বর্তমানে সাইবার অপরাধীদের অন্যতম লক্ষ্যবস্তু হলো বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে থাকা গ্রাহকদের বিপুল পরিমাণ তথ্য। এর কারণ একটিই। তথ্য যে অমূল্য সম্পদ। গ্রাহকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর, ক্রেডিট কার্ড নম্বর তো বটেই, ইমেইল ঠিকানা, ফোন নম্বর সবই অনেক মূল্যবান। এসব তথ্য হাতিয়ে নিয়ে সেগুলো বিক্রি করে দেওয়া হয় তৃতীয় পক্ষের কাছে, যারা বিভিন্নভাবে এসব তথ্য কাজে লাগায়।
প্রতি মুহূর্তেই অনলাইনে আমাদের কেউ না কেউ নজরদারি করছে, চুরি হচ্ছে নানা তথ্য। সিক্রেট সার্ভিসেস, সরকারি বাহিনী, সাইবার অপরাধী সবাই আছে এ তালিকায়। এতে করে ঝুঁকিতে পড়ছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং সেই সঙ্গে তৈরি হচ্ছে নিরাপত্তা ঝুঁকিও।
নিজেকে এসব নজরদারি থেকে নিরাপদ রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো অনলাইন থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া। কিন্তু প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে যেভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে, তাতে অনলাইন থেকে দূরে থাকা সম্ভব নয়। তাই অনলাইন নিরাপদ থাকার জন্য কিছু ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, যার মধ্যে অন্যতম হলো শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থার অ্যানোনিমাস ব্রাউজার ব্যবহার। এমনই চারটি প্রাইভেট ব্রাউজারের খবর থাকছে আজ।
টর ব্রাউজার
অনলাইনে যেসব প্রাইভেট বা অ্যানোনিমাস ব্রাউজার পাওয়া যায়, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত ও জনপ্রিয় হলো দ্য অনিয়ন রাউটার বা টর ব্রাউজার। টর নেটওয়ার্কের মূল লক্ষ্য হলো অ্যানোনিমাস কমিউনিকেশন। একজন ব্যবহারকারীর অবস্থান থেকে শুরু করে ব্রাউজিং হিস্ট্রি, ব্যক্তিগত তথ্য এবং অনলাইনে আদান-প্রদান করা সব ধরনের তথ্য নিরাপদ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি রয়েছে এ ব্রাউজারটিতে।
মূলত এসব তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার জন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রোগ্রাম নেটওয়ার্ক ট্রাফিক অ্যানালাইসিস করে থাকে। সাধারণ এনক্রিপশনের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক ট্রাফিক অ্যানালাইসিস থেকে ব্যবহারকারীর পাঠানো সম্পূর্ণ ডাটা সুরক্ষিত রাখা যায় না। তবে এখানেই আলাদা টর ব্রাউজার। এ ব্রাউজার থেকে পাঠানো ডাটা অসংখ্য স্তরে রিলে হয়ে অন্য প্রান্তে পৌঁছে ফলে নেটওয়ার্ক ট্রাফিক অ্যানালাইসিসের মাধ্যমেও কেউ এসব তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে না। সহজ ভাষায় বললে এক প্রান্ত থেকে সরাসরি অপর প্রান্তে পাঠানোর পরিবর্তে তথ্য পাঠানো হয় অনেক রাস্তা ঘুরিয়ে। বর্তমানে অনেক নিরাপত্তা সংস্থাও এই ব্রাউজারটি ব্যবহার করে থাকে।
টর ব্রাউজার ব্যবহার করা যাবে উইন্ডোজ, ম্যাক এবং লিনআক্সে। এটি পোর্টেবল ফরম্যাটে থাকায় ইনস্টল করার প্রয়োজন পড়বে না। ব্রাউজারটির ইন্টারফেস মজিলা ফায়ারফক্সভিত্তিক। ফলে ব্যবহার করতে খুব একটা সমস্যায় পড়তে হবে না।
তবে টর ব্রাউজার ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের গতি কম পাওয়ায় অনেকের কাছেই বিরক্তিকর মনে হতে পারে। বিপুলসংখ্যক লেয়ার এবং টানেলের মধ্য দিয়ে তথ্য স্থানান্তর করায় তথ্য আদান-প্রদানের গতি কম থাকে। তবে উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে এ সমস্যা তেমন চোখে পড়বে না।
এপিক ব্রাউজার
উইন্ডোজ ও ম্যাকে ব্যবহারোপযোগী এপিক ব্রাউজার টর ব্রাউজারের মতো অনিয়ন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে না। তবে ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে, এমন বেশ কিছু বিষয় থেকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে ব্রাউজারটি। এপিক ব্রাউজারে হিস্ট্রি সংরক্ষিত হয় না, ডিএনএস প্রি-ফেচিং হয় না, থার্ডপার্টি কুকিজ সমর্থন করে না, ডিএনএস ক্যাশ সংরক্ষণ করে না এবং কোনো ধরনের অটোফিল অপশনও নেই। প্রতিবার ব্যবহার শেষে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সেশনের সব তথ্য মুছে যায়।
এসআরওয়্যার আয়রন
ওপেন সোর্স ক্রোমিয়ামভিত্তিক এ ব্রাউজারটি ব্যবহার করা যাবে উইন্ডোজ, ম্যাক, লিনআক্স ও অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে। গুগলের ক্রোমিয়ামভিত্তিক হওয়ায় এর ইন্টারফেস ক্রোমের মতোই। তবে দেখতে এক রকম হলেও দুই ব্রাউজারে মূল পার্থক্য হলো ব্যবহারকারীর তথ্য সুরক্ষার পদ্ধতি।
কমোডো ড্রাগন ব্রাউজার
ইন্টারনেট ব্যবহার নিরাপদ রাখতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফিচার রয়েছে এ ব্রাউজারে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্র্যাকিং, কুকি, স্পাইবট এবং অন্যান্য স্পাইওয়্যার ব্লক করে রাখে কমোডো। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ম্যালওয়্যার থেকে নিরাপদ রাখার জন্য এতে রয়েছে কমোডো অ্যান্টিভাইরাস। ব্রাউজারটি পাওয়া যাবে উইন্ডোজ ও ম্যাকের জন্য।