কমেছে পেঁয়াজ রসুনের দাম বেড়েছে তেল চিনির

সংগ‍ৃহীত ছবি

পণ্যবাজার

কমেছে পেঁয়াজ রসুনের দাম বেড়েছে তেল চিনির

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৪ মার্চ, ২০২০

স্বস্তির খবর দিয়ে শুরু করলে প্রথমে বলতে হয়, পেঁয়াজ, আদা, রসুন কিনতে আর আগের মতো বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে না। মৌসুমে দেশের বাজারে ওই সব পণ্যের সরবরাহ বাড়ায় এখন দাম বেশ কমে এসেছে। বিশেষ করে দেশি জাতের তিনটি পণ্যই ১০০ টাকার নিচে কেনা যাচ্ছে।

তবে অস্বস্তির খবর বেশি উদ্বেগের। বাজারে চারটি পণ্যের দাম বেড়েছে। যার মধ্যে তিনটি পবিত্র রমজান মাসের জন্য খুব বেশি প্রয়োজনীয়। এ কারণে আগেভাগে তেল, চিনি ও খেজুরের দাম আরও বাড়ল। অরেকটি রমজানে অতিরিক্ত প্রয়োজনীয় না হলেও অনেক পরিবারে নিত্যপ্রয়োজনীয়। সেটা হচ্ছে গুঁড়োদুধ। বাজারে বিদেশি কোম্পানির গুঁড়োদুধের দাম ইতোমধ্যে বেড়ে গেছে।

কমা-বাড়ার এই চিত্র উঠে এসেছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির তথ্যেও। সংস্থাটি বলছে, বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া দেশি রসুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা ও ১০০ টাকার মধ্যে মিলছে।

টিসিবির তথ্যে, মাসের ব্যবধানে এখন দেশি পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম যথাক্রমে ৪৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ৫২ দশমিক ৭৮ শতাংশ ও ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ কমেছে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় এই তিনটি পণ্যই দেশে উৎপাদনের পাশাপাশি বাড়তি চাহিদা আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। তবে সেগুলোর দাম এখনো বেশ বেশি। বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজ দেশি পেঁয়াজের থেকে ১০ টাকা, রসুন ৮০ টাকা ও আদা ৬০ টাকা ব্যবধানে বিক্রি হচ্ছে।

জানতে চাইলে শ্যামবাজারের পাইকারি বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, আসলে আমদানি করা তিনটি পণ্যের দাম এখনো বেশি। কিন্তু দেশে এখন মৌসুমি পণ্যগুলো আসায় বাজার স্থিতিশীল হয়েছে। এ মৌসুম চলা পর্যন্ত পেঁয়াজ, রসুনের দাম বাড়ার সম্ভবনা নেই।

অন্যদিকে বাজারে তেল, চিনি ও খেজুরের দাম বেশ কয়েক সপ্তাহ থেকেই বাড়তি। এরমধ্যে নতুন করে যুক্ত হলো গুঁড়োদুধের দাম। টিসিবির তথ্যে, বাজারে প্রতি কেজি পাম তেল ৭২ থেকে ৭৫ টাকা, সুপার ৮০ থেকে ৮২ টাকা ও সয়াবিন ৮৮ থেকে ৯২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি দাম বেড়ে চিনি উঠেছে ৭০ টাকায়। এ ছাড়া ডানো ও ডিপ্লোমা দুধ ২০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৬০০ থেকে ৬১০ এবং ৬২০ থেকে ৬৩০ টাকায়।

রমজানের আগে এ কয়টি পণ্যের দাম বৃদ্ধিকে স্বভাবিকভাবে দেখছেন না বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। প্রতিবছরই রোজার আগেই ওই সব পণ্যের দাম কারসাজি করে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ বছরও সেটাই হচ্ছে। রোজায় বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে আগেভাগেই দাম বাড়ানো হচ্ছে নিত্যপণ্যের। এক মাসেরও বেশি সময় বাকি থাকলেও ইতোমধ্যে বাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ওই সব পণ্য।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যবসায়ীরা অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য টার্গেট করে দামে কারসাজি করেন। তারা এর জন্য প্রতিবছর রোজার আগের সময় বেছে নেন। আগেভাগে দাম বাড়িয়ে রোজার সময় বাজার স্থিতিশীল রেখে কৌশলে মুনাফা হাতিয়ে নেন। আর সরকারের মনিটরিং শুধু রোজায় দাম বাড়ল কি না, সেটা নিয়ে মাথা ঘামানো।

এ প্রসঙ্গে ভোক্তা সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, এসব অপকর্মের যেহেতু শাস্তি হয় না, তাই তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বাজারে গিয়ে শুধু খুচরা ব্যবসায়ীদের শস্তি দিতে পারে। কিন্তু দাম বাড়ায় উৎপাদক ও আমদানিকারক। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো নজির নেই।

খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরাও এ সময় সুযোগসন্ধানী হয়ে ওঠেন এমনটি মনে করেন সাবেক এই বাণিজ্য সচিব। তিনি বলেন, তারা সব সময় ওত পেতে থাকে, সুযোগ পেলেই বাজার অস্থির করে তোলে। আগামী রমজানকে কেন্দ্র করে সবাই মিলেই ভোক্তাদের জিম্মি করতে শুরু করেছে।

এদিকে গত মাসের শুরুর দিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে তথ্য দেওয়া হয়েছিল, তেল-চিনির মতো পণ্যের গুদামজাত পরিস্থিতি ও বাজারজাতকরণ ব্যবস্থা পরিকল্পিত ও সমন্বিতভাবে তদারকি না করলে রিফাইনারি ও মিল মালিকরা সিন্ডিকেট তৈরি করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সংকট সৃষ্টি এবং অনৈতিক মুনাফা লাভের চেষ্টা করবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads