কোভিড-১৯ প্রতিরোধে কোনো ঔষধ বা প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। এর বিস্তার ঠেকানোর একমাত্র পথ হছে মানুষের কাছ থেকে মানুষকে দূরে রাখা। এ এক নতুন পরিস্থিতি। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে সামাজিক মানুষকে ত্যাগ করতে হচ্ছে সামাজিক সঙ্গ।
দেশে দেশে সরকার সকল মানুষকে ঘরে থাকতে বলেছে, বাধ্য করছে। বিনা প্রয়োজনে রাস্তায় নামলে গুণতে হচ্ছে জরিমানা। কতদিন এভাবে বন্দি থাকতে হবে? এমন প্রশ্নের উত্তর নেই।
চীনের উহান প্রদেশের হুবেই শহর তিন মাস বন্ধ থাকার পরেও খুলে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। খুলে দিলেই আবার ছড়িয়ে পড়তে পারে অদৃশ্য ঘাতক নভেল করোনা ভাইরাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যার নাম দিয়েছে কোভিড-১৯।
মানুষ ঘরে বন্দি থাকলে বন্ধ হয়ে যায় অর্থনীতির চাকা। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ হলে চলবে না জীবন। আমাদের দেশে প্রথমেই বন্ধ করা হয়েছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্রাবাস, রেস্টুরেন্ট, দোকান-পাট, বিনোদন কেন্দ্র।
তারপর দশ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে বন্ধ করা হয়েছে অফিস-আদালত। মানে, সেবা খাত পুরোপুরি বন্ধ। অনেক কারখানা বন্ধ রয়েছে। কেউ কেউ খোলা রেখেছেন।
বিজিএমইএ প্রধান তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার আহবান জানিয়েছেন। কৃষকের ছুটি নেই। সাধারণ ছুটির আওতায় তারা পড়েন না। তাদের কাজ চলছে। মাত্র চার ঘণ্টার জন্য খোলা রাখা হচ্ছে ব্যাংক।
অনেক দেশই দশ দিনের চেয়ে বেশি সময় ধরে বন্ধ আছে। কোথাও কোথাও তা অনির্দিষ্টকালের জন্য। অফিস-আদালত দশ দিন পরে খুলে দেওয়া যাবে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, কারখানা বন্ধ থাকার মানে হচ্ছে কাজকর্ম বন্ধ।
বড় বড় প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট মাসিক বেতনের চাকুরি যারা করেন তাদের অসুবিধা নেই। কাজ থাকুক আর না থাকুক মাস শেষে বেতন তাদের ব্যাংক একাউন্টে পৌঁছে যাবে। সমস্যা তাদের যাদের আয় নির্ভর করে কাজের উপর। কাজ থাকলে মজুরী, না থাকলে নেই।
করোনার কারণে শিল্প উৎপাদন চালু রাখা যাবে কি-না সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞগণ বা সরকার কেউই এখনো নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি ও বড় কারখানা এবং ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের (ছোট-বড় দোকানসহ) উৎপাদন এবং সরবরাহ কার্যক্রম চালু রাখতে পারলে উৎপাদিত পণ্য ও সেবা এখন না হোক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তা বিক্রয় করে নগদ টাকা ফেরত পাবেন।
উৎপাদন ও সরবরাহ চালু থাকলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা ছাড়া অন্যান্য জিনিস তেমন একটা বিক্রয় করতে পারবেন না। ফলে তাদের নগদ অর্থের প্রবাহ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হবে।
বাজারে তারল্য সঙ্কট ঠেকাতে সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানীর জন্য এলসি পরিশোধ করার সময় বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে সঙ্কট উত্তীর্ণ হওয়ার পর তা পরিশোধ করলে চলবে।
সরকার বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসের দাম জুন মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এক্ষেত্রেও সাশ্রয় হবে। বাকি থাকল অভ্যন্তরীণ পাওনাদারের টাকা এবং শ্রমিক ও কর্মচারীদের মজুরী ও বেতন। ভারী শিল্প কারখানার উৎপাদন খরচের ৭% থেকে ১০% হচ্ছে মজুরী খরচ।
ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি কারখানায় তা কিছুটা বেশি। শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়ীদের হাতে কমপক্ষে সেই পরিমাণ অর্থের যোগান থাকতে হবে যা দিতে তারা শ্রমিক এবং অন্যান্যদের মজুরী ও বেতন এবং অভ্যন্তরীণ পাওনা পরিশোধ করতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক গৃহীত নতুন উদ্যোগের ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে কম সুদে এবং বিনা সুদে অনেক নগদ অর্থের সরবরাহ পাবে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তা ছোট-বড় শিল্প এবং অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে কম সুদে সরবরাহ করতে পারবে। এই সঙ্কটকালে আইন করে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করতে হবে। কাজ থাকুক আর না থাকুক শ্রমিকের মজুরী তার ব্যাংক বা মোবাইল একাউন্টে পৌঁছে দিতে হবে।
করোনার কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। সরকারের সেফটি নেটের টাকা যারা পান বাড়তি দ্রব্যমূল্য মোকাবেলা করার জন্য তাদের আরও বেশি পরিমাণ টাকা দেওয়া দরকার। সব মিলিয়ে করোনা যুদ্ধে সরকারের কত টাকা দরকার তার হিসেবটা এখনো হয়নি।
এখনই এটা করার সময়। দেরী হলে দুর্ভোগ পোহাতে হবে বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে। অচল হয়ে পড়বে বাংলাদেশের অর্থনীতি।