এ মৌসুমে দেশে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে দেশের প্রত্যন্ত এলাকার মোকামে ধানের দামও বেশ কম। এর প্রভাব পড়েছে রাজধানীর বাজারেও। গত দুই সপ্তাহে কেজিতে প্রকারভেদে দুই থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত কমেছে বিভিন্ন প্রকার চালের দাম। যার মধ্যে গুটি স্বর্ণা, পারিজা আটাশসহ কয়েকটি মোটা চালের দাম কমেছে বেশি হারে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এর আগের মৌসুমে ইরি-বোরো প্রচুর আবাদ হয়েছিল। এ কারণে পুরনো চালের পর্যাপ্ত মজুতের পাশাপাশি নতুন চাল আসায় বাজারে এ স্বস্তি ফিরেছে। দেশের চালের মিল ও মোকাম থেকে কম দামে চাল সরবরাহ করা হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার রাজাধানীর রামপুরা, শান্তিনগর, মতিঝিল এজিবি কলোনি ও সেগুনবাগিচার কয়েকটি বাজার ঘুরে জানা যায় মোটা ও চিকন উভয় চালেরই দাম কিছুটা কমে এসেছে। বাজারভেদে মোটা স্বর্ণা চালের দাম ৪০-৪২ টাকা থেকে কমে ৩৬-৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাঁচ টাকা কমে পাইজাম ৪৫-৪৬ টাকায় মিলছে। আর মাঝারি মানের মিনিকেট ৫০ টাকা এবং ভালো মানের মিনিকেট ৫৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ দুই পদের মিনিকেট চালের দাম দুই সপ্তাহ আগে কেজিপ্রতি ছিল ২ থেকে ৩ টাকা বেশি। এ ছাড়া দাম কমে নাজিরশাইল ৬৫ টাকা, বাশমতি ৭৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। এ দামকে স্বস্তিদায়ক জানিয়ে রামপুরা বাজারে ট্রাকচালক জলিল মিয়া বলেন, গত বছর এই সময় তো ৫০ টাকার নিচে চাল কেনা সম্ভব হয়নি। এ বছর দাম সাধ্যের মধ্যে রয়েছে। চালের দাম কম থাকুক এটা তাদের সারা বছরের প্রত্যাশা। কম আয়ে বেশি দামে চাল কিনতে বিপাকে পড়তে হয়। যেটা গত বছর হয়েছিল। কৃষকের ঘরে নতুন চাল ওঠার খবরে চালের দাম কমেছে, সেটা আরো কমতে পারে বলে জানিয়েছেন পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা। মালিবাগে ফরিদপুর রাইস এজেন্সির জাগলুল আলম বলেন, বাজারে নতুন আমনের চাল এখনো পুরোপুরি ওঠেনি। অধিকাংশ ধান এখন কৃষকের ঘরেই রয়ে গেছে। সেসব মিল ঘুরে বাজারে এলে দাম আরো কমে আসবে।
এদিকে রাজধানীর পাইকারি চালের বাজার বাবুবাজার ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগে থেকে আসতে শুরু করেছে নতুন চাল। তবে পরিমাণে এখনো খুব বেশি নয়। শেষ দুই সপ্তাহে মোটা চালে বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। আর চিকন চালে কমেছে ১০০ টাকা।
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের এসবি রাইসের কালাম হোসেন বলেন, চালের দাম কম। গত তিন-চার মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে চালের দাম কমছে। নতুন চাল কিছু কিছু আসছে। পুরোপুরি নতুন চাল বাজারে এলে দাম আরো কমে যাবে। তিনি আরো বলেন, এ বছর উৎপাদন ভালো হওয়ায় পুরোপুরি স্বাভাবিক রয়েছে চালের সরবরাহ। গত বছরের মতো চালের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার কোনো কারণই নেই।
আরেক ব্যবসায়ী দাবি করেন, চালের দাম কমায় কিছুটা ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়েছে পাইকারি ব্যবসায়ীদের। তারা বেশি দামে চাল কিনে কম দামে বিক্রি করছেন।
এদিকে বরাবরের মতো খুচরা বাজারে চালের দাম পাইকারি বাজারের সঙ্গে সমন্বয় কম। পাইকারি বাজারে ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে মিনিকেট চাল বিক্রি হলেও কিছু মুদি দোকানে এসব চাল এখনো ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর পাইকারির থেকে ৫ টাকা বেশি দিয়ে অর্থাৎ ৪০ টাকার কমে এসব দোকানে মিলছে না মোটা চালও।
রামপুরা তিতাস রোডে এক মুদি দোকানি বলেন, আমরা যে দামে চাল কিনি তার থেকে দু-এক টাকা লাভে বিক্রি করি। কিন্তু এ ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যের সময়ে দাম কমলে সমস্যায় পড়তে হয়। এ সময় বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দাম কমালে আমরা লোকসানে পড়ব। ফলে এসব ছোট দোকানে দাম কমে ধীরে।