পৃথিবী ছাড়াও মহাবিশ্বের কোনো কোনো নক্ষত্রমণ্ডলে বা গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে, এ ধারণা বেশ পুরনো। কল্পবিজ্ঞানের নানা কাহিনী এই ধারণাকে মানুষের মনে আরো পোক্ত করলেও তেমন কোনো প্রমাণ মেলেনি আজো।
তবে এই ধারণাকে খারিজও করেননি বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর বাইরে অন্য কোনো গ্রহে প্রাণী (এলিয়েন) থাকতে পারে, এমন সম্ভাবনা যাচাই করতে নানা সময়ে তারা হাতে নিয়েছেন নানা উদ্যোগ।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসাও আশাবাদী কোনো একদিন হয়তো সত্যিই ভিনগ্রহের প্রাণীর সন্ধান মিলবে। নাসার আশা ২০২৫-এর মধ্যেই হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে এলিয়েনদের। সে জন্যই বছর দুয়েক আগে আনুষ্ঠানিকভাবে এলিয়েন খোঁজার এক প্রকল্প হাতে নেয় নাসা।
ভূবিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিজ্ঞানীসহ সব ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন এই গবেষণা প্রকল্পে।
প্রকল্পটির অধীনে ২০১৮ সালের ১৮ এপ্রিল মহাকাশে শুরু হয় নাসার নতুন এক অভিযান। ওই অভিযানে ট্রানজিটিং এক্সোপ্লানেট সার্ভে স্যাটেলাইট বা টেস নামে একটি স্যাটেলাইট পাঠানো হয় মহাকাশে।
সেই টেস স্যাটেলাইট মহাকাশে গিয়ে দুই মাসের বেশি সময় পরে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছে। স্পেস ডটকমের এক খবরে জানানো হয়েছে, ২৭ জুলাই থেকে টেস স্যাটেলাইট সূর্যের কাছাকাছি নক্ষত্রের তথ্য সংগ্রহ শুরু করে দিয়েছে। আর আসছে আগস্ট মাস থেকে ১৩ দিন ১২ ঘণ্টা পর পর পৃথিবীতে তথ্য পাঠাতে শুরু করবে টেস।
টেস আগামী দুই বছর পুরো মহাকাশে জরিপ চালাবে। আর এই কাজটি করা হবে মহাকাশকে ২৬টি ভাগে ভাগ করে। এরপর এক সময় শুধু একটি অংশের উপরেই জরিপটি চালানো হবে।
স্যাটেলাইটটিতে আছে বহু ক্যামেরা। এসব ক্যামেরা নজর রাখবে আকাশের ওপর। ২৬টি ভাগের একেকটি অংশে নজর রাখা হবে কমপক্ষে ২৭ দিন। এসব ক্যামেরা দিয়ে দেখার চেষ্টা করা হবে সেখানে নক্ষত্রের উজ্জ্বলতায় কোনো পরিবর্তন ঘটে কিনা।
এই টেস উপগ্রহটি যেসব নক্ষত্রের ওপর নজর রাখবে সেগুলো আমাদের এই পৃথিবী থেকে ৩০০ আলোকবর্ষ দূরের। আর এর সংখ্যা প্রায় দুই লাখের মতো।
টেস অভিযান নিয়ে নাসা বলছে, সৌরজগতের বাইরে আরো যেসব গ্রহ আছে সেগুলোর সন্ধানে নতুন ধাপ হলো টেস। টেস দেখবে নক্ষত্রগুলো কতটা উজ্জ্বল হয়ে জ্বলছে, সেগুলোর উজ্জ্বলতায় যদি কম বেশি হয় তাহলে সেখান থেকে হয়তো কোনো গ্রহের উপস্থিতি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যেতে পারে। কারণ এই নক্ষত্রের চারপাশ দিয়ে যখন কোনো গ্রহ ঘুরতে থাকে, তখন তার উজ্জ্বলতা কমবেশি হতে পারে। যখন কোনো গ্রহ এ রকম কিছু করে তাকে বলা হয় ট্রানজিট। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, টেস স্যাটেলাইট হয়তো এ রকম কিছু ঘটনাকে শনাক্ত করতে পারবে।
এই স্যাটেলাইটটি যখন এ রকম কিছু ট্রানজিটের ঘটনা চিহ্নিত করতে পারবে, তখন সেখানে আসলেই কোনো গ্রহ আছে কি না বা কেন সেখানে এ রকম কিছু ঘটল সেটার বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণা শুরু করবে।
দেখার চেষ্টা করবে নক্ষত্রকে ঘিরে ঘুরছে যেসব গ্রহ, সেগুলোতে জীবনের কোনো অস্তিত্ব আছে কি না কিংবা প্রাণের বেঁচে থাকার মতো পরিবেশ সেখানে বিরাজ করছে কি না।
নাসার বিজ্ঞানী স্টিফেন রাইনহার্ট বলেন, আমরা আলাদা আলাদা গ্রহ সম্পর্কে পরীক্ষা চালাতে পারব। বিভিন্ন গ্রহের মধ্যে কী ধরনের পার্থক্য আছে সেসব বিষয়েও আলোচনা করতে পারব। টেস অনুসন্ধান করে যেসব বের করতে পারবে সেগুলো ভবিষ্যতের জন্য দারুণ কিছু হবে। টেস স্যাটেলাইট এক্সোপ্লানেট অনুসন্ধানে আনবে নতুন যুগ।