কর্মক্ষেত্রে সফলতার লড়াই

কর্মক্ষেত্রে সফলতার লড়াই

প্রতীকী ছবি

ফিচার

ক্যারিয়ার-সাফল্য

কর্মক্ষেত্রে সফলতার লড়াই

  • ফয়জুন্নেসা মণি
  • প্রকাশিত ৬ অগাস্ট, ২০১৮

পেশাগত জীবনে সফলতার জন্য লড়াই করাটা নতুন কিছু নয়। তবে এ লড়াইয়ে জিততে হলে শারীরিক বল প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। ক্যারিয়ারের সফলতার লড়াইয়ে প্রয়োজন বুদ্ধি, সততা, সচেতনতা আর সৃজনশীলতার অদম্য শক্তি। আপনার যোগ্যতা সম্পর্কে অন্যেরা সচেতন হলে আপনি সঠিক মর্যাদা পাবেন- এটাই স্বাভাবিক। যোগ্যতার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর অন্যতম উপায় হলো দায়িত্বশীল ভূমিকা। এটি প্রমাণ করতে পারলে অপরপক্ষের জন্যও সুবিধা। এর ফলে পেশাগত জীবনে আপনার মানসিক চাপ কমবে এবং শারীরিক-মানসিক দিক দিয়ে প্রফুল্ল থাকবেন আপনি। নিজের সম্পর্কে প্রত্যেকেরই একটি নির্দিষ্ট ধারণা আছে। এমন ধারণা থাকার তিনটি দিকও রয়েছে- এক. নিজের প্রতি বিশ্বাস, দুই. অপরের প্রতি মনোভাব, তিন. সদাচরণ বা সদ্ব্যবহার।

নিজের সম্পর্কে বিশ্বাস বলতে কিছু কিছু বিষয়কে বোঝায়, যেমন- বুদ্ধিমান, কাজে মনোযোগী, করিৎকর্মা, সৃজনশীল, দক্ষতা, সততা ও পরিপাটি জীবন। মনোভাবের মধ্যে পড়েছে— ঠিক কাজই করছি অথবা আমার কাজ সবসময় ঠিক নাও হতে পারে। ব্যবহার বলতে বোঝায়, নিজেকে কমিয়ে বলা কিংবা অতিরঞ্জিত করে নিজেকে উপস্থাপন করা, অপরকে বুঝতে পারা অথবা ভুল বোঝা। নিজের সম্পর্কে আপনার এসব ধারণাই সবার থেকে আপনাকে আলাদা করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

এক্ষেত্রে আপনার অভিজ্ঞতা আর বিচক্ষণতাই নিশ্চিত করবে অপরের সঙ্গে আপনি কীভাবে ভাব আদান-প্রদান করবেন। একবার নিজের সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি হয়ে গেলে আচার ব্যবহারের ধরনও সে অনুযায়ী নির্ধারিত হয়ে যায় অথবা করে নিতে হয়। তখন তার থেকে সরে আসতে চাইলেও নিজের ভেতর থেকে আপনি বাধাপ্রাপ্ত হবেন। মনে রাখবেন নিজের মধ্যে বাধাপ্রাপ্ত হওয়া বা এই প্রতিরোধই আপনার ব্যবহারে এনে দেবে শৈল্পিক পরিবর্তন এবং মার্জিত স্থিতিশীলতা। এর ফলে আপনি নিজেকে একবার যোগ্য বলে ভেবে নিলে পর মুহূর্তে আর আপনি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে নিজেকে কিছুতেই অপদার্থ বলে ভাবতে পারবেন না। এভাবে একবার নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারলে ভবিষ্যতে নিজের প্রভাব খাটানোর সময় আপনাকে কোনোরকম কৌশলের আশ্রয় নিতে হবে না।

এজন্য আপনাকে সচেতনভাবে দায়িত্বশীল ভূমিকায় সচেষ্ট থাকতে হবে।

এনে রাখবেন পেশাগত জীবনে সফলতার ব্যাপারটি কৌশলগত বিষয়। শুধু সততা দিয়ে, শুধু দায়িত্ব পালন করে কোনো পেশায় সফলতা অর্জন করা যায় না।

মনে রাখবেন, অন্যের কথাবার্তার সমালোচনা করা থেকে নিজের আদান-প্রদানের একটি রীতি তৈরি করে নেওয়াই ভালো। এটা ধরে নিয়েই আপনাকে এগোতে হবে যে, অন্যদের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য আপনার থেকে আলাদা হবে। তবে প্রত্যেক ব্যক্তিই ‘সঠিক’ আচরণ করছেন এই ইতিবাচক মনোভাব যেন আপনার থাকে। নিজে ইচ্ছা না করলে স্বভাব যে বদলানো যায় না, সেটাও আপনার ধরে নিতে হবে। দক্ষতা অর্জন করার পরই আপনি এভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করবেন—

*          নিজের মনোভাব প্রকাশ করতে ভয় পেলে চলবে না, সময়ের সদ্ব্যবহার করার জন্য এটা জরুরি।

*          আপনি এমন একটি পরিবেশ গড়ে তুলতে চান, যখন সবাই মনে করবেন তারা সফল হয়েছেন।

*          অন্য ব্যক্তি কপট স্বভাবের নয়— এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হলে তবেই নিজেকে জোরের সঙ্গে তুলে ধরার চেষ্টা করুন।

সততার সঙ্গে এবং সঠিক পদ্ধতিতে নিজের চিন্তা-ভাবনা, বিশ্বাস, চাহিদার কথা তুলে ধরুন প্রধান কর্তার সঙ্গে। অপরের অধিকারকে মর্যাদা দিন। শুধু দাবি করলে, জোর ফলালে বা যুক্তি দেখালে কাজ হবে না। সুতরাং নিজেকে কীভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে, সে সম্পর্কে সচেতন না থেকে শুধু অধিকার আদায়ের জন্য উঠেপড়ে লাগলে লাভ নেই। এটাও একটা মারাত্মক ত্রুটি। নিজেকে প্রমাণ করার জন্য অপরের কথা মন দিয়ে শুনুন। সহকর্মীদের সমস্যা বোঝার মতো মনোভাব দেখানোটাও আপনার বড় গুণের পরিচায়ক।

আমাদের মনেই থাকে না যে, যে কোনো পরিস্থিতিতে আগবাড়িয়ে রেগে ওঠা অথবা নিষ্ক্রিয় থাকা কোনোটাই ঠিক নয়। শান্ত মেজাজ এক্ষেত্রে যথেষ্ট উপাদেয়। উত্তেজনা আর সামান্য ভুলের কারণে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক জটিল করবেন। মনে রাখবেন, যে কোনো বিরূপ পরিস্থিতিতে সমস্যা থেকে উত্তরণের বা পরিস্থিতিকে সহজ করার একাধিক পন্থা থাকতে পারে। চরম মুহূর্তে উত্তেজিত না হওয়াটাও উত্তম উপশমায়ক। দেখবেন পরের দিন বা তারও পরে পরিবেশ অনেকটাই সহজ হয়ে পড়েছে। মনে রাখুন, মানুষকে সঙ্গে নিয়ে চলতে গেলে জীবনের প্রতিটি স্তরেই আপনাকে নিত্যনতুন সমস্যার মুখোমুখি হতেই হবে। এজন্য আপনাকে হতে হবে আত্মবিশ্বাসী, দক্ষ এবং সহনশীলতার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করতে হবে নিজেকে।

নির্ভুল হওয়া কখনোই সম্ভব নয়। কাজে-কর্মে ভুল হওয়াটা শুধু স্বাভাবিক বিষয়ই নয়, সচেতন হওয়ার ক্ষেত্রে কখনো কখনো কিছু কিছু ভুল নিয়ামকের ভূমিকা নেয়। তবে ভুলের মান, ভুলের পুনরাবৃত্তি অথবা ক্রমাগত ভুল করা শুধু পেশাগত জীবনেই নয়, ব্যক্তিজীবনের জন্যও ভালো নয়। তবে সত্যিই যদি আপনার ভুল হয়ে থাকে, তাহলে কোনোরকম আবেগ বা অপরাধবোধ না রেখে তা স্বীকার করে নেওয়া একটি সৎ গুণ। সমালোচনার ক্ষেত্রে একই কথা। সমালোচনা সহ্য করতে পারাও এ্লকটা গুণ। তবে অন্যায়ভাবে সমালোচনা করা হলে প্রতিবাদ করা এবং প্রমাণ চাওয়া আপনার সচেতন দায়িত্ব।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads