কক্সবাজারে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ হলে সাদা সোনাখ্যাত এ খাত থেকে বছরে ৩ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। বর্তমানে কক্সবাজার, খুলনা ও বাগেরহাটে এক লাখ ৪০ হাজার হেক্টর উপকূলীয় জমিতে চিংড়ি চাষ হচ্ছে। অথচ সনাতন পদ্ধতিতে চাষ করে আয়ে হচ্ছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চিংড়ি চাষের যোগ্য জমি রয়েছে ২৮ হাজার ৪৬৬ হেক্টর, যা দেশের সর্বমোট চিংড়ি চাষের জমির ২০.৩৩ ভাগের বেশি। এই জমির মধ্যে ২ হাজার ৮৩৪ হেক্টর সরকারি মৎস্য বিভাগের। মৎস্য বিভাগ চিংড়ি চাষ বাড়ানোর জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ওই জমি অধিগ্রহণ করে ১০ একর, ১১ একর ও ৩৩ একর বা বিভিন্ন আকারের প্লট তৈরি করে ব্যক্তিমালিকানায় দীর্ঘমেয়াদি ইজারা দিয়েছে। অবশিষ্ট জমি ব্যক্তিমালিকানাধীন অথবা জেলা প্রশাসন বা কালেক্টরেটের। জেলা মৎস্য বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, জেলায় ২ হাজার ৪০টি চিংড়ি প্রকল্প রয়েছে।
উপজেলাভিত্তিক চিংড়ি প্রকল্পের জমির পরিমাণ হচ্ছে- কক্সবাজার সদর উপজেলায় চিংড়ি প্রকল্প ২২৬টি, জমির পরিমাণ ৩ হাজার ৩৩০ দশমিক ১৪ হেক্টর; উখিয়ায় চিংড়ি প্রকল্প ১০৫টি, জমির পরিমাণ ১ হাজার ১১ দশমিক ৫৪ হেক্টর; মহেশখালীতে চিংড়ি প্রকল্প ৩০৯টি, জমির পরিমাণ ৯ হাজার ৬৬৪ দশমিক ২০ হেক্টর; কুতুবদিয়ায় চিংড়ি প্রকল্প ৪টি, জমির পরিমাণ ৮০ হেক্টর; চকরিয়া ও পেকুয়ায় চিংড়ি প্রকল্প ১ হাজার ১৪৮টি, জমির পরিমাণ ১২ হাজার ৫৫১ দশমিক ৪১ হেক্টর; রামুতে চিংড়ি প্রকল্প ২২টি, জমির পরিমাণ ৫৮ দশমিক ১ হেক্টর, টেকনাফে চিংড়ি প্রকল্প ২২৫টি, জমির পরিমাণ ১ হাজার ৭৭১ দশমিক ১৮ হেক্টর।
জেলায় বর্তমানে ২৮ হাজার ৪৬৬ দশমিক ৫৭২ হেক্টরের অধিক জমিতে সাদা সোনাখ্যাত চিংড়ি উৎপাদন হচ্ছে। তার মধ্যে ৩৯০ দশমিক ২৬ হেক্টর জমিতে আধানিবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ হচ্ছে। উৎপাদিত চিংড়ির প্রায় ৩৫ ভাগ কক্সবাজারই হচ্ছে।
আলাপকালে চিরিঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে আজ পর্যন্ত দেশের চাহিদা মিটিয়ে চিংড়ি ও মিঠাপানির মাছ রফতানি হয়ে আসছে কক্সবাজার থেকে। এসব মাছ রফতানি করে দেশের সিংহভাগ বৈদেশিক মুদ্রা দেশের অর্থনীতিতে জোগান দিচ্ছে। উন্নত পদ্ধতিতে এই মাছ চাষ করা হলে আয় আরো বাড়তো বলে চিংড়ি চাষে জড়িত অভিজ্ঞ চিংড়িচাষিরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। মৎস্যচাষি বশির আহাম্মদ বলেন, চিংড়ি চাষের মৌসুমে চাষিরা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি থাকে। মৌসুমে সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতায় চিংড়িঘের মালিকরা প্রতিনিয়ত হয়রানির সম্মুখীন হন। সন্ত্রাসীরা ঘেরে হামলা চালিয়ে মাছ-জালসহ বিভিন্ন উপকরণ লুট করে নিয়ে যায়।