এদের মূলোৎপাটন জরুরি

সংগৃহীত ছবি

সম্পাদকীয়

সংঘবদ্ধ জাল নোট চক্র

এদের মূলোৎপাটন জরুরি

  • প্রকাশিত ৭ অগাস্ট, ২০১৯

আবার সক্রিয় জাল টাকার সিন্ডিকেট। ঈদের মতো বড় কোনো উৎসব এলেই জাল টাকার ছড়াছড়ি চোখে পড়ে। সক্রিয় হয়ে ওঠে জাল নোট চক্র। কেননা এ সময় অনেক টাকার লেনদেন হয়ে থাকে, আর তাই জাল টাকার অসাধু ব্যবসায়ীরা এ টাকা ছড়িয়ে দিতে বিভিন্ন মার্কেটে নানা পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে। এমনকি ব্যাংক থেকে উত্তোলিত টাকার বান্ডিলের মধ্যেও পাওয়া যায় জাল টাকা। গত ৩ আগস্ট দৈনিক বাংলাদেশের খবরে প্রকাশিত ‘সক্রিয় জাল নোট চক্র’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন থেকে মোটা দাগে তিনটি বিষয় আমাদের নজরে আসে। ওই তিনটি বিষয় হচ্ছে— ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজধানীতে সক্রিয় এখন ৩৫টি জাল নোট চক্র। এই ঈদে এদের কয়েক কোটি টাকার জাল নোট ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে এবং সীমান্তে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হয় এক লাখ জাল রুপি।

প্রতিবেদনে আরো জানা যায়, সম্প্রতি র্যাব-পুলিশের হাতে একাধিক সংঘবদ্ধ জাল নোট চক্রের সদস্য ধরা পড়লেও এখনো এদের কমপক্ষে ২০ জন সদস্য পলাতক রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, কোটি টাকার জাল নোট নিয়ে এসব চক্র মূলত মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলোকে টার্গেট করেছে। বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথে জাল টাকা দিতে এসব প্রতারকচক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে কিছু অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তাও। ঘরের মধ্যে বিভীষণ রেখে এই চক্র প্রতিহত করা দুরূহই বটে। অতীতেও দেখা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে প্রতিদিনের ব্যাংক লেনদেনে জাল নোটের ছড়াছড়ি। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সতর্কতা জারি করে সব ব্যাংকে তখন চিঠি দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং বর্তমানেও এ ধরনের পদক্ষেপ ব্যাংকগুলোকে নিতে হবে এবং অসাধু কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করাও তাদের দায়িত্ব। এদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। তাছাড়া রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে জাল টাকা চেনার উপায় ও জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ভিডিও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। রাজধানীর বিভিন্ন মোড় ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে একেকটি ব্যাংক শাখা তাদের নিজ উদ্যোগে এই ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করবে। এর থেকেও বড় কথা, এই জনসচেতনতা সাধারণ মানুষকে জাল নোট চিনতে সহায়তা করতে পারে। কিন্তু এর মাধ্যমে কি জাল নোটের ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব? আমরা সবাই জানি, একটি চক্র এই জাল নোট তৈরির সঙ্গে জড়িত। আমাদের বিশ্বাস, জঙ্গি তৎপরতা ধ্বংস করতে সক্ষম যে আইশৃঙ্খলা বাহিনী, তারা সঠিক নির্দেশ পেলে জাল নোট তৈরি সিন্ডিকেটের ব্যূহ প্রতিরোধেও সফল হবে। যেহেতু সন্দেহ করা হচ্ছে এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে কিছু অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তাও জড়িত, সেহেতু তাদের চিহ্নিত করাও খুব একটা কঠিন কাজ হওয়ার কথা নয় বলে মনে করি। আবার এমনও দেখা গেছে, অতীতে এই জাল টাকা চক্রের কেউ কেউ ধরা পড়লেও, তারা জামিন পেয়ে যায় এবং পরবর্তীতে পুনরায় তারা এ কাজে সক্রিয় হয়। কিন্তু এসব রাঘব-বোয়াল ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে কীভাবে তা ভাবার বিষয়। আমরা মনে করি, এক্ষেত্রে সরকার ও তার সংশ্লিষ্ট বিভাগের আন্তরিকতাই যথেষ্ট।

এখন ঈদ মৌসুম। আর মাত্র কয়েকদিন বাদেই ঈদুল আজহা। এই আনন্দঘন উৎসবে সব মানুষই তার সাধ্য অনুযায়ী কেনাকাটায় ব্যস্ত। বিশেষত এবারের ঈদে পশু কোরবানি একটি বড় বিষয়। এ ব্যস্ততার মধ্যে যদি জাল টাকার বিড়ম্বনায় পড়তে হয়, তবে তার থেকে কষ্টের কিছু হতে পারে না। সুতরাং সাধারণ মানুষকে এ জাল টাকার বিড়ম্বনা থেকে বাঁচাতে সরকারকে কঠোর হাতে জাল টাকার উৎস চিহ্নিত করতে হবে এবং তা শুধু ধ্বংসই নয়, এর অপরাধীদের কঠিন শাস্তির আওতায় আনা বাঞ্ছনীয়। কেননা মনে রাখতে হবে, এর ফলে আমাদের অর্থনীতিও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। সুতরাং জাল নোট চক্রের মূলোৎপাটন এখন সময়ের দাবি। আশা করি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনা করবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads