ইচ্ছা পূরণ করার জন্য মহারাজের দত্তকপুত্র মহারাজ রামনাথ ১৬৭৪ শকে (১৭৫২ সালে) এ মন্দিরটির নির্মাণ সম্পন্ন করেন। যা হোক, বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মহারাজা গিরিজানাথ বাহাদুর ধ্বংস হয়ে যাওয়া নয়টি শিখর বাদে মন্দিরটির ব্যাপক পুনর্গঠন করেছিলেন। এ জমকালো পিরামিড আকৃতির মন্দিরটি তিনটি ধাপে উপরে উঠে গেছে এবং তিন ধাপের কোণগুলোর উপরে মোট ৯টি অলঙ্কৃত রথ দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিবছর সেই মহারাজাদের আমল থেকে এখন পর্যন্ত রাস পূর্ণিমা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কয়েক লক্ষাধিক ভক্তের সমাগমে এই উৎসব চলে মাসব্যাপী।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads