শুধু রসনাবিলাস নয়, খাদ্যগ্রহণকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ভাবনা বরাবরই ছিল, আছে বাঙালির চিন্তা ও রুচিতে। খাবারের পদবৈচিত্র্য তাই এ জনপদজুড়ে। দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী অনেক খাবারই আছে। তার মধ্যে মুখরোচক খাবার পাপড় এখন প্রথম সারিতে। দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী মুগ, খেসারি ও বেসনের তৈরি পাপড়ের কথা শুনলে সবার জিভে জল আসে। সুস্বাদু আর মুখরোচক হওয়ায় একসময় এর ব্যাপক চাহিদা ছিল। রাজা-বাদশাহদের খাদ্যতালিকায়ও ছিল এই পাপড়। এ পাপড়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রায় ৬০০ বছরের ইতিহাস।
প্রস্তুত প্রণালী : পাপড় তৈরির মূল কাঁচামাল মুগ, খেসারি, বেসন, সয়াবিন ও পাম অয়েল। কারিগরদের হাতের ছোঁয়ায় হয়ে ওঠে তা দৃষ্টিনন্দন ও মুখরোচক। পাপড় তৈরি করা হয় উন্নতমানের চাল ও ডালের মিহি গুঁড়া কিংবা ময়দা দিয়ে। প্রথমে সমপরিমাণ মুগ ও মাষকলাই একসঙ্গে মিশিয়ে মেশিনের মাধ্যমে ভেঙে গুঁড়া করা হয়। ফুটানো পানির সঙ্গে লবণ, জিরা, কালিজিরা, গোলমরিচ গুঁড়া, দই, সোডা, হিং ও আমচুর দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করা হয়। এর সঙ্গে মুগ ও মাষকলাই ডালের মিহি গুঁড়া ও ঠান্ডা পানি মিশিয়ে পাঁচ থেকে ১০ মিনিট রোলিং করে পাপড় তৈরির উপযুক্ত মণ্ড তৈরি করেন কারিগররা। মণ্ডটিকে লম্বালম্বি কয়েকটি ভাগে ভাগ করে সুতা দিয়ে কেটে নেওয়া হয়। গোলাকৃতির মসৃণ কাঠের পিঁড়িতে বেলনচাপ দেওয়া হয়। এভাবে কয়েকবার এপিঠ-ওপিঠ করলে পাপড় তৈরি হয়। এগুলো ২০ থেকে ২৫ মিনিট কড়া রোদে ও পরবর্তী সময়ে সারাদিন হালকা রোদে শুকানো হয়।
দিনাজপুরে পাপড় তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে যুক্ত আছেন অনেক শ্রমিক ও ব্যবসায়ী। দিনাজপুর শহরের মালদহপট্টি, বাসুনিয়াপট্টি, চুড়িপট্টি, রাজবাড়ী, গুঞ্জাবাড়ী, ঘাসিপাড়া, ফকিরপাড়া, বড়বন্দর ও জগেন বাবুর মাঠ এলাকার ব্যবসায়ীরা পাপড় তৈরির সঙ্গে জড়িত।
এদিকে দিনাজপুর জেলা প্রশাসন ও দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি পাপড় শিল্পকে আরো সমৃদ্ধ করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। দিনাজপুরের পাপড় এখন দিনাজপুরের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে রফতানি হচ্ছে। দিনাজপুরে বেড়াতে আসা ব্যক্তি মাত্রই পাপড় কিনে নিয়ে যান। দিনাজপুরের পাপড় ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ শিল্পকে আরো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।