সরকার

ই-টেন্ডারে কমেছে দুর্নীতি 

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৮ অক্টোবর, ২০২১

ই-টেন্ডার চালুর ফলে দরপত্র ক্রয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত এবং দুর্নীতি ও টেন্ডারবাজি বন্ধের পাশাপাশি বেড়েছে সরকারের রাজস্ব আয়। ই-টেন্ডার চালুর পর এ পর্যন্ত ৫ লাখ ২০ হাজার ৯৪টি ই-টেন্ডারের মাধ্যমে সরকারের কোষাগারে জমা পড়েছে ১ হাজার ৬০৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা।

২০১১ সালের ২ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সনাতন পদ্ধতির বদলে ডিজিটাল টেন্ডার পদ্ধতির ওয়েব পোর্টাল ‘ই-জিপি’র উদ্বোধন করেন। বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত এ প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন  বোর্ড ও বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে ই-টেন্ডার প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হয়। বর্তমানে ৫৬টি মন্ত্রণালয়, সরকারি বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগ, দপ্তর, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরগুলো ই-টেন্ডার পদ্ধতি অনুসরণ করছে।

অতীতে টেন্ডার জমা দেওয়া কেন্দ্র করে বিভিন্ন গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। এ নিয়ে প্রায়ই ঘটতো হতাহতের ঘটনা। এছাড়া, পেশিশক্তির প্রভাব খাটিয়ে কিংবা দুর্নীতির মাধ্যমে টেন্ডার হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটতো অহরহ। কিন্তু গত এক দশকে ডিজিটাল টেন্ডার পদ্ধতির ফলে ‘টেন্ডারবাজি’ নিয়ে হানাহানি কিংবা দুর্নীতির অনেকটাই অবসান ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা। এখন ঘরে বসেই এখন টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া যায়। এর ফলে সরকারও পাচ্ছে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)  এবং সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) এর সূত্র বলছে, উন্নয়ন কাজে গতি, দক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের পাশাপাশি ই-টেন্ডার ডিজিটাল সেবা আরো শক্তিশালী করার জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ পর্যন্ত ই-টেন্ডার বিষয়ে ১১ হাজার ২২০ জন কর্মকর্তা ও প্রশাসনিক কাজে কর্মরত এমন ২ হাজার ৯০১ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। টেন্ডারের সার্বিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ৬ হাজার ৬০৩ জন, ব্যাংক ব্যবহারের বিষয়ে ৩২২ জন ও পলিসি লেভেল বিষয়ে ৫৩ জনকে। ই-টেন্ডারের বিষয়ে মোট ২১ হাজার ৯৯ জনকে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

সিপিটিইউর মহাপরিচালক সোহেলুর রহমান চৌধুরী বলেন, একসময় খবরের পাতায় বড় বড় নিউজ দেখেছি টেন্ডার জমা দেওয়া কেন্দ্র করে মারামারি-হানাহানির। ই-টেন্ডারের ফলে এখন আর এটা নেই। টেন্ডার সংক্রান্ত  কোনো ঝামেলা হচ্ছে না। ই-টেন্ডারে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। সিপিটিইউ জানায়, দেশের ৪৯টি ব্যাংকের ৬ হাজার ১৩৮টি শাখা এ সিস্টেমের মাধ্যমে সারা দেশে রেজিস্ট্রেশন এবং দরপত্রসংক্রান্ত ফি ও সিকিউরিটিজগুলো (টেন্ডার সিকিউরিটি ও পারফরম্যান্স সিকিউরিটি) অনলাইনে গ্রহণ, আপলোড করছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা তাদের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অনলাইনে পেমেন্ট বা অর্থ পরিশোধ করতে পারছেন। টেন্ডার, রেজিস্ট্রেশন, নবায়ন ও  টেন্ডার ডকুমেন্ট বিক্রি ফি সিপিটিইউয়ের (সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট) তহবিলে জমা হয়। এছাড়া দরপত্র জামানত ও কার্য সম্পাদন জামানত জমা হয় ক্রয়কারীর অ্যাকাউন্টে। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কেউ যাতে বিপাকে না পড়েন সেজন্য ২৪ ঘণ্টা হট লাইন চালু করেছে সিপিটিউ।

আইএমইডি বিভাগের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ই-টেন্ডারের মাধ্যমে জনগণ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল পাচ্ছে। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এসেছে ই-টেন্ডারে। নেই পেশিশক্তির ব্যবহার। আগে আমরা দেখতাম এক পার্টি টেন্ডার জমে দেবে অন্য পার্টি জমা দিতে দিতো না। এখন এই সমস্যার নিরসন হয়েছে। সামনে সিপিটিউ আরো ঢেলে সাজানো হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads