এবার নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ

এবার নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ

প্রতীকী ছবি

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

এবার নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা বহরমপুর লাইনে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পর আরো দুই সীমান্তপথে দেশটি থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজ চলছে। এবার ভারতের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে চাইছে সরকার। এর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া থেকে বগুড়া হয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈর পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে উচ্চক্ষমতার সঞ্চালন লাইন। এ লক্ষ্যে একটি প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রক্রিয়াকরণের প্রাথমিক কাজ শেষে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় উপস্থাপন করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় জানায়, আগামীকাল বুধবার রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় মোট ১৫টি প্রকল্প উপস্থাপন করা হচ্ছে। এসব প্রকল্পের তালিকায় বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকল্পটিও রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩২২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এতে ব্যয় করা হবে ১ হাজার ৪২৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা। ভারতীয় ঋণ থেকে ব্যবহার হবে ১ হাজার ৭৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আর বাস্তবায়নকারী সংস্থার তহবিল থেকে ব্যয় হবে ১৫৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

প্রস্তাব পর্যালোচনায় জানা গেছে, প্রকল্পটির আওতায় বড়পুকুরিয়া থেকে বগুড়া পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ৪০০ কিলোভোল্ট ক্ষমতার ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে। যমুনা নদীর ৯ কিলোমিটার রিভারক্রসিংসহ বগুড়া থেকে কালিয়াকৈর পর্যন্ত ১৪০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে নির্মাণ করা হবে ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন। এ ছাড়া কালিয়াকৈরে ৪০০/২৩০ কেভি উপকেন্দ্রে ৪০০ কেভি এআইএস দুটি বে সম্প্রসারণ এবং পার্বতীপুরে ২৩০ কেভি সুইচিং স্টেশনে ২৩০ কেভি এআইএস দুটি বে সম্প্রসারণ করা হবে।

একনেকের অনুমোদন পেলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) লিমিটেড। এজন্য ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হবে। এর কাজ শেষ হলে ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা সম্ভব হবে। ভারতের ঝাড়খণ্ডে আদানি গ্রুপের প্রস্তাবিত ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ আমদানি করাও সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পটি চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বৈদেশিক অননুমোদন ও বরাদ্দ ছাড়াই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ, লোডশেডিং কমানো এবং ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সব মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসতে সরকার দেশে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করছে। আগামী ২০২২-২৩ সালের মধ্যে ভারতে ঝাড়খণ্ডে আদানি গ্রুপের প্রস্তাবিত ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশ অংশে সরবরাহের জন্য বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর সঞ্চালন লাইনটি নির্মাণ করা অপরিহার্য।

এতে আরো বলা হয়, ভারত, ভুটান ও নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে দেশের উত্তরাঞ্চলে উচ্চ ভোল্টেজের সঞ্চালন  অবকাঠামো সম্প্রসারণ করা আবশ্যক। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ৯ মার্চ বাংলাদেশ সরকার ও এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মধ্যে ডলার ক্রেডিট লাইন অ্যাগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ভারতীয় নমনীয় ঋণের আওতায় প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটিতে অর্থায়নের বিষয়ে ভারত সরকারের চূড়ান্ত সম্মতি পাওয়া গেছে।

পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে কমিশনের শিল্পশক্তি বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস বলেছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ হলে নেপাল ও ভুটান হতে বিদ্যুৎ আমদানির সুযোগ সৃষ্টি হবে। তা ছাড়া দেশের উত্তরাঞ্চলে উচ্চ ভোল্টেজের সঞ্চালন অবকাঠামো সম্প্রসারণ এবং ঝাড়খণ্ডে আদানি গ্রুপের প্রস্তাবিত কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইভাকুয়েট করতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। এসব বিষয় বিবেচনায় প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads