ইন-আউটের সাতকাহন

ছবি : বাংলাদেশের খবর

রাজনীতি

ইন-আউটের সাতকাহন

  • অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
  • প্রকাশিত ২৬ নভেম্বর, ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে কিছুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সব মহল ছিল বেশ সরগরম। গতকাল রোববার আওয়ামী লীগ ২৩০ আসনে প্রার্থী ঘোষণার পর ওই আলোচনা ঘুরে গিয়ে ঠেকেছে কে মনোনয়ন পেলেন; আর কে পেলেন না ইস্যুতে। সঙ্গে যোগ হয়েছে মনোনীতরা ভোটের পরীক্ষায় পাস করতে পারবেন কি না? যারা পাননি তারা কেন মনোননয়ন পাননি- এ নিয়ে গতকাল দিনভর ‘ইন-আউটের’ গল্পসহ দেশজুড়ে নানা তর্কবিতর্কে ছিল সরগরম।

রোববার সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের চিঠি দেওয়া শুরু করে আওয়ামী লীগ। এবার বেশ কিছু আসনে নতুন মুখ বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বেশ কিছু আসনে হেভিওয়েট নেতারাও বাদ পড়েছেন। তবে আওয়ামী লীগ বলছে, এটি চূড়ান্ত তালিকা নয়। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আজ সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে জোটের শরিকদের সঙ্গে সমন্বয় করে। আর আজ (গতকাল) যে মনোনয়নপত্র দেওয়া হয়েছে, সেখানে প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের সইও নিয়ে রাখা হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী দেখা গেছে, ২৬ আসন থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য বাদ পড়েছেন। এ ছাড়া আট আসনে বর্তমান এমপির পাশাপাশি আরো আট প্রার্থীকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। নেত্রকোনা-২ আসন থেকে বাদ পড়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়। এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন আশরাফ আলী খান খসরু। মাগুরা-১ থেকে বাদ পড়েছেন এটিএম আবদুল ওয়াহাব। মনোনয়ন পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর এপিএস সাইফুজ্জামান শিখর। শরীয়তপুর-১ আসনে বাদ পড়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক। এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কার্যনির্বাহী সদস্য ইকবাল হোসেন অপু। শরীয়তপুর-২ মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম। বাদ পড়েছেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী।  লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে বেসামরিক বিমান পর্যটনমন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামালের পাশাপাশি নাম আছে গোলাম ফারুকের। চাঁদপুর-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন আলমগীরের পাশাপাশি নাম আছে গোলাম রহমানের।

মনোনয়নবঞ্চিতদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত জাহাঙ্গীর কবির নানক। ঢাকা-১৩র এই আসনে এবার নতুন মুখ সাদেক খান। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ নেতা। একই সঙ্গে মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। এই আসনে সাদেক খান ও নানকের মধ্যে দ্বৈরথের খবর আসছিল গত কয়েক মাস ধরেই। গত ১০ নভেম্বর দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ হয়। আর এ সময় গাড়িচাপায় মারা যায় দুই কিশোর, যারা সাদেক খানের সমর্থক ছিল।

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ মনোনয়ন পেয়েছেন মাদারীপুর-৩ আসনে। এতে বাদ পড়েছেন আগের সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন নাছিম। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের সঙ্গে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের, সংঘাতও হয়েছে অনেকবার। মাদারীপুর সদর আসনে বাহাউদ্দিন নাছিম মনোনয়ন পাচ্ছিলেন না শাজাহান খানের কারণে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ পড়েন সৈয়দ আবুল হোসেন। এই আসনে সংসদ সদস্য হন বাহাউদ্দিন নাছিম। বাহাউদ্দিন নাছিম যাতে মনোনয়ন না পান, সে বিষয়ে শাজাহান খান ও সৈয়দ আবুল হোসেন দুজনই তৎপর ছিলেন বলে দলীয় সূত্র জানায়।

জামালপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরাও মনোনয়ন পাননি। গাজীপুর-৩ আসনেও প্রার্থী বদল হয়েছে। এই আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ। এই আসনে দীর্ঘদিন ধরে এমপি ছিলেন সাবেক মন্ত্রী রহমত আলী। বার্ধক্যজনিত কারণে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ পড়েছেন টাঙ্গাইলের-৩ আসনের আলোচিত সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা। তার বদলে ওই আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন রানার বাবা আতাউর রহমান খান। বাদ পড়াদের তালিকায় আছে কক্সবাজারের সমালোচিত এমপি আবদুর রহমান বদিও। তিনি বাদ পড়লেও ওই আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন তার স্ত্রী শাহীনা আক্তার চৌধুরী।

সিলেট-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য চিঠি পেয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোট ভাই জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে মোমেন। অর্থমন্ত্রী নির্বাচনে অনাগ্রহী হওয়ায় তার ভাই এ কে আবদুল মোমেনকে বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের একাধিক নেতা চেষ্টা করে আসছিলেন ওই আসনে প্রার্থী হওয়ার। এ আসনটি বরাবর আলোচিত এই কারণে যে, এখান থেকে জয় পাওয়া দল বরাবর সরকার গঠন করেছে। বিএনপি এবার এই আসন থেকে সাবেক রাষ্ট্রদূত ইনাম আহমেদ চৌধুরীকে প্রার্থী করেছে বলে গণমাধ্যমের খবরে এসেছে।

মুন্সীগঞ্জ-২ (টঙ্গিবাড়ী ও লৌহজং) আসনে প্রত্যাশিত মনোনয়ন পাননি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। বর্তমান সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে প্রার্থী বদল করেছে আওয়ামী লীগ। বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিনকে বাদ দিয়ে চমক হিসেবে আনা হয়েছে সাবেক আইজিপি, রাষ্ট্রদূত ও সচিব নূর মোহাম্মদকে।

পটুয়াখালী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার বোনের ছেলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এসএম শাহজাদা সাজু। এ বিষয়ে ওই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, সিইসির ভাগিনা হওয়ায় মনোনয়ন পেয়েছেন। এ ছাড়া আমাকে মনোনয়ন না দেওয়ার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।

এ ছাড়া প্রথমবারের মতো নৌকা প্রতীকে ভোট করার সুযোগ যারা, তারা হলেন- নড়াইল-২ আসনে মাশরাফি বিন মুর্তজা, খুলনা-২ আসনে শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, পটুয়াখালী-৪ আসনে মুহিবুর রহমান, টাঙ্গাঈল-২ আসনে তানভীর হাসান, টাঙ্গাঈল-৩ আসনে আতাউর রহমান খান, ফরিদপুর-১ আসনে মনজুর ইসলাম, শরীয়তপুর-১ আসনে ইকবাল হোসেন অপু, শরীয়তপুর-২ আসনে এনামুল হক শামীম, যশোর-২ আসনে মেজর জেনারেল (অব.) নাসির উদ্দিন, সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে আবদুল মমিন মণ্ডল, সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে ডা. আবদুল আজিজ, নাটোর-১ আসনে শহীদুল ইসলাম, পঞ্চগড়-১ আসনে মাজহারুল হক প্রধান, নওগাঁ-৫ আসনে প্রয়াত আবদুল জলিলের ছেলে নিজামউদ্দিন জলিল, মাগুরা-১ আসনে সাইফুজ্জমান শিখর, পিরোজপুর-১ আসনে শ ম রেজাউল করিম, চট্টগ্রাম-৯ আসনে মহিবুুল হাসান নওফেল, যশোর-৫ আসনে স্বপন ভট্টাচার্য (গতবার স্বতন্ত্র ছিলেন), পটুয়াখালী-১ আসনে অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া, বাগেরহাট-২ আসনে শেখ সারহান নাসের তন্ময়, কুমিল্লা-৩ আসনে ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন (গতবার স্বতন্ত্র ছিলেন)।

নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুসারে, আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২৮ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৯ ডিসেম্বর। আর প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১০ ডিসেম্বর।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads