পটুয়াখালীর গলাচিপার উপকূলীয় এলাকা থেকে ক্রমেই গোলপাতা গাছ বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তন, প্রয়োজনীয় চাষাবাদ ও সংরক্ষণ এবং পরিচর্যার অভাবে গোলপাতা গাছ বিলুপ্তির অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে। ফলে এ অঞ্চলের লোকালয় থেকে গোলপাতা গাছ হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, পটুয়াখালী ও বরগুনার উপকূলীয় অঞ্চলের লোকালয়ে প্রাকৃতিকভাবেই বেড়ে উঠত এই গোলপাতা গাছ। খাল, বিল, নদীর তীরসহ জলাশয়ের কাছে সর্বত্র গোলপাতা গাছ দেখা যেত। গাছের নাম গোলপাতা হলেও দেখতে নারিকেল গাছের পাতার আকৃতির মতো। এর উচ্চতা প্রায় ১৫ থেকে ২০ ফুটের বেশি। সাধারণ লবণাক্ত পলিযুক্ত মাটিতে গোলপাতা ভালো জন্মায়। বিস্তীর্ণ এলাকাসহ খালের পাড়, নদীর চরাঞ্চল গোলপাতা গাছ চাষের উপযুক্ত স্থান। গোলপাতা গাছের বীজ (গাবনা) মাটিতে পুঁতে রাখলেই চারা জন্মায়। গলাচিপা উপজেলার সোনারচর, ছোট বাইশদিয়া, বড় বাইশদিয়া, চর মোন্তাজ, চরকাজল ও চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকার মাঠ, খাল ও নদী তীরবর্তী এলাকায় প্রকৃতিগতভাবে এ গোলপাতা জন্মে থাকে।
চরমোন্তাজ এলাকার মো. হালিম মিয়া জানান, এক একটি গাবনায় ১২৫-১৫০টি পর্যন্ত বীজ থাকে। গোলপাতা গাছ চাষে মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করতে হয় না। সহজলভ্য এবং ব্যয় কম হওয়ায় চাষাবাদ অত্যন্ত লাভজনক। গোলপাতা গাছ চাষে রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও কোনো ধরনের পরিচর্যা প্রয়োজন হয় না। এ ছাড়া গোলপাতা গাছের রস দিয়ে গুড় উৎপাদন করে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।
এ অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় গোলগাছ চাষের অনুকূল পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও সম্ভাবনাময় এ প্রজাতির উদ্ভিদ প্রয়োজনীয় চাষাবাদ ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিলুপ্ত হতে চলেছে। উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে এখনো গোলগাছের চাষাবাদ হয়। এলাকার বেশিরভাগ পরিবার গরিব ও হতদরিদ্র। এ অঞ্চলের ১০ লক্ষাধিক গরিব ও হতদরিদ্র পরিবারের বসতবাড়ির ঘরের চাল ও চিংড়ি ঘেরের স্থাপনার ছাউনির একমাত্র অবলম্বন গোলগাছের পাতা। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদী ভাঙনসহ পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে লোকালয় থেকে গোলগাছ হারিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে গলাচিপা উপজেলা কৃষি দফতরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. নূরুল আমিন জানান, দক্ষিণাঞ্চলের গোলগাছ চাষাবাদের সরকারি উদ্যোগ নিলে এ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের আত্মকর্মসংস্থানের সৃষ্টি ও পরিবেশ সংরক্ষণে সহায়ক হতে পারে। এ অবস্থায় গোলপাতা গাছ রক্ষার জন্য আরো বেশি যত্নশীল হওয়া উচিত।
এ ব্যাপারে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আহম্মেদ পারভেজ বলেন, উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়া গোলপাতা বন মরে যাচ্ছে। এ ছাড়া গোলপাতা গাছের আগামরা রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে এ গাছ মরারও একটি কারণ। পরিকল্পিত আবাদ ও পরিচর্যা না থাকায় গোলগাছ ক্রমশ বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছে।