উচ্চশিক্ষায় ডাকছে তোমায় মালয়েশিয়া

বিভিন্ন দেশের ছাত্রছাত্রীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছে

ছবি : ইন্টারনেট

ফিচার

উচ্চশিক্ষায় ডাকছে তোমায় মালয়েশিয়া

  • প্রকাশিত ৮ অক্টোবর, ২০১৮

তন্ময় কুমার রায়

মালয়েশিয়া বর্তমানে এশিয়ার মধ্যেই নয়, বরং সারা বিশ্বে একটি উন্নত দেশ হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি সবক্ষেত্রে মালয়েশিয়া বিশ্বের বুকে একটি রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিক্ষাক্ষেত্রে করেছে অনেক উন্নতি। ২০২৫ সালের মধ্যে ২ লাখ ৫০ হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে মালয়েশিয়া সরকার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ছাত্রছাত্রীরা, বিশেষ করে এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের ছাত্রছাত্রীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকেও প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্রছাত্রী মালয়েশিয়ায় পড়তে যাচ্ছে।

কেন আপনি মালয়েশিয়ায় পড়তে যাবেন : মালয়েশিয়ার উচ্চশিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২০১৭ সালের এক তথ্যে জানা যায়, প্রায় ৪০ হাজার ৪১৫ জন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সে বছর মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করছিল। সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী যে পাঁচ দেশের ছিল, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। কেননা মালয়েশিয়ায় রয়েছে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, এমনকি আমেরিকার নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আঞ্চলিক শাখা, যেমন- নিউ ক্যাসল ইউনিভার্সিটি, কারটিন ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব নটিংহাম, ইউনিভার্সিটি অব সাউদাম্পটন, সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি ইত্যাদি। ফলে আপনি ওইসব দেশে না গিয়ে কম খরচে আন্তর্জাতিক মানের সার্টিফিকেট অর্জন করতে পারবেন মালয়েশিয়া থেকে, যা বাংলাদেশের মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোতে চাকরি পেতে সাহায্য করবে।

ইউনিভার্সিটি ও কলেজ : মালয়েশিয়ায় রয়েছে বিশ্বমানের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ। এসব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ উন্নত বিশ্বের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত। সাধারণত ভালো মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা কোর্সে প্রতি বছর আড়াই থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা, ব্যাচেলর ও মাস্টার্সে প্রতি বছর ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা খরচ হয়। অতএব মালয়েশিয়া থেকে লেখাপড়া করে বিশ্বের যে কোনো দেশে চাকরি অথবা পরবর্তী পর্যায়ের লেখাপড়ার জন্য যেতে পারবেন। আপনি যে প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে যাচ্ছেন, প্রথমে সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে খোঁজ নিন। ইন্টারনেটের যুগ এখন, চাইলেই আপনাকে কেউ মিথ্যা তথ্য দিতে পারবে না। এক ক্লিকেই জেনে নিতে পারবেন সঠিক তথ্য।

শিক্ষাব্যবস্থা : মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা চারটি পর্যায়ে বিভক্ত। ডিপ্লোমা কোর্সের মেয়াদ ২ থেকে ৩ বছর। আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কোর্সের মেয়াদ ৩ থেকে ৫ বছর। পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্সের মেয়াদ ১ থেকে ২ বছর। ডক্টোরাল (পিএইচডি) কোর্স ৩ থেকে ৫ বছর মেয়াদি। এখানকার উচ্চশিক্ষা বর্ষ তিনটি সেমিস্টারে বিভক্ত। প্রথম সেমিস্টার জানুয়ারি থেকে এপ্রিল। দ্বিতীয় সেমিস্টার মে থেকে আগস্ট এবং তৃতীয় সেমিস্টার সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত।

ভর্তির যোগ্যতা : মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করার জন্য ব্যাংক স্পন্সর বা আইএলটিসি প্রয়োজন হয় না। তবে কিছু কিছু পাবলিক ইউনিভার্সিটির ক্ষেত্রে দরকার পড়ে। এসএসসি বা সমমান/ এইচএসসি/ দাখিল/ ও’লেভেলে ন্যূনতম ২.০০ পয়েন্ট থাকলে একজন স্টুডেন্ট ফাউন্ডেশন অথবা ডিপ্লোমা প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারবেন। ব্যাচেলর পাস করার পরেও মালয়েশিয়ায় ডিপ্লোমা অথবা পুনরায় ব্যাচেলরে যাওয়া যায়। কারণ স্টাডি গ্যাপ গ্রহণযোগ্য মালয়েশিয়ায়।

টিউশন ফি : মালয়েশিয়ায় লেখাপড়া করার সব থেকে সুবিধা হচ্ছে, এখানে টিউশন ফি অন্যান্য উন্নত দেশের ইউনিভার্সিটি ও কলেজের তুলনায় অনেক কম। ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, কানাডার এক বা দুই বছরের টিউশন ফি দিয়ে মালয়েশিয়ায় পুরো কোর্স শেষ করা যাবে। মালয়েশিয়ান পাবলিক কিংবা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে সর্বমোট টিউশন ফি ৮ হাজার ৮২১ থেকে ১৭ হাজার ৬৪২ মার্কিন ডলার। মাস্টার্স পর্যায়ে সর্বমোট খরচ পড়বে ৫ হাজার ৫৮৬ থেকে ১০ হাজার ২৯১ মার্কিন ডলার। আর ডক্টরেট ডিগ্রির গবেষণার জন্য খরচ পড়বে ৮ হাজার ৮২১ থেকে ১০ হাজার ২৯১ মার্কিন ডলার।

ভাষা ও বন্ধুতা : ইন্টারনেট কিংবা বই থেকে মালয় ভাষা সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন। মালয়েশিয়ায় থাকার সময় পার্টটাইম চাকরি কিংবা চলাচল করতে সাহায্য হবে অনেক। পড়ার সময় বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আপনার বন্ধুতা হবে। ভালো-মন্দ বিবেচনা করে বন্ধুতা করা প্রয়োজনীয়। তাই মানিয়ে চলার মানসিকতা থাকা জরুরি।

পার্টটাইম জব ফ্যাসিলিটি : ইউরোপ, আমেরিকার মতো এখানে রয়েছে পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম জব ফ্যাসিলিটি। পার্টটাইম কাজ করে মাসে ন্যূনতম ২০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মতো আয় করতে পারবেন। বিশেষ করে দেশটির পাঁচ তারকা মানের হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে  রয়েছে চমৎকার চাকরির সুযোগ। মালয়েশিয়ায় একজন ছাত্রের প্রতি মাসে থাকা-খাওয়া বাবদ খরচ হয়ে থাকে গড়পড়তা বাংলাদেশি টাকায় ১৫ হাজার।

জীবনযাত্রা : মালয়েশিয়া বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটি আদর্শ পছন্দ হতে পারে। যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই উন্নত। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরজুড়ে পাঁচ-ছয় ধরনের মেট্রোরেলের ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে মাত্র ৩ ঘণ্টা ৫০ মিনিটের বিমান ভ্রমণেই মালয়েশিয়ায় পৌঁছানো যায়। মালয়েশিয়ায় যেতে বিমানের টিকেটের দাম খুবই কম। মালয়েশিয়ার স্টুডেন্ট ভিসা মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা। তাই ইচ্ছা হলেই খুব সহজে বাংলাদেশে চলে আসা যায়।

মাস্টার এডুকেশন : ২০১৪ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষা ও ভিসা প্রসেসিংয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছে মাস্টার এডুকেশন। এখান থেকে শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা, অর্থনৈতিক সামর্থ্য, উদ্দেশ্য, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনুযায়ী কোর্স ও ইউনিভার্সিটি সিলেক্ট করতে সাহায্য করা হয়ে থাকে, যাতে একজন শিক্ষার্থী সহজে বহন করতে পারে। ফ্রি অব চার্জে শিক্ষার্থীদের প্রি-ডিপারচার ট্রেনিং দেওয়া হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা বিমানে ওঠার আগে মালয়েশিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা ও তথ্য নিতে পারেন। এতে করে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের আর কোনো ভোগান্তিতে পড়তে হয় না।

Abdur rahim khan

আবদুর রহিম খান

বাংলাদেশ মালয়েশিয়া স্টাডি সেন্টারের পরিচালক আবদুর রহিম খান বলেন, দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়ায় স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছি। এখান থেকে স্টুডেন্টের যোগ্যতা, অর্থনৈতিক সামর্থ্য, উদ্দেশ্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনুযায়ী কোর্স এবং ইউনিভার্সিটি সিলেক্ট করে দেওয়া হয়। যাতে একজন স্টুডেন্ট সহজে ডাইজেস্ট করতে পারে। এ ছাড়া ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ার শীর্ষ ১২ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষা মেলা আয়োজন করেছি। মেলা চলবে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত। এ শিক্ষা মেলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মালয়েশিয়ায় উচ্চ শিক্ষাবিষয়ক সব তথ্য জানতে পারবেন। একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার বিষয়, সেখানকার খরচ, বৃত্তিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারবেন। এতে করে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পর স্টুডেন্টকে কোনো ভোগান্তিতে পড়তে হবে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads