অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমবায়ের ভূমিকাকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। সমবায়ের জন্য প্রয়োজন সঞ্চয়, আর সঞ্চয়ের জন্য প্রয়োজন সঞ্চয়ী মনোভাব। তাই সঞ্চয়ী প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে এলে অর্থনৈতিক ভিত্তি যে মজবুত হবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। মৌমাছির কথাই ধরা যাক। সৃষ্টিকুলের সবচেয়ে পরিশ্রমী এই ক্ষুদ্র প্রণীটি সারাদিন ফুলে ফুলে বিচরণ করে বিন্দু বিন্দু মধু সংগ্রহ করে। আবার অসময়ে সে মধু পান করে তারা জীবন ধারণ করে। সমবায়ের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। আমরা জানি, সমবায়কে কাজে লাগিয়ে ভারত অবিস্মরণীয় সফলতা অর্জন করেছে। জাপান, স্ক্যান্ডিনেভিয়ানের রাষ্ট্রে সমবায়কে অর্থনীতির তৃতীয় খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। নরওয়ে, সুইডেনের মতো দেশেও সমবায়ের মাধ্যমে কল্যাণমুখী অর্থনীতি গড়ে উঠেছে। কাজেই সমবায়কে কাজে লাগিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, উৎপাদন এবং বিতরণ ক্ষেত্রে আশাতীত ফল পাওয়া এবং এর মাধ্যমে দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। সরকার দেশ ও জনগণের স্বার্থে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সমবায়ী অভিজ্ঞতাকে মডেল হিসেবে কাজে লাগালে দেশের দেড় লাখ সমবায় সংগঠনের সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত ৪ কোটি মানুষ এর সুফল পাবে।
সমবায় সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘দলবেঁধে থাকা দলবেঁধে কাজ করাই মানুষের ধর্ম। যথেষ্ট পরিমাণ স্বাধীনতাকে সর্বসাধারণের সম্পদ করে তোলবার মূল উপায় হচ্ছে ধন অর্জনে সর্বসাধারণের শক্তিকে সম্মিলিত করা।’ এই সম্মিলিত শক্তিই সমবায় শক্তির নামান্তর। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরচ্ল ইসলাম বলেছেন, ওরে নিপীড়িত, ওরে ভয়ে ভীত, শিখে যা আয়রে আয়।/দুঃখ জয়ের নবীনমন্ত্র সমবায়, সমবায়। উল্লেখ করা প্রয়োজন, বাংলাদেশে সমবায় চেতনার পথিকৃৎ ব্যক্তিটির নাম ড. আখতার হামিদ খান। তিনি মেহনতি মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে সমবায় মন্ত্রে দীক্ষিত করেছেন কৃষক, শ্রমিক, আমজনতাকে। সমাজের সাধারণ, দরিদ্র মানুষের ক্ষমতায়নের ঐতিহাসিক প্রয়োজনে সমবায়কে নতুনরূপ দিয়েছেন, যার অমর সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কুমিল্লায় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড)। সমবায়ের দীক্ষ হলো, দেশের টাকায় দেশীয় প্রতিষ্ঠান। সমবায়ের মাধ্যমে সদস্যদের সঞ্চয় দিয়ে গড়ে তোলা সম্ভব শিল্পপ্রতিষ্ঠান। আমাদের টাকায় গড়ে ওঠা আমাদের প্রতিষ্ঠানে আমাদেরই কর্মসংস্থান হবে। দেশের টাকা দেশেই থেকে যাবে। আমাদের লাভ দিয়ে গড়ে উঠবে আরো নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান। এভাবেই ঘটবে সমাজে অর্থনৈতিক উন্নয়ন। দূর হবে দারিদ্র্য। মানুষে মানুষে তৈরি হবে মানবতার সেতুবন্ধন। সমবায় ব্যবস্থায় সমাজ গড়ে তুলতে পারলে বিদেশি অর্থ সাহায্যের মুখাপেক্ষী হতে হবে না। তাদের কঠোর শর্ত মেনে কাজ করতে হবে না। বিদেশি প্রতিষ্ঠান আমরা গড়ে তুললে খুব লাভ নেই। কারণ আমাদের শ্রমে যে লাভ হয় তার সিংহভাগ চলে যায় বিদেশে।
আমরা জানি, সমবায়কে কাজে লাগিয়ে ভারত অবিস্মরণীয় সফলতা অর্জন করেছে। জাপান, স্ক্যান্ডিনেভিয়ানের রাষ্ট্রে সমবায়কে অর্থনীতির তৃতীয় খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। নরওয়ে, সুইডেনের মতো দেশেও সমবায়ের মাধ্যমে কল্যাণমুখী অর্থনীতি গড়ে উঠেছে। কাজেই সমবায়কে কাজে লাগিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, উৎপাদন এবং বিতরণ ক্ষেত্রে আশাতীত ফল পাওয়া এবং এর মাধ্যমে দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। সরকার দেশ ও জনগণের স্বার্থে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সমবায়ী অভিজ্ঞতাকে মডেল হিসেবে কাজে লাগালে দেশের দেড় লাখ সমবায় সংগঠনের সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত ৪ কোটি মানুষ এর সুফল পাবে।
বাংলাদেশে সমবায়
সমবায় বাংলাদেশে কোনো নতুন ধারণা নয়। বাংলাদেশে ২০০৪ সালে সমবায়ের শতবর্ষ অতিক্রম হয়েছে। দেশে জাতীয়, কেন্দ্রীয়ও প্রাথমিক সমিতির সংখ্যা দেড় লাখেরও বেশি। তারপরও তুলনামূলকভাবে সমবায়ের দিক থেকে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। সমবায়ের মাধ্যমে বহু দেশ-জাতি তাদের ভাগ্যের চাকা, বহু মানুষ-গোষ্ঠী নিজের আর্থিক অবস্থার বিরাট উন্নত করতে পেরেছে। সমবায় সমিতির মাধ্যমে সুসংগঠিত উপায়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় ও আমানতের সমন্বয়ে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের বিশাল জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করা সম্ভব। মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সঞ্চয়ের সমন্বয় করে বহুমুখী কর্মক্ষেত্র তথা রোজগারি ক্ষেত্র সৃষ্টি করে প্রতিটি পরিবারকে আর্থিক স্বাবলম্বনের পথে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। এর ফলে পরিবারের উন্নয়ন ঘটবে। পরিবারের সদস্যদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে। স্থানীয়ভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রকল্প ও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। এর ফলে গ্রামের মানুষের শহরমুখী প্রবণতা কমবে। স্থানীয় সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হবে। মডেল গ্রাম হবে, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মডেল প্রতিষ্ঠান হবে। সমাজে অপরাধপ্রবণতা, প্রতারণা, কলহ-বিভেদ কমে আসবে। এই ধারাবাহিকতার প্রতিফলন ঘটবে গ্রামে, শহরে, সমাজে ও রাষ্ট্রে। যেহেতু সমবায় বহুমুখী কার্যক্রম সেহেতু এর সুফলও আসবে বহুমাত্রিক। একতা, জাগরণ, উৎপাদন, পক্রিয়াকরণ, বিপণন, বিতরণ এই প্রক্রিয়ায় দ্রুত আর্থসামাজিক উন্নয়ন, বেকারত্ব নিরসন সর্বোপরি দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব হবে। বাাংলাদেশ একদিন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হবে।
কৃষিক্ষেত্রে সমবায়
সমবায়ে বিশ্বের তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, ফ্রান্সের প্রতি ১০ জন কৃষকের ৯ জন সমবায়ী এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের ২৫ ভাগ সমবায়ী। জাপানে ৯১ ভাগ কৃষক সমবায় সমিতির সদস্য। কৃষি সমবায়ীদের উৎপাদিত পণ্যের মূল্য প্রায় ৯০ মিলিয়ন ডলার। কোরিয়ায় ৯০ ভাগ কৃষক, ৭১ ভাগ মৎসজীবী সমবায়ী। নরওয়েবাসীর প্রতি ৩ জনের ১ জন সমবায়ী এবং তাদের ৯৯ ভাগ ডেইরি পণ্য সমবায়ের মাধ্যমে উৎপাদিত হয়। সিঙ্গাপুরের ভোগ্যপণ্য বাজারের ৫৫ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করে সমবায়, যার বার্ষিক টার্নওভার ৭শ মিলিয়ন ডলার। নিউজিল্যন্ডে জিডিপির ২২ ভাগ আসে সমবায় থেকে। সেখানে ডেইরি সামগ্রীর ৯৫ ভাগ সমবায়ের মাধ্যমে উৎপাদিত হয়। কুয়েতে খুচরা বাজারের ৮০ ভাগ সমবায়ের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ভিয়েতনামে মোট জিডিপির ৮ দশমিক ৬ ভাগ আসে সমবায় থেকে। অতএব বিশ্ব সমবায়ের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে বাংলাদেশে কৃষিভিত্তিক ও কৃষক সমবায় সমিতি অমিত সম্ভাবনা রয়েছে।
কর্মসংস্থান ও বাজারব্যবস্থা উন্নয়নে সমবায়
কর্মসংস্থান ও বাজারব্যবস্থা উন্নয়নে সমবায় এক বিশাল শক্তি। সারা পৃথিবীর যাবতীয় কৃষি পণ্যের অর্ধেক সমবায়ের মাধ্যমে বাজারজাত হয়। ভারতের দুগ্ধ সমবায় ১১ মিলিয়ন সদস্য নেটওয়ার্ক ২২টি রাজ্যে সমবায় ফেডারেশনের মাধ্যমে ২৮৫টি জেলার এক লাখের অধিক গ্রামের পণ্য বাজারজাত করছে। তাছাড়া ১৯৯৬ সালে কো-অপারেটিভের মাধ্যমে কর্মসংস্থান হয়েছে ইউরোপে ৫ মিলিয়ন, জার্মানে ৫ লাখের অধিক, কানাডায় ৭৩ হাজার, কুইবেক প্রদেশে ৪২ হাজার লোকের। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী সমবায়ের মাধ্যমে সারা বিশ্বে প্রায় একশ মিলিয়ন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। সমবায়ের সফল উদাহরণ বাংলাদেশেও আছে। বাংলাদেশি মিল্কভিটা ৩ লাখ সমবায়ী দুগ্ধ উৎপাদনকারীর আয় ১০ গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আবার তরুণ বন্ধুদের উদ্যোগে ৩৫০ টাকার সমবায় সমিতি করে ২৫ বছরে বাংলাদেশে ১৫০ কোটি টাকার সফল সমবায়ী প্রতিষ্ঠান কিংশুকের নাম সবারই জানা আছে।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ইতিবাচক
সমাজ বিশ্লেষকদের অভিমত, সমবায়ের মূলধারা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ইতিবাচক। সমবায়ের মূলকথা, আমাদের সঞ্চয়, আমাদের বিনিয়োগ, আমাদের সমৃদ্ধি। সমবায়ের লক্ষ্য হলো স্বাবলম্বন ও স্বনির্ভরতা। বাংলাদেশের সংবিধানে উৎপাদন ও মালিকানা ব্যবস্থায় ‘সমবায়’কে একটি অন্যতম খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ১৯৯৫ সালে ইউএনডিপি-আইএলও-এর এক যৌথ মিশন বাংলাদেশে সমবায় উন্নয়ন, কর্মপরিকল্পনা ও কৌশলবিষয়ক একটি রিপোর্ট সরকারের কাছে দাখিল করে। রিপোর্টে দারিদ্র্য বিমোচনে সমবায়কে সম্পৃক্তকরণসহ জাতীয় সমবায় নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে একটি উন্নত বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার সুস্পষ্ট অঙ্গীকার নিয়ে বর্তমান সরকার ঘোষণা করেছে রূপকল্প-২০২১। রূপকল্প বাস্তবায়নে সমবায়কে কাজে লাগিয়ে ২২টি লক্ষ্য অর্জনে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। লক্ষ্যগুলো হলো-বিকাশমান অর্থনীতি, দারিদ্র্য মুক্তি, অংশীদারিত্বমূলক সহিষ্ণু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, সামাজিক ন্যায়বিচার, নারীর সমনাধিকার, আইনের শাসন, মানবাধিকার, সুশাসন ও দূষণমুক্ত পরিবেশ প্রভৃতি।
রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কারের অর্থ দিয়েছিলেন সমবায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য
দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য সমবায়কে গুরুত্ব দিয়েছিলেন প্রজাদরদি জমিদার কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ তার নোবেল পুরস্কারের অর্থ দিয়েছিলেন সমবায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘সমবায়নীতি-১’ প্রবন্ধে বলেছেন, ‘আমাদের টাকার অভাব আছে এ কথা বলিলে সবটা বলা হয় না। আসল কথা, আমাদের ভরসার অভাব। তাই আমরা যখন পেটের জ্বালায় মরি তখন কপালের দোষ দেই। আমাদের নিজের হাতে যে কোনো উপায় আছে একথা ভাবতেও পারি না। যে দেশে গরিব ধনী হইবার ভরসা রাখে, সে দেশে সেই ভরসাই একটা মস্ত ধন।’ সমবায়ের মূলমন্ত্রও তাই। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, একা একা ভাত খেলে পেট ভরে, কিন্তু পাঁচজনে বসে একত্রে খেলে পেটও ভরে, আনন্দ হয় এবং পরস্পরের মধ্যে সম্প্রীতির ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। দারিদ্র্য বিমোচন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশের বিপর্যয় প্রতিরোধ এবং খাদ্য নিরাপত্তাবলয় সৃষ্টিতে অন্যতম ও উৎকৃষ্ট পদ্ধতি হচ্ছে সমবায়ী উদ্যোগ। পুঁজিবাদী ব্যক্তিমালিকানা বা সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় মালিকানা উভয়ের যেসব ঐতিহাসিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে সমবায়ের একটি মডেল হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ অনেক বেশি। এ কারণে সমবায়কে দিতে হবে নতুন উদ্দীপনা, সরকারি সব সহযোগিতা, আইন ও বিধিমালা সহজ করে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ। দেখা গেছে জার্মানি, ডেনমার্ক, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড অথবা অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত বিশ্বে সমবায় অঙ্গনে বৃহৎ পুঁজির অনুপ্রবেশের ফলে সমবায় সমিতিগুলো অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে এবং বিশ্ববাজারে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে।
রূপকল্প বাস্তবায়নে সমবায়
বর্তমান সরকারের প্রধান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশের টেকসই উন্নয়নে সমবায়ের মাধ্যমে রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের রূপরেখা ঘোষণা করেছেন। ২০২১ সালে একটি উন্নত বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার সুস্পষ্ট অঙ্গীকার নিয়ে বর্তমান সরকার ঘোষণা করেছে রূপকল্প-২০২১। রূপকল্প বাস্তবায়নে সমবায়কে কাজে লাগিয়ে বিকাশমান অর্থনীতি, দারিদ্র্য মুক্তি, অংশীদারিত্বমূলক সহিষ্ণু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, সামাজিক ন্যায়বিচার, নারীর সমনাধিকার, আইনের শাসন, মানবাধিকার, সুশাসন ও দূষণমুক্ত পরিবেশসহ ২২টি লক্ষ্য অর্জনে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চ ১৯৭৫ স্বাধীনতা দিবসের র্যালিতে সমবায় আন্দোলনের মাধ্যমে সোনার বাংলা গড়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, ‘আগামী ৫ বছরে সরকার বাধ্যতামূলকভাবে ৬৫ হাজার গ্রামে বিভিন্নমুখী সমবায় চালু করবে।’ বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে সমবায়ের মাধ্যমে দেশের জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন বাঙালি জাতির সাঁইকি। তাই তিনি সবরকম উন্নয়নের কথা ভেবেছিলেন দেশের আপামর জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে। ৩০ জুন ১৯৭২ বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন আয়োজিত সমবায় সম্মেলনের ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘সমবায়ের পথ-সমাজতন্ত্রের পথ, সমবায়ের পথ-গণতন্ত্রের পথ।’ কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সমবায়ী চেতনা এই মূলধারা থেকে দেশ অনেকটাই বিচ্যুত। গণমুখী সমবায়ে বঙ্গবন্ধুর সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রের দৃষ্টিভঙ্গির কথা পাঠ্যসূচিতে উঠে আসা দরকার। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার উৎপাদন যন্ত্র, উৎপাদন ব্যবস্থা ও বণ্টন প্রণালিসমূহের মালিক বা নিয়ন্ত্রক হিসেবে সমবায়কে দ্বিতীয় স্থানে নির্ধারণ করে আইন প্রণয়ন করেন। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা দেন, সমবায় হবে সম্পূর্ণ গণমুখী ও গণতান্ত্রিক এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় এর নীতি হবে সমাজতান্ত্রিক ও আন্তর্জাতিক।
লেখক : কৃষি-অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়ন বিশ্লেষক