ইসলাম একটি শান্তিময় ও সুশৃঙ্খল জীবন বিধান। নবী মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের পূর্বেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই দিনকে বিশ্ববাসীর জন্য পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। একজন মানুষের জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলাম সুন্দর সুন্দর বিধান প্রদান করেছে। নবজাতক শিশু জন্মগ্রহণ করার পর সন্তানের পিতা-মাতা বা তার অভিভাবকের ওপর আকিকার বিধান ইসলামের সৌন্দর্যময় বিধানসমূহের মধ্য হতে অন্যতম একটি বিধান। তেমনিভাবে এজন মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তাকে কোন পদ্ধতি কবরস্থ করা হবে সেই বিষয়েও দিকনির্দেশনা ইসলামের সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ।
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। পরিপূর্ণ জীবন বিধান। এতে কোনো খুঁত নেই, নেই কোনো অপূর্ণতা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য দীনকে পূর্ণ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য একমাত্র দীনরূপে মনোনীত করলাম।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৩)। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক আরো ইরশাদ করেছেন, ‘এবং আমি আপনার প্রতি এমন কিতাব অবতীর্ণ করেছি যার মধ্যে প্রতিটি বস্তুর স্পষ্ট বর্ণনা বিদ্যমান।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৮৯)। এই আয়াত থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট বোঝা যায়, মানব জীবনের প্রয়োজনীয় সকল দিকনির্দেশনা পবিত্র কোরআনে বিদ্যমান রয়েছে। মুজতাহিদ ও ইমামগণ কোরআন-সুন্নাহ গবেষণা করে মানবজাতির জীবনযাপন পদ্ধতির পরিপূর্ণ সমাধান তুলে ধরেছেন আমাদের সামনে। এই জীবন ব্যবস্থায় কোনো অপূর্ণতার কথা চিন্তা করা যায় না। মানুষের ঈমান-আকিদা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক জীবনের মূলনীতিসমূহ বা নীতিমালা অথবা বিধানগুলো ইসলামে এমনভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যা প্রকৃতপক্ষেই পরিপূর্ণ এবং অতুলনীয়। সুন্দর ও কল্যাণকর। এতে নতুনভাবে কোনো কিছুর সংযোজন বা বিয়োজন করার কোনো অবকাশ নেই।
হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহপাকের পাঠানো আখেরি নবী। আর পবিত্র কোরআন তার প্রতি নাজিলকৃত আখেরি কিতাব। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনের পর পূর্ববর্তী সব শরিয়ত ও কিতাব রহিত হয়ে গেছে। এরপর আর কোনো নবী আসবেন না এবং কোনো কিতাবও নাজিল হবে না। যারা এ আকিদা পোষণ করবেন তারা মুসলিম। আর যারা এ আকিদা পোষণ করবে না তারা অমুসলিম বা কাফির। ইসলাম আল্লাহ প্রদত্ত এমন একটি জীবন ব্যবস্থা, যা ভারসাম্যপূর্ণ, স্বভাবসম্মত এবং মানবিক সামর্থ্যের উপযোগী। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন, ‘আল্লাহ কারো ওপর এমন কোনো দায়িত্ব অর্পণ করেন না যা তার সাধ্যাতীত।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৮৬)।
শান্তিপূর্ণ, নির্ভেজাল এবং ভারসাম্যপূর্ণ জীবনাদর্শের বাস্তব রূপ হলো ইসলাম। মানব জীবনের কোনো একটি বিষয় অথবা কোনো একটি দিকের ওপর অধিক গুরত্ব আরোপ করা এবং স্বাভাবিক ভারসাম্য বিনষ্ট করাকে ইসলাম কোনোক্রমেই সমর্থন করে না। ইবাদত-বন্দেগি, ব্যবসা-বাণিজ্য, লেদনেন, আচার-আচরণ ও আমল-আখলাক তথা জীবনের এমন কোনো স্তরে নেই যার ব্যাপারে ইসলাম মানসম্মত, যথার্থ ও কল্যাণকর বিধান প্রদান করেনি। প্রচলিত অর্থে ইসলাম কেবল একটি ধর্মের নাম নয়, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন”‘আল্লাহর নিকট একমাত্র জীবন বিধান হচ্ছে আল ইসলাম।’ (সুরা আল ইময়ান : ১৯)
মানুষের ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক তথা মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ও বিভাগে আল ইসলামের সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই বিধানকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তিনি একদিকে যেমন মসজিদের ইমাম ছিলেন, অন্যদিকে তেমনি ছিলেন রাষ্ট্রপতি, সেনাপতি, বিচারপতি। আল কোরআন ও আল হাদিসে ইসলামী জীবন বিধান সংরক্ষিত রয়েছে। যারা ইসলামকে জীবন বিধান হিসেবে গ্রহণ করে সেই বিধান অনুযায়ী জীবনযাপন করে তাদেরকে বলা হয় ‘মুসলিম’। সুতরাং সার্বিক বিবেচনায় ইসলামই একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণ জীবন বিধান বা জীবন ব্যবস্থা।
লেখিকা :সিনথিয়া
শিক্ষার্থী, ভূরারঘাট এমইউ বহুমুখী ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসা, রংপুর





