ঐতিহ্যবাহী বালিশ মিষ্টি

নেত্রকোনার ঐতিহ্যবাহী বালিশ মিষ্টি

ছবি : সংরক্ষিত

ফিচার

ঐতিহ্যবাহী বালিশ মিষ্টি

  • নেত্রকোনা প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৭ জুলাই, ২০১৮

নেত্রকোনার ঐতিহ্যবাহী একটি মিষ্টির নাম বালিশ। গয়ানাথের বালিশ বললে সবাই চেনে। যুগ যুগ ধরে তার ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখেছে। কালের সাক্ষী হয়ে আছে নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি। বালিশ মিষ্টি দেখতে অনেকটা কোল বালিশের মতো। জেলার গণ্ডি পেরিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা, এমনকি দেশের বাইরেও এর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। সুদূর আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা ও সৌদি আরবেও এ মিষ্টির নাম ছড়িয়ে আছে।

নেত্রকোনায় বেড়াতে এলে রসনাতৃপ্তির জন্য সবাই একবার হলেও বালিশ মিষ্টির কথা মনে করেন। কেউ কেউ খেয়ে যান, আবার যাওয়ার সময় সঙ্গে করে নিয়ে যান প্রিয়জনদের জন্য। আশপাশের জেলা, এমনকি প্রবাসীরা প্রবাসে কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার সময় নিয়ে যান গয়ানাথের বালিশ মিষ্টি।

জানা গেছে, প্রায় ১১০ বছর আগে নেত্রকোনা জেলাশহরের বারহাট্টা রোডে গয়ানাথ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী গয়ানাথ ঘোষ নামে এক ব্যক্তি এ মিষ্টি প্রথম তৈরি করেন।

গয়ানাথ ঘোষ একদিন চিন্তা করলেন নতুন কিছু করার। সে চিন্তা থেকেই তিনি তৈরি করলেন কোল বালিশের মতো মিষ্টি। এজন্য এর নাম দেওয়া হয় বালিশ মিষ্টি। ক্রমান্বয়ে গয়ানাথের বালিশ নামে পরিচিতি পেল ওই মিষ্টি। স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে এর নাম।

গয়ানাথ ঘোষ দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই ১৯৬৯ সালে ভারতে চলে যান। চলে যাওয়ার সময় তার সহযোগী নিখিল চন্দ্র মোদক এই মিষ্টি তৈরির দায়িত্ব নেন। জীবিত থাকা অবস্থায় তিনি বালিশ মিষ্টি তৈরির ধারা অব্যাহত রাখেন। নিখিল চন্দ্র মোদকের মৃত্যুর পর তার তিন ছেলে বাবুল চন্দ্র মোদক, খোকন চন্দ্র মোদক ও সুবল চন্দ্র মোদক ব্যবসা পরিচালনা করছেন। আজো তারা বালিশ মিষ্টি তৈরি করে অতীত ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন। গয়ানাথের বালিশ এতটাই জনপ্রিয় যে, প্রয়াত নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসে এ সম্পর্কে লেখা হয়েছে। এ ছাড়া কবি নির্মলেন্দু গুণের লেখনীতে বালিশ মিষ্টির কথা উঠে এসেছে। স্থানীয় কবি-সাহিত্যিকরা এ মিষ্টিকে নিয়ে ছড়া-কবিতাও লিখে থাকেন। দুধের ছানা ও চিনি দিয়ে তৈরি এ মিষ্টি প্রথমে তৈরি করা হতো দুই সাইজের। প্রতি পিসের দাম ছিল ১০ টাকা ও ২০ টাকা। এখন ওই সাইজগুলো বিক্রি হয় ২০ টাকা ও ৫০ টাকা করে। এছাড়া এখন এক কেজি ও আধা কেজি ওজনের মিষ্টি তৈরি করা হয়। এসব মিষ্টির দাম যথাক্রমে ২০০ টাকা ও ১০০ টাকা। এগুলো অর্ডার দিয়ে বানাতে হয়। গরমের দিনে বালিশ মিষ্টি তিন দিন এবং শীতের দিন সাত দিন পর্যন্ত ভালো থাকে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads